১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

অর্থনীতি

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৯%, কমে আসবে মূল্যস্ফীতি – আইএমএফের পূর্বাভাস

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৯%, কমে আসবে মূল্যস্ফীতি – আইএমএফের পূর্বাভাস

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আরও খানিকটা কমিয়ে দিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এর আগে গত জুলাই মাসে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ এবং এপ্রিলে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল আইএমএফ।

গত মঙ্গলবার ১৪ অক্টোবর প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধির নতুন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আইএমএফের দেওয়া জিডিপি প্রবৃদ্ধির নতুন পূর্বাভাস বিশ্বব্যাংকের হিসাবের তুলনায় খানিকটা বেশি। তবে এডিবির তুলনায় কিছুটা কম।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ; আর এডিবির হিসাবে ৫ শতাংশ।

উল্লেখ্য, বিবিএসের সাময়িক হিসাবে, গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ হার করোনা-পরবর্তী সাম্প্রতিক কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এদিকে মূল্যস্ফীতি কমে আসার পূর্বাভাসও দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে গড় মূল্যস্ফীতির হার কমে হতে পারে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে তা আরও কমতে পারে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির এ হার ছিল গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বিশ্ব অর্থনীতি প্রসঙ্গে আইমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন দেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ হারে শুল্ক আরোপসহ নানা কারণে বিশ্ব-অর্থনীতিতে এখনও অস্থিরতা চলছে। অর্থনীতির এই অনিশ্চয়তা দীর্ঘায়িত হলে প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আইএমএফ মনে করছে, ২০২৫ সালের বিশ্ব-অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। তিন কারণে প্রবৃদ্ধি কমিয়েছে আইএমএফ

২০২৫-২৬ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস তিন কারণে খানিকটা কমিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ওয়াশিটংনে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির এশিয়া প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন এ কথা বলেন।

গত মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধির নতুন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এর আগে গত জুলাই মাসে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ এবং এপ্রিলে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল আইএমএফ।

কী কারণে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমবে বলে মনে করা হচ্ছে–এমন প্রশ্নে কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, কঠোর নীতিমালা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতার কারণে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কিছুটা কমানো হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের নীতিগত কাঠামো কিছুটা কঠোর হওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগ ও ব্যয়ের প্রবাহে শ্লথ হয়েছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের পাশাপাশি দেশীয় পর্যায়ে শুল্ক এবং বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা ব্যবসায়িক আস্থা কমিয়ে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং ঋণের সীমিত প্রবাহ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগে বাধা দিচ্ছে। এটি সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের ৫৫০ কোটি ডলারের চলমান ঋণ কর্মসূচির অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, শিগগির একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে ওই প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ ঋণ কর্মসূচির আওতায় পাঁচ কিস্তিতে ইতোমধ্যে প্রায় ৩৬০ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। আগামী ২৯ অক্টোবর দুই সপ্তাহের সফরে ঢাকা আসবে আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট মাইক্রোইকোনমিক্স ডিভিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। মিশনটি পরবর্তী অর্থাৎ ষষ্ঠ কিস্তির প্রায় ৮০ কোটি ডলারের জন্য গত জুনভিত্তিক শর্ত বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করবে। মিশন সফর শেষে এ কিস্তি নিয়ে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন দেবে আইএমএফকে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আগামী জানুয়ারি নাগাদ ওয়াশিংটনে সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদ সভায় ষষ্ঠ কিস্তি ছাড় নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অন্য শর্তের প্রায় সবগুলো পূরণ হলেও কর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। সংবাদসুত্র দেনিক সমকাল