২৬শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

যুক্তরাষ্ট্র

কার্বন ডাই অক্সাইডকে ‘দূষণকারী’ গ্যাসের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে আমেরিকা! বিজ্ঞানীরা দ্বিধাবিভক্ত

কার্বন ডাই অক্সাইডকে ‘দূষণকারী’ গ্যাসের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে আমেরিকা! বিজ্ঞানীরা দ্বিধাবিভক্ত

ট্রাম্প সরকারের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি বা ইপিএ) জানিয়েছে, এতদিন কার্বন ডাই অক্সাইডকে যতটা ‘দূষণকারী’ মনে করা হত আদৌ তা নয়। কার্বন ডাই অক্সাইডকে ‘দূষণকারী’ গ্যাসের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে আমেরিকা! বিজ্ঞানীরা দ্বিধাবিভক্ত ট্রাম্প সরকারের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি বা ইপিএ) জানিয়েছে, এতদিন কার্বন ডাই অক্সাইডকে যতটা ‘দূষণকারী’ মনে করা হত আদৌ তা নয়।

২০০৭ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে, ‘দূষণহীন বায়ু আইন’-এর অধীনে ‘গ্রিনহাউস গ্যাস’ হিসেবে চিহ্নিত কার্বন ডাই অক্সাইড। ফলে ‘বাতাসের বিষ’ হিসাবে চিহ্নিত ওই গ্যাসটি। কিন্তু মাস কয়েক আগে ইপিএ ঘোষণা করেছে যে তারা কয়লা এবং গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের বর্তমান সীমারেখা বদলানোর চেষ্টা করবে। কারণ, সেই সীমারেখার অন্যতম অংশীদার কার্বন ডাই অক্সাইড। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে তা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সংক্রান্ত সংস্থার ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করবে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশপ্রেমীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ শিল্পগোষ্ঠীগুলির চাপেই এমন পদক্ষেপ করেছে ট্রাম্প সরকার।

অন্য দিকে, বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবিদদের একাংশ মনে করছেন ইপিএর সিদ্ধান্ত যথার্থ। তাঁদের মতে, স্বাভাবিক ঘনত্বে কার্বন ডাই অক্সাইড বিষাক্ত নয়, বরং এটি জীবনের অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজনীয়। কারণ মানুষ-সহ প্রাণীকুলের শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় এটি অপরিহার্য। উদ্ভিদকুলের সালোকসংশ্লেষের জন্যেও কার্বন ডাই অক্সাইড দরকার। তবে, উচ্চ ঘনত্বে এটি বিষাক্ত হতে পারে কারণ এটি বাতাসের অক্সিজেনকে প্রতিস্থাপন করে শ্বাসরোধ করতে পারে এবং হাইপারক্যাপনিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যা নিঃসন্দেহে প্রাণঘাতী। ইপিএ প্রশাসক লি জেলডিন প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছিলেন যে, পরিবেশ রক্ষার যুক্তি দিয়ে জো বাইডেনের জমানায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির জন্য কার্বন দূষণের যে মান স্থির করা হয়েছিল, তা মার্কিন অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এই পরিস্থিতিতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের বর্তমান নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বহাল রাখার বিষয়টি নিয়ে চলতি মাস থেকেই নতুন করে গণশুনানি শুরু হতে চলেছে। প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল ইপিএ-কে।

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই আইনি তরজা জমে উঠেছে আমেরিকায়। পরিবেশ পরিবর্তনের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান আর্থজাস্টিসের জলবায়ু ও শক্তি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট জিল টাউবার বলেন, ‘‘সরকারি বিজ্ঞানীদের মতের সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা মেলে না। আমেরিকায় গ্রিনহাউস গ্যাস দূষণের জন্য দায়ী শিল্পগুলির জন্য আইনি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’’ তিনি জানান, প্রাক শিল্প যুগে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের যে ঘনত্ব ছিল, বর্তমানে তা ৫০ শতাংশের বেশি, যা খুবই উদ্বেগের। তাপবিদ্যুৎ-সহ বিভিন্ন শিল্প এবং যানবাহনকে এর জন্য দায়ী করেছেন তিনি। পরিবেশবিদদের একাংশের অভিযোগ, ট্রাম্প সরকার ইপিএ-র মাধ্যমে নতুন প্রস্তাব পেশ করে ‘ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’, জ্বালানি বিভাগ, ‘ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস’-সহ ফেডারেল সংস্থাগুলির জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করে দিতে চাইছে।

কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথিবী ও বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড্যানিয়েল ভিশনির মতে, বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড দু’টি উৎস থেকে আসে। প্রথমত, আগ্নেয়গিরি, পচনশীল উদ্ভিদ উপাদান এবং দাবানলের মতো প্রাকৃতিক উৎস। দ্বিতীয়ত, মানুষের তৈরি শিল্প এবং যানবাহন। মনুষ্যসৃষ্ট কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ প্রাকৃতিক উৎস থেকে আসা কার্বন ডাই অক্সাইডের প্রায় ১০ গুণ। যা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। তবে বিশ্বে প্রাণের স্পন্দনের জন্য বায়ুমণ্ডলে নির্দিষ্ট পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তিনি। প্রাকৃতিক উৎস থেকে উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইডকে ‘দূষণকারী গ্যাসে’র তকমা যুক্তিগ্রাহ্য কি না, তা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তার সারবত্তাও মেনে নিয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ১৯৭০ সালে মার্কিন কংগ্রেস পাশ হওয়া ‘দূষণহীন বায়ু আইন’ এবং ১৯৯০-তে পাশ হওয়া সংশোধনীতেও কার্বন ডাই অক্সাইডকে ‘দূষণকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি! ট্রাম্প সরকারের শক্তি বিভাগ গত মাসে জলবায়ু পরিবর্তন পর্যালোচনা সংক্রান্ত একটি ১৪১ পাতার পর্যালোচনা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। পাঁচ জন বিশিষ্ট পরিবেশবিজ্ঞানীর লেখা ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গ্যাস নির্গমন সংক্রান্ত বর্তমান আইন বাতিল করার উদ্দেশ্যে ইপিএ যে প্রচেষ্টা শুরু করেছে, তার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে।