কক্সবাজার কিংবা দেশের যে কোনো দর্শনীয় স্থানে পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়া মানেই এখন শুধু আনন্দের ব্যাপার নয়, বরং ভয়েরও। কারণ সেখানে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যই নয়, ওঁত পেতে থাকে এক শ্রেণির অমানবিক ভিউ ব্যবসায়ী। এরা মুখে হাসি, হাতে ক্যামেরা বা মোবাইল নিয়ে ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ায় সৈকতের পাড়ে, ঝর্ণার ধারে কিংবা নদীর তীরে। আপনি বা আপনার পরিবার একটু আনন্দ করতে চাইলেই তারা সেটা পুঁজি করে তৈরি করে নোংরা কন্টেন্ট—আপনার অজান্তেই।
ধরা যাক, আপনি কক্সবাজারে গিয়েছেন পরিবার নিয়ে। স্ত্রী ও সন্তানরা আনন্দে সাগরের ঢেউয়ে নেমেছে, পানিতে ভিজছে, হাসছে, খেলছে। এমন মুহূর্তে হঠাৎ ঢেউয়ের ধাক্কায় উরু বা বুকের কাছ থেকে একটু কাপড় সরে গেল—এই সামান্য ঘটনাকে তারা বানিয়ে ফেলে ‘ভিউ জেনারেটিং কনটেন্ট’। জুম করে ভিডিও করা হয়, সম্পাদনা করা হয় এমনভাবে যাতে আরও স্পষ্ট হয় আপনার পরিবারের কারও শরীরের গোপন অংশ। তারপর এসব ছড়িয়ে দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে—নামে-বেনামে চালু করা কিছু বিকৃত পেজে।
এই ধরনের নোংরা কনটেন্ট এখন আর বিরল কিছু নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার হোমপেজ খুললেই চোখে পড়ে, কে যেন দূর থেকে জুম করে ভিডিও করেছে—কখনো পুকুরে গোসলরত তরুণী, কখনো পাহাড়ি ঝর্ণায় বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া কেউ। তাতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা যেমন ভেঙে পড়ছে, তেমনি নষ্ট হচ্ছে সামাজিক শালীনতাও।
একদম বিনা অনুমতিতে এভাবে ব্যক্তিগত মুহূর্ত ভিডিও করে, তা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে যারা নিজেদের ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’ বলে দাবি করছে—তাদের কোনোভাবেই আর অবহেলা করার সুযোগ নেই। এটা স্রেফ অনৈতিক নয়, এটা সরাসরি অপরাধ।
এই ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে আমাদের আগে নিজেদেরই সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, এখনকার দিনে একটি মোবাইলই হয়ে উঠতে পারে আপনার গোপন জীবনের ভয়ংকর শত্রু। পরিবারের সঙ্গে কোথাও ঘুরতে গেলে বিশেষ করে পানিতে নামার আগে খেয়াল রাখতে হবে পোশাক এমন হওয়া উচিত, যা ভিজলেও দেহ ঢেকে রাখে।
কোনোভাবেই শরীরের সংবেদনশীল অংশ দৃশ্যমান হওয়ার সুযোগ থাকা উচিত নয়। কারণ আপনি সাবধান না হলে, একদিন হয়তো মোবাইলের স্ক্রিনে দেখবেন, সবার সামনে ভেসে উঠেছে আপনার স্ত্রী, বোন কিংবা সন্তানের ব্যক্তিগত মুহূর্ত—আপনার অজান্তেই।
এই ভিউ ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ করতে সামাজিকভাবে সচেতনতা যেমন জরুরি, তেমনি আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন হলে পর্যটন স্পটে আরও কড়া নজরদারি, সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ ও অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হোক। ব্যক্তি স্বাধীনতা ও সম্মান রক্ষায় রাষ্ট্র এবং সমাজের এখনই সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে একদিন সবাইকেই এই নোংরা ফাঁদের শিকার হতে হবে। এখনই সময়, নিজের সম্মান রক্ষায় নিজেকে সুরক্ষিত রাখার। ঢাকার দৈনিক কালের কন্ঠ-র সৌজন্যে