১১ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

অর্থনীতি

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৪.৮ শতাংশ হতে পারে জানাল বিশ্বব্যাংক

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৪.৮ শতাংশ হতে পারে জানাল বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তবে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সময়োপযোগী সংস্কার জরুরি বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

সংস্থাটির সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। গত অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন ছিল ৪ শতাংশ। এছাড়া ২০২৬-২৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। গত মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, প্রবাসী আয়ের বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে উন্নতি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বিশ্বব্যাংক মনে করে, বাংলাদেশ মধ্যমেয়াদে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান (বিশেষ করে তরুণ ও নারীদের জন্য) নিশ্চিত করতে হলে কার্যকর অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়ন অপরিহার্য। সংস্থাটি সতর্ক করে জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে চাপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থার জটিলতা, রাজস্ব ঘাটতি এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতা এখনো উদ্বেগের বিষয়।

প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশের দারিদ্র্যের হার কিছুটা বেড়েছে, পাশাপাশি শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ৬৯ শতাংশ থেকে কমে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। নতুন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ২৪ লাখ নারী এখনো শ্রমবাজারের বাইরে রয়েছেন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যাঁ পেম বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীলতা দেখিয়েছে, তবে এই গতি ধরে রাখতে সংস্কার অপরিহার্য। রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, জ্বালানি খাতে ভর্তুকি হ্রাস, নগরায়ন ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন এই ক্ষেত্রগুলোতে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে। ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছর ছিল বিপর্যয়কর’

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সামগ্রিক তথ্য অনুযায়ী পুরো অর্থবছরের (২০২৪–২৫) প্রবৃদ্ধির হার সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় কম হবে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে।

তিনি বলেন, “বার্ষিক প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক অনুমান ছিল ৩.৯৭ শতাংশ, কিন্তু সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সেটিতে পৌঁছানো এখন আর সম্ভব বলে মনে হয় না।” তিনি আরও যোগ করেন, “এটি হবে কোভিড-পরবর্তী সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি, যদিও ২০২০ সালের মহামারি্র বছরের তুলনায় সামান্য ভালো।” ড. জাহিদ হোসেন অর্থবছর ২০২৪–২৫-কে অর্থনীতির জন্য “বিপর্যয়কর বছর” হিসেবে বর্ণনা করেন।

তার ভাষায়, “রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতা, আন্দোলন ও অনিশ্চয়তা সরাসরি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আঘাত হেনেছে। যেমনভাবে কোভিড স্বাস্থ্যের ঝুঁকি ও চলাচলে বাধা সৃষ্টি করেছিল, তেমনি এ বছর রাজপথের সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতা ব্যবসা, বাণিজ্য, পরিবহন ও সেবাখাতকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে।”

তিনি জানান, ধারাবাহিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরিবহন, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
“শিল্পখাতের দুর্বলতা মূলত রপ্তানিমুখী শিল্পে মন্দার কারণেই দেখা গেছে। অন্যদিকে কৃষিখাত তুলনামূলকভাবে ভালো করেছে, বিশেষ করে বোরো মৌসুমের ভালো ফলনে কৃষিতে ৩.০১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে,” বলেন তিনি।

ড. জাহিদ আরও বলেন, “সামগ্রিকভাবে, এ বছরের মন্থর জিডিপি প্রবৃদ্ধি রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিঘ্নের সম্মিলিত প্রভাবের প্রতিফলন।”