৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শেষের পাতা

এইচ–১বি ভিসা বাতিলের পথে যুক্তরাষ্ট্র, প্রযুক্তি খাতে পরিবর্তনের শঙ্কা

এইচ–১বি ভিসা বাতিলের পথে যুক্তরাষ্ট্র, প্রযুক্তি খাতে পরিবর্তনের শঙ্কা

এইচ–১বি ভিসা হলো এমন একটি কর্ম ভিসা, যা উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশি পেশাজীবীদের যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি ও পরবর্তী সময় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ তৈরি করে। সাম্প্রতিক সময়ে এই ভিসার ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই ফি মূলত কম বেতনের এইচ–১বি আবেদনকে কঠিন করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ওম্যান মার্জোরি টেলর গ্রিন শিগগিরই একটি বিল পেশ করতে যাচ্ছেন, যেখানে এইচ–১বি ভিসা প্রোগ্রাম সম্পূর্ণ বিলুপ্তির প্রস্তাব করা হবে। তাঁর দাবি, এই ভিসা কর্মসূচি ‘দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন কর্মীদের স্থানচ্যুত করছে’। বিলটি পাস হলে ভিসা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিবাসীদের দেশে ফিরে যেতে বাধ্য করা হবে। এ ছাড়া গ্রিনকার্ড ও পরবর্তী সময় নাগরিকত্ব পাওয়ার পথও বন্ধ হয়ে যাবে।

ফিউচারেন্সের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও রাঘব গুপ্তা বলেন, নতুন নীতির ফলে শুধু গভীর প্রযুক্তিগত দক্ষতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞরাই বিবেচনায় আসবেন। তিনি বলেন, ‘এইচ–১বি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান বৈশ্বিক টেক নিয়োগকে বিশেষ দক্ষতার দিকে সরিয়ে দিচ্ছে। এআই, ডেটা, ক্লাউড ও সাইবার সিকিউরিটির মতো ক্ষেত্রেই বেশি সুযোগ তৈরি হবে। সাধারণ ক্যাপাসিটিভিত্তিক ভূমিকা আর যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হবে না। দূরবর্তী ও হাইব্রিড বৈশ্বিক ভূমিকার চাহিদা বাড়বে এবং যেসব দেশ দক্ষ কর্মশক্তি প্রস্তুতিতে বিনিয়োগ করবে, তারাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে।

কোম্পানিগুলোয় অফশোর মডেল শক্তিশালী হচ্ছে : ম্যাভেরিক সিস্টেমস লিমিটেডের সিওও সুব্রামানিয়ান এন এন মনে করেন, নীতি পরিবর্তনে বৈশ্বিক টেক কোম্পানিগুলোর নিয়োগ পরিকল্পনায় তেমন বড় পরিবর্তন না–ও আসতে পারে।

সুব্রামানিয়ান জানান, ‘কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে অফশোর ইঞ্জিনিয়ারিং হাব ও অফশোর সেন্টার প্রসারিত করছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় টেক ট্যালেন্ট তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে আমাদের প্রতিষ্ঠানে এইচ–১বি নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।’

দ্রুত বাড়বে স্কিল–ফার্স্ট গ্লোবাল টিম : নিউটন স্কুলের সহপ্রতিষ্ঠাতা নিশান্ত চন্দ্রা বলেন, প্রস্তাবিত এক লাখ ডলারের এইচ–১বি ফি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত ভিসানির্ভর নিয়োগ থেকে দূরে সরিয়ে দেবে। তাঁর বিশ্লেষণ, ভারত ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় অফশোর ও হাইব্রিড টিম আরও বড় হবে। কারণ, খরচ কম এবং দক্ষ জনশক্তির জোগান বাড়ছে। এআই, ডেটা সায়েন্স ও সাইবার সিকিউরিটিতে আঞ্চলিক আপস্কিলিংয়ে বিনিয়োগ বাড়বে, যা ভারতকে শুধু ট্যালেন্ট এক্সপোর্টার নয়; বরং প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কেন্দ্রেও পরিণত করবে।

ভারতসহ এশিয়ায় টেক উদ্ভাবন বাড়ার সম্ভাবনা : বিশ্লেষকদের মতে, নীতি পরিবর্তন বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের ধরন বদলে দেবে। ফলে ভিসানির্ভর নিয়োগ কমবে, স্কিল–ফার্স্ট, ডিস্ট্রিবিউটেড টেক টিম বাড়বে এবং ভারত ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অফশোর হাবের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে।

এশীয় দেশগুলোয় অপারেশনাল খরচ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের তুলনায় ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ কম। কর্মী হ্রাস ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম হওয়ায় টেক কোম্পানিগুলো সেখানে বড় টিম গড়তে উৎসাহী হবে। ট্রাম্প প্রশাসন কি নমনীয় হচ্ছে?

অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে জানান, নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি প্রতিভা প্রয়োজন। তাঁর মতে, জটিল ও সংবেদনশীল খাতে, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা খাতে দীর্ঘদিন বেকার থাকা মার্কিন নাগরিকদের অল্প সময়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করা সম্ভব নয়, তাই দক্ষ অভিবাসীর প্রয়োজন রয়ে গেছে।