১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থীদের প্রথম টিভি বিতর্কে তীব্র বাদানুবাদ

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের একজন হচ্ছেন সমাজতান্ত্রিক, একজনের বিরুদ্ধে রয়েছে যৌন হয়রানির অভিযোগ এবং আরেকজন নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া ব্যক্তি। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘চরম উত্তেজনাপূর্ণ’ এক বিতর্কে অংশ নিয়েছেন তাঁরা। এ সময় একে অন্যের সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছেন। এই অপ্রত্যাশিত নির্বাচনী প্রচার এখন চূড়ান্ত ধাপে বলা চলে।

আগামী ৪ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে টেলিভিশনে সরাসরি দুটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে গতকাল প্রথমটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের আগে জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জোহরান মামদানি, স্বতন্ত্র প্রার্থী নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো এবং রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়া ভোটারদের সামনে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। মেয়র নির্বাচনের আগাম ভোট গ্রহণ শুরু হবে ২৫ অক্টোবর থেকে।

বিতর্কে জোহরান প্রতিদ্বন্দ্বী কুমোর বিরুদ্ধে ওঠা যৌন কেলেঙ্কারি এবং কোভিড মহামারির সময় ‘নার্সিং হোমে বয়স্কদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার’ মতো বিতর্কিত প্রশাসনিক রেকর্ড নিয়ে কড়া আক্রমণ করেন। স্লিওয়া তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘ভালো যে আমি পেশাদার রাজনীতিবিদ নই। কারণ, এই শহরে অপরাধের সংকট তারাই সৃষ্টি করেছেন।’ পরে স্লিওয়া মন্তব্য করেন, ‘এই কক্ষে অনেক বেশি পৌরুষের দাপট (টেস্টোস্টেরন) চলছে।’

ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে জোহরান মামদানি সবাইকে চমকে দিয়ে কুমোকে হারিয়ে জয়ী হন। কয়েক সপ্তাহ ধরে জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য কুমোকে হারিয়ে তিনি দলের আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন পান।

জোহরান নিউইয়র্ক নগরে বিনা মূল্যে বাস পরিষেবা, ভাড়ানিয়ন্ত্রণ এবং নগর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে সুপারমার্কেট পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী কুমো অবশ্য জোহরানের এসব পরিকল্পনাকে আকাশকুসুম কল্পনা এবং সরকারের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন, যা অর্থনৈতিকভাবে অসম্ভব।

নিউইয়র্ক নগরের ৮৫ লাখ মানুষের শাসনভার কার হাতে যাবে, সেই আলোচনা আরও একবার জোরালো হয়ে ওঠে, যখন বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান। দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত বর্তমান মেয়র সরে দাঁড়ালেও তিনি কোনো প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানানি। তবে তিনি সরে যাওয়ার পর প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন দিকে মোড় নেয়।

৬৭ বছর বয়সী কুমো ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর ছিলেন। যৌন নির্যাতনের অভিযোগের জেরে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন।

৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানি কুইন্স বোরো থেকে নির্বাচিত অঙ্গরাজ্যের আইনসভার সদস্য। তিনি তৃণমূল পর্যায়ে অদম্য প্রচারের মাধ্যমে তরুণ নিউইয়র্কবাসীর মধ্যে দারুণ উৎসাহ–উদ্দীপনা তৈরি করেছেন। ‘ট্রাম্পের সঙ্গে লড়ব’

ট্রাম্প জোহরান মামদানিকে একজন ‘কমিউনিস্ট’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি হুমকি দিয়ে বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে তাঁর প্রশাসনের জন্য ফেডারেল তহবিল আটকে দেবেন।

তবে জোহরান বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টকে স্পষ্ট করে দিতে চাই, নিউইয়র্কের জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর জন্য আমি শুধু তাঁর সঙ্গে কথা বলতে নয়, তাঁর সঙ্গে কাজ করতেও প্রস্তুত।’

কুমো সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেছেন, মামদানি জিতলে ‘ট্রাম্প নিউইয়র্ক নগর দখল করে নেবেন এবং তখন মেয়র হবেন ট্রাম্প’। তিনি বলেন, এটা অনেকটা রাজধানীর ওয়াশিংটন ডিসির প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘটনার মতোই হবে।

ট্রাম্প গত বুধবার ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি নিউইয়র্ক ও নিউজার্সির মধ্যে সংযোগকারী বহু বছরের মেগা প্রকল্প ১ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের হাডসন গেটওয়ে টানেল ‘বাতিল’ করেছেন।

বিতর্কে তাঁর স্বপ্নের সংবাদের শিরোনাম কী হবে জানতে চাইলে মামদানি বলেন, সেটি হবে ‘ট্রাম্পকে মোকাবিলা অব্যাহত রেখেছেন মামদানি।’

কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটির জনমত জরিপ বলছে, এই টিভি বিতর্কের কারণে বেশির ভাগ ভোটারের মতের বদল হবে না। জোহরান ও কুমোর ১৮ শতাংশ সমর্থক তাঁদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার ‘সম্ভাবনা নেই’; অন্যদিকে স্লিওয়ার সমর্থকদের মধ্যে এই হার ২৪ শতাংশ।

সর্বশেষ জরিপে ১৯৭১ সালে গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলস ভিজিল্যান্ট গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করা ৭১ বছর বয়সী স্লিওয়া ১৫ শতাংশ সমর্থন নিয়ে বেশ পিছিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। অন্যদিকে কুমোর প্রতি জনসমর্থন রয়েছে ৩৩ শতাংশ এবং জোহরান মামদানির প্রতি ৪৬ শতাংশ।

স্লিওয়া জোর দিয়ে বলেন, তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য কুমোর পক্ষ থেকে দেওয়া লোভনীয় প্রস্তাব তিনি গ্রহণ করেননি। যেমন মোটা বেতনের লাভজনক চাকরি ও গাড়িচালক দেওয়ার মতো প্রস্তাব নাকি দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য কুমো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বিতর্ককে সামনে রেখে স্লিওয়া বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, আরে, এটা শুধু অনৈতিক নয়, এটা ঘুষ। এটা ফৌজদারি অপরাধ হতে পারে।’ শ্রোতাবিহীন অনুষ্ঠিত টেলিভিশিন বিতর্কের সবচেয়ে তীব্র বাক্যবিনিময় হয়েছিল নিউইয়র্কে বসবাসরত উল্লেখযোগ্য ইহুদি সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে।

কুমো অভিযোগ করেন, জোহরান মামদানি হামাসের নিন্দা করেননি। তিনি এমন একটি অবমাননাকর উক্তিকে সমর্থন করেছেন, যা তাঁর দাবি অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী সব ইহুদির মৃত্যুকে বোঝায়।

অন্যদিকে নগদ অর্থে জামিনের প্রতি সমর্থন জানানোর কারণে স্লিওয়া দুজনের কড়া সমোলোচনা করেন। তাঁর অভিযোগ, ঘৃণা-অপরাধের প্রতি তাঁদের যে নরম মনোভাব, এ থেকে সেটির প্রমাণ পাওয়া যায়।

কুমো বলেন, ‘কেন (জোহরান) হামাসের নিন্দা করছেন না? তিনি এখনো “ইন্তিফাদাকে বিশ্বায়ন করো” এই স্লোাগানের নিন্দা করছেন না। যার অর্থ হলো সব ইহুদিকে হত্যা করো।’

জোহরান মামদানি অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে কুমোর এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।
স্লিওয়া তাঁর ভিজিল্যান্ট গ্রুপের নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ‘গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলসের নেতা হিসেবে আমি ৪৬ বছর ধরে এখানে এবং সারা বিশ্বে সব মানুষের জন্য সব সময় পাশে ছিলাম।’