বিজ্ঞানীরা এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেল তৈরি করেছেন, যা কয়েক বছর আগেই চিকিৎসাসংক্রান্ত রোগ নির্ণয়ের পূর্বাভাস দিতে সক্ষম। ভোক্তাদের ব্যবহৃত চ্যাটজিপিটির মতো চ্যাটবটের ভিত্তিতে থাকা একই প্রযুক্তি থেকে এ প্রযুক্তি গড়ে উঠেছে বলে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছেন বিজ্ঞানিরা।
ব্রিটেন, ডেনমার্ক, জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের গবেষকরা ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে লিখেছেন, রোগীর কেস-হিস্টরির ওপর ভিত্তি করে ডেলফি-২এম নামক এআই মডেলটি ‘বছরের পর বছর আগে থেকেই এক হাজারেরও বেশি রোগের হারের পূর্বাভাস দিতে পারে।’ এই মডেলটি প্রশিক্ষিত হয়েছে ব্রিটেনের ইউকে বায়োব্যাংকের ডেটার ওপর—যেখানে প্রায় পাঁচ লাখ অংশগ্রহণকারীর জীববৈজ্ঞানিক তথ্য সংরক্ষিত আছে।
জার্মান ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার এআই বিশেষজ্ঞ মরিটজ গেরস্টুং জানান, ভাষা শেখার মতোই চিকিৎসা নির্ণয়ের ধারাবাহিকতাও একধরনের ‘ব্যাকরণের’ মতো। ডেলফি-২এম স্বাস্থ্যতথ্যে পূর্ববর্তী রোগ নির্ণয়, তাদের মিলিত উপস্থিতি এবং ক্রমবিন্যাস থেকে প্যাটার্ন শিখে নেয়, যা ‘খুব অর্থবহ ও স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত পূর্বাভাস দিতে সক্ষম।’
তিনি চার্ট দেখিয়ে বলেন, এআই বয়স বা অন্যান্য প্রচলিত ফ্যাক্টরের তুলনায় অনেক বেশি নির্ভুলভাবে হৃদরোগের ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের চিহ্নিত করতে পারে। ডেনমার্কের সরকারি স্বাস্থ্য ডেটাবেইসে প্রায় ২০ লাখ মানুষের তথ্য ব্যবহার করে ডেলফি-২এমের কার্যকারিতা যাচাই করা হয়েছে। তবে গবেষকরা সতর্ক করেছেন—এই মডেল এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে সরাসরি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত নয়।
ব্রিটেনের ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজির ফেলো পিটার ব্যানিস্টার মন্তব্য করেছেন, এই ডেটাসেটগুলো বয়স, জাতিগত বৈচিত্র্য ও স্বাস্থ্য ফলাফলের দিক থেকে পক্ষপাতদুষ্ট। তাই উন্নত স্বাস্থ্যসেবায় এআইয়ের বাস্তব প্রয়োগে এখনো অনেক পথ বাকি।
তবে ভবিষ্যতে এই ধরনের সিস্টেম প্রতিরোধমূলক চিকিৎসায় আগেভাগেই ক্লিনিক্যাল পর্যবেক্ষণ ও হস্তক্ষেপে সহায়ক হতে পারে এবং একইসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার চাপ কমিয়ে সম্পদের কার্যকর বণ্টনেও ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষক ইওয়ান বার্নি বলেন, যেখানে বর্তমান প্রোগ্রাম যেমন কিউরিস্ক৩ শুধু হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে পারে, সেখানে ডেলফি-২এম একসঙ্গে সব ধরনের রোগের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিতে সক্ষম। কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক গুস্তাভো সুদ্রে মন্তব্য করেছেন, গবেষণাটি ‘ব্যাপক, ব্যাখ্যাযোগ্য এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৈতিকভাবে দায়িত্বশীল পূর্বাভাসমূলক মডেলিংয়ের দিকে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।’
কারণ ‘ব্যাখ্যাযোগ্য এআই’ আজকের দিনে অন্যতম বড় গবেষণা লক্ষ্য, যেহেতু অনেক বড় এআই মডেলের ভেতরের কাজকর্ম এখনো তাদের নির্মাতাদের কাছেও রহস্যময় রয়ে গেছে।