ব্যস্ত জীবনে সুস্থ থাকতে নিয়ম মানা বেশ কঠিন হয়ে যায়। অনেকে তাই নিয়মিত হাঁটেন, আবার স্মার্টওয়াচ বা অ্যাপ ব্যবহার করে প্রতিদিন ১০ হাজার কদম হাঁটার লক্ষ্যও ঠিক করে নেন। কিন্তু সত্যিই কি ১০ হাজার কদম বাধ্যতামূলক? বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে হাঁটার ভূমিকা কতটা—এ প্রশ্ন অনেকেরই। বিশ্বজুড়ে উচ্চ রক্তচাপ এখন নীরব ঘাতকে পরিণত হয়েছে। ওষুধের পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনের ছোট পরিবর্তনেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বড় সুফল পাওয়া যায়, আর এই পরিবর্তনের সবচেয়ে সহজ ধাপ হলো প্রতিদিন একটু সময় হাঁটা।
কার্ডিওলজিস্টদের মতে, আপনি ৩ হাজার বা ১০ হাজার—যত কদমই হাঁটুন না কেন, মূল বিষয় হলো হাঁটার অভ্যাস বজায় রাখা। হাঁটা হৃদযন্ত্রকে মজবুত করে, রক্তনালিকে নমনীয় রাখে, মানসিক চাপ কমায়, ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এখন দেখা যাক, প্রতিদিন হাঁটা কীভাবে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। হাঁটা রক্তচাপ কমাতে কেন উপকারী?
১. হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী করে : হাঁটা একটি উৎকৃষ্ট অ্যারোবিক ব্যায়াম, যা হার্টের পেশি শক্তিশালী করে এবং কম পরিশ্রমে বেশি রক্ত পাম্প করতে সহায়তা করে। এতে ধমনির ওপর চাপ কম পড়ে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। ডা. রায়ান ক্যাপলের মতে, হৃদযন্ত্র যত দক্ষভাবে কাজ করবে, রক্তচাপ তত কমবে।
২. রক্তনালির স্বাস্থ্যের উন্নতি : নিয়মিত হাঁটার ফলে রক্তনালিতে নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা বাড়ে, যা ধমনিকে শিথিল করে। এর ফলে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকে এবং রক্তচাপ কমে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁটা ধমনির শক্তভাব কমিয়ে দেয় এবং সেগুলো আরও নমনীয় হয়।
৩. স্ট্রেস কমায় : দ্রুত হাঁটার ফলে শরীরে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা হ্রাস পায়। কর্টিসল বেশি হলে রক্তচাপ বাড়ে, আর যাদের কর্টিসল উচ্চ, ভবিষ্যতে তাদের হাইপারটেনশনের ঝুঁকিও বেশি। তাই হাঁটা মানসিক শান্তি এনে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৪. ওজন কমায় ও নিয়ন্ত্রণে রাখে: অতিরিক্ত ওজন উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ। নিয়মিত হাঁটা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়, চর্বি কমায় এবং প্রদাহ কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। মাত্র ২–৪ কেজি ওজন কমালেই রক্তচাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।
১০ হাজার পদক্ষেপ কি বাধ্যতামূলক? অনেকের ধারণা, ১০ হাজার কদম না হাঁটলে কোনো লাভ নেই। কিন্তু গবেষণা বলছে, ৩,০০০–৫,০০০ পদক্ষেপ থেকেই রক্তচাপ কমার সুফল পাওয়া যায়। প্রতিদিন ৭,০০০ কদম হাঁটলে হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় ২৫% কমে। প্রতি ১,০০০ কদম বাড়ালে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি ১৭% পর্যন্ত কমে। তবে ১০ হাজারের পর সুফলের উন্নতি খুব বেশি বাড়ে না—মানে, এটি ভালো একটি লক্ষ্য হলেও এটি বাধ্যতামূলক নয়।
হাঁটার অভ্যাস গড়ার ৭টি সহজ উপায়
ছোট লক্ষ্য দিয়ে শুরু করুন: একবারে ৩০ মিনিট না হাঁটলেও চলে—দিনে তিনবার ১০–১৫ মিনিট হাঁটলেও কার্যকর।
সুযোগ পেলেই হাঁটুন: গাড়ি একটু দূরে রাখুন, লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করুন, খাবারের পর ১০ মিনিট হাঁটুন।
অভ্যাস তৈরি করুন: দৈনন্দিন রুটিনের সঙ্গে হাঁটা যুক্ত করুন—যেমন কাজ শেষে ২০ মিনিট হাঁটা।
হাঁটা উপভোগ্য করুন: গান বা পডকাস্ট শুনে হাঁটলে সময় দ্রুত কাটে।
অগ্রগতি নজরে রাখুন: স্মার্টওয়াচ বা মোবাইল অ্যাপ হাঁটার আগ্রহ বাড়ায়।
হাঁটার সঙ্গী খুঁজুন: কেউ সঙ্গে থাকলে নিয়ম ভাঙার সম্ভাবনা কমে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ মানে শুধু ওষুধ নয়; বরং প্রতিদিনকার জীবনে ছোট কিছু পরিবর্তনই বড় পরিবর্তন আনতে পারে। হাঁটা এমন একটি ব্যায়াম যা বয়স, সময় বা জায়গার বাধা মানে না। আপনি ৩,০০০ বা ১০,০০০—যত কদমই হাঁটুন না কেন, নিয়মিত হাঁটা হৃদযন্ত্র, রক্তনালি, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তচাপ—সবকিছুতেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সূত্র- ইটিং ওয়েল