প্রেস ডা. মনরোর মতে সীমিত মাত্রায় ক্যাফেইন গ্রহণ করলে উপকার হতে পারে। তবে, প্রতিদিন অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ মাথাব্যথার কারণ হতে পারে এবং হঠাৎ বন্ধ করলে ‘উইথড্রয়াল হেডেক’-এর ঝুঁকি থাকে।
মাথাব্যথা এমন এক সাধারণ সমস্যা, যাতে প্রায় সবাই কোনো না কোনো সময় কষ্ট পায়। এটি কখনও কয়েক মিনিট, আবার কখনও কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। ব্যথা হতে পারে তীব্র, মৃদু বা ছুরিকাঘাতের মতো। ব্যাথা কখনো কখনো কপাল, মুখমণ্ডল বা ঘাড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
বিবিসির ‘হোয়াটস আপ ডকস’- পডকাস্টের উপস্থাপক ডা. জ্যান্ড ভ্যান টুলেকেন বলেন, তিনি প্রায় মাসে একবার মাথাব্যথায় আক্রান্ত হন। তার মতে, ‘মনে হয় কেউ চোখের মণির ভেতর ড্রিল করছে।’
ন্যাশনাল মাইগ্রেন সেন্টারের বিশেষজ্ঞ ডা. ক্যাটি মনরো বলেন, মাথাব্যথা হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি গুরুতর কোনো কারণে হয় না।
তিনি পরামর্শ দেন, যদি ‘হঠাৎ তীব্র’ মাথাব্যথা হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে নিয়মিত হালকা মাথাব্যথা হলে কিছু সহজ পদ্ধতি অনুসরণে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
মাথাব্যথা আপনার দৈনন্দিন জীবনে কতটা প্রভাব ফেলে?
নিজের মাথাব্যথার ধরন বোঝা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ডা. টুলেকেন বলেন, মাথাব্যথার কারণ একাধিক হতে পারে, তাই একটি সংক্ষিপ্ত ডায়েরি রাখলে ধরন ও কারণ চিহ্নিত করা সহজ হয়।
তিনি জানান, বজ্রপাত, তীব্র আলো বা আবহাওয়ার পরিবর্তন অনেকের জন্য ট্রিগার হতে পারে।
ডা. মনরো বলেন, ‘আমার জন্য সবচেয়ে খারাপ সময় হলো শরৎকালে গাড়ি চালানোর সময়, যখন সূর্যের আলো গাছের ফাঁক দিয়ে ঝলমল করে পড়ে, এটি মাথাব্যথা আরও বাড়িয়ে দেয়।’
মাথাব্যথা শুরু হওয়ার সময় আপনি কী করছিলেন, কী খেয়েছিলেন বা পান করেছিলেন, ঘুম কেমন হয়েছিল এবং আবহাওয়ার অবস্থা নোট করার পরামর্শ দেন তিনি।
নারীদের ক্ষেত্রে মাসিক চক্রের তথ্যও উল্লেখ করতে বলেন তিনি।
তবে অতিরিক্ত বিস্তারিত লেখা নিরুৎসাহিত করে তিনি বলেন, ‘এক থেকে ১০ স্কেলে প্রভাবের মাত্রা লিখে রাখলেই যথেষ্ট।’
ক্যাফেইনের ব্যবহার : অনেকে মনে করেন ক্যাফেইন মাথাব্যথা বাড়ায়, কিন্তু ডা. মনরোর মতে সীমিত মাত্রায় এটি গ্রহণ করলে উপকার হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ক্যাফেইন ব্যথানাশকের প্রভাব বাড়াতে সহায়তা করে।’
তবে বিকেল বা রাতে ক্যাফেইন না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি, কারণ এতে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ মাথাব্যথার কারণ হতে পারে এবং হঠাৎ বন্ধ করলে ‘উইথড্রয়াল হেডেক’-এর ঝুঁকি থাকে।
কোনো বেলার খাবার বাদ না দেওয়ার পরামর্শ
ডা. মনরো বলেন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস মাথাব্যথা কমাতে সহায়তা করে।
তিনি প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও জটিল কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস অনুসরণের পরামর্শ দেন।
চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা ও খাবার না বাদ দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানান, দুধ ও গ্লুটেন বাদ দেওয়ায় তার মাথাব্যথা কমেছে এবং নিয়মিত খাবার খাওয়ার অভ্যাসে তিনি উপকার পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, নিয়মিত ব্যায়াম, ভালো ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও পর্যাপ্ত পানি পান মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে।এছাড়া তিনি পর্যাপ্ত পানি পান করতে বলেন।
কোডিনযুক্ত ওষুধ এড়িয়ে চলা : ডা. মনরো বলেন, মাথাব্যথা নিয়ন্ত্রণে বাজারে অনেক ধরনের ব্যথানাশক বা বমি প্রতিরোধক ওষুধ পাওয়া যায়। তবে কোডিনযুক্ত কোনো ওষুধ না নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘কোডিন কিছু মাথাব্যথার প্রবণতাকে আরও ঘন ঘন ও তীব্র করে তুলতে পারে।’
ডা. মনরো সতর্ক করে বলেন, সপ্তাহে দুই দিনের বেশি ব্যথানাশক না খাওয়াই ভালো, এতে রিবাউন্ড হেডেকের ঝুঁকি কমে।