বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ভারতের আসাম রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ঘোষণাকে ঘিরে রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি এবং ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত ৫ আগষ্ট বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) জানান, একটি নতুন ওয়েবসাইট চালু করা হচ্ছে, যেখানে সংবেদনশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী আদিবাসী মানুষ অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।’
তিনি জানান, আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে বহুস্তর বিশিষ্ট যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চালানো হবে। এতে নিরাপত্তা মূল্যায়ন, আইন মানা, লাইসেন্স হস্তান্তর না করার শর্ত এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। জেলা প্রশাসন ও নিরাপত্তা সংস্থার মূল্যায়নের ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হবে।
গত মে মাসে আসাম মন্ত্রিসভা সীমান্তবর্তী ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ‘মূল বা আদিম ভারতীয় নাগরিকদের’ অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারের দাবি, এসব এলাকাগুলোতে পুলিশের উপস্থিতি সীমিত এবং স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
মুখ্যমন্ত্রী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে বারপেটা, ধিং, ধুবরি, জানিয়া, মরিগাঁও, নগাঁও, রুপাহি এবং দক্ষিণ সালমারা-মানকাচর জেলার নাম উল্লেখ করেন—যেখানে বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত মুসলিমদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, আসামের ৩.১ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিমরা প্রায় ৩৫ শতাংশ এবং হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে বিরোধী দল কংগ্রেস। রাজ্য সভাপতি গৌরব গগৈ বলেন, “বিজেপি সরকার এমন একটি পরিবেশ তৈরি করছে যেখানে মানুষের মৌলিক চাহিদার চেয়ে অস্ত্রের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যে সংঘর্ষ, অপরাধ এবং চাঁদাবাজি বাড়তে পারে। তাঁর অভিযোগ, এই অস্ত্র নীতি বিজেপি ও আরএসএস সমর্থকদের হাতে লাইসেন্স তুলে দেওয়ার কৌশল হতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তের এ সিদ্ধান্ত বিজেপি সরকারের বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ, যা অসমীয়াভাষী সংখ্যাগরিষ্ঠদের সুরক্ষার নামে বাংলাভাষী মুসলিমদের প্রান্তিক করার একটি কৌশল।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে আসামই প্রথম নাগরিকত্ব যাচাইয়ের বিতর্কিত প্রক্রিয়া (NRC) চালু করে। এতে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাদ পড়েন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলিম।
উত্তেজনার পেছনে পটভূমি আসামে দীর্ঘদিন ধরেই ‘অবৈধ বিদেশি’ চিহ্নিত করে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে সরকার, যার টার্গেটে মূলত বাংলাভাষী মুসলিম সম্প্রদায়।
মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, “বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সীমান্তবর্তী আদিবাসী জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।”
বন্দুক নীতির ভবিষ্যৎ ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোর তুলনায় আসামে বন্দুক আইনের এই শিথিলতা নজিরবিহীন। অনেকেই মনে করছেন, এ সিদ্ধান্ত সামাজিক অস্থিরতা এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দিতে পারে।