ভরা মৌসুমেও পর্যাপ্ত ইলিশের দেখা মিলছে না বরিশালের ইলিশ মোকামে। যে পরিমাণ মাছ আসছে তা অতিরিক্ত দামের কারণে কিনতে পারছেন না সাধারণ ক্রেতারা। আগে এমন সময়ে হাজার মণ ইলিশ এলেও বর্তমানে ১৫০-২০০ মণ ইলিশ আসছে মোকামগুলোতে। সংশ্লিষ্টরারা বলছেন, ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় দাম কিছুটা বেশি, সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকালে বরিশালের পাইকারি ইলিশের মোকাম পোর্টরোড মৎস অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি ওজনের ইলিশ ২৩৫০ টাকা, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২৮০০ টাকা ও ৭০০-৯০০ গ্রাম ইলিশ ২১০০ টাকা, ৫০০ গ্ৰাম আকারের ইলিশ ১২০০-১৫০০ টাকা ও ৩ পিসে এক কেজি আকারের ইলিশ ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের পাশাপাশি অন্য মাছেরও চড়া দাম দেখা গেছে।
ইলিশের আড়তগুলো ঘুরে দেখা গেছে, জেলার বড় এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটির ১৬০টির বেশি আড়তে তেমন মাছ নেই বললেই চলে। আগে যেখানে প্রতিদিন ভোরে মাছভর্তি ট্রলার ভিড়ত, সেখানে এখন ঘাটে বসে থাকতে দেখা যায় আড়তদার, শ্রমিক, বরফ কাটার শ্রমিকসহ শতশত মানুষকে।
ইলিশ আড়তদার মেসার্স দুলাল ফিশ’র ম্যানেজার মো. রবিন বলেন, গত এক মাস ধরে গড়ে দেড় থেকে আড়াইশ মণ ইলিশ নিয়ে ট্রলারগুলো পোর্টরোডের মোকামে আসছে। কিন্তু এমন সময় হাজার হাজার মণ ইলিশ আসার কথা। কয়েক বছর আগেও ভরা মৌসুমে পোর্ট রোডের মোকামের আড়তগুলোয় দিনশেষে ২ হাজার মণ ইলিশ বেচাকেনা হতো।
তিনি আরও বলেন, মৌসুম অনুযায়ী বাজারে ইলিশ কম আসছে। কিন্তু ইলিশের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। ইলিশ কম থাকায় ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। ক্রেতাদের চাহিদার কারণেই ইলিশের দাম কিছুটা বেড়েছে।
পোর্ট রোড বাজারে ইলিশ কিনতে আসা সাইফুল বলেন, সকালে বাজারে যাওয়ার সময় ছেলেমেয়ে বায়না ধরেছে ইলিশ মাছ নিয়ে আসার। তবে বাজার ঘুরে সাধ্যের মধ্যে একটি ইলিশ মাছ মিলাতে পারিনি। পরে নিরূপায় হয়ে ৯০০ গ্ৰাম ওজনের একটি ইলিশ ১৮০০ টাকায় কিনেছি।
শুধু সাইফুল ইসলামই নন এমন চিত্র এখন প্রতিটি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারে। ইলিশের উচ্চ দামে হতাশা প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। অবস্থা এমন যে ইলিশ নিজেদের নদ-নদীর মাছ হলেও অতিরিক্ত দামের কারণে এর স্বাদ ভুলতে বসেছে এক শ্রেণির মানুষ।
আরেক ক্রেতা সোহাগ বলেন, এলাকার বাজার থেকে মাছ না কিনে পোর্টরোড পাইকারি বাজারে এসেছিলাম একটু কম দামে কেনার আশায়। কিন্তু এখানেও দেখি খুচরা বাজারের মতো চড়া দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। তারপরও ছোট ছোট ৫০০ গ্রাম ওজনের ৪টা ইলিশ কিনেছি ২৮০০ টাকায়। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে মানুষ কিছু দিনের মধ্যে ইলিশের স্বাদ ভুলে যাবে।
রাব্বি নামে এক ক্রেতা বলেন, ইলিশ কিনতে এসে দরদামে পোষাতে না পেরে পাঙ্গাশ মাছ কিনতে হয়েছে। ৫০০ গ্ৰাম সাইজের ইলিশ কেজি ১৫০০ টাকা হয়েছে। যা আগে ছিল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। পাঙ্গাশ মাছেরও দাম বেড়েছে। ২৮০ টাকা করে কেজি পাঙ্গাশ মাছ কিনেছি। যা আগে ছিল ১৫০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে।
আরেক ক্রেতা মুরাদ হোসেন বলেন, মাছের সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মূল্যবৃদ্ধি করেছেন। না হলে এ ইলিশ তো আর বিদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে না। নিজেদের নদ-নদী বা সাগরের মাছ। এতো মূল্য বৃদ্ধির কোন কারণ দেখছি না।
আড়তদার সজীব সিকদার জানান, নদীতে মাছই নেই। জেলেরা আবহাওয়ার কারণে সাগরে যেতে পারছেন না। যে অল্প কিছু মাছ উঠছে, তা দিয়ে বাজারের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। ফলে দামের ওপরও চাপ পড়ছে।
বরিশাল মৎস্য মালিক সমিতির সদস্য সচিব মো. কামাল সিকদার বলেন, মেঘনার বিভিন্ন পয়েন্টে চর পড়ে গেছে, ফলে ইলিশ চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যদি এখনই নদী রক্ষা না করা হয়, ভবিষ্যতে বরিশালে আর মিঠাপানির ইলিশ পাওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, কুয়াকাটার মহিপুর থেকেও এখন আর মাছ আসে না। তারা সরাসরি ঢাকাসহ অন্য স্থানে ইলিশ বিক্রি করে। পদ্ম সেতু ও পায়রা সেতু হওয়ার কারণে তাদের বরিশাল পোর্ট এখন প্রয়োজন হয় না। আর বরিশালের আশপাশের নদীতেও মাছ নেই। ব্যবসা একেবারেই ভেঙে পড়েছে।
বরিশালের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, চলতি বছর বৈরি আবহাওয়ার কারণে নদী ও সমুদ্র থেকে ইলিশ আহরণ কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে। ফলে এর প্রভাব পড়েছে বাজারের ওপর। ইলিশের সরবরাহ আবার স্বাভাবিক হলে দাম কিছুটা কমে আসবে। সংবাদসুত্র ওয়েব পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কম