নোবেল কমিটি জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলার জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক অধিকার প্রচার এবং স্বৈরশাসন থেকে ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রে উত্তরণের সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ এই সম্মাননার জন্য তারা মারিয়াকে বেছে নিয়েছেন।
এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবর্তে ভেনেজুয়েলান এই নেতাকে পুরস্কার দেওয়ায় নোবেল প্রাইজ কমিটির সমালোচনা করেছে হোয়াইট হাউস।
আজ শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র স্টিভেন চুং বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তিচুক্তি করে যাবেন, যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন এবং প্রাণ বাঁচাবেন। তার হৃদয় একজন মানবতাবাদীর মতো এবং তার মতো আর কেউ কখনো হবে না, যিনি নিজের ইচ্ছাশক্তির জোরে পাহাড়ও নড়িয়ে দিতে পারেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘নোবেল কমিটি প্রমাণ করেছে, তারা শান্তির চেয়ে রাজনীতিকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।’
নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে ‘স্বাধীনতার সাহসী রক্ষক হিসেবে বর্ণনা করেছে, যারা কর্তৃত্ববাদী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলে।’
নোবেল কমিটি জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলার জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক অধিকার প্রচার এবং স্বৈরশাসন থেকে ন্যায়ভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রে উত্তরণের সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ এই সম্মাননার জন্য তারা মারিয়াকে বেছে নিয়েছেন।
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে নোবেল পুরস্কারের জন্য নিজের প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। চলতি সপ্তাহেই তিনি গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে একটি যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তির ঘোষণা দেন।
নোবেল কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি রিপাবলিকান দলের এই প্রেসিডেন্ট। তবে আজ স্থানীয় সময় সকালে তিনি তার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে গাজা চুক্তি উদযাপনরত সমর্থকদের তিনটি ভিডিও পোস্ট করেন।
‘বারাক ওবামা কিছু না করেই পেয়েছিলেন’: সাবেক প্রেসিডেন্টের নোবেল পুরস্কার জয় নিয়ে ট্রাম্পের কটাক্ষ ট্রাম্প বলেন, ‘ওবামা কিছুই না করে নোবেল পেয়েছিলেন। তিনি জানতেনই না, কী কারণে এটা পেলেন। তিনি শুধু নির্বাচিত হয়েছিলেন।’
নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মরিয়া হয়ে আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শান্তিতে নোবেল পাওয়ার সমালোচনা করলেন িতনি। তিনি অভিযোগ করেন, ওবামা ‘কিছুই করেননি’ বরং ‘আমাদের দেশ ধ্বংস করেছেন’।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, তিনি গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও ‘আটটি যুদ্ধের অবসান’ ঘটিয়েছেন। তবে তিনি দাবি করেন, এসব কাজ তিনি কোনো পুরস্কারের আশায় করেননি। পুরস্কার ঘোষণার আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। কিন্তু তার আগেই ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ওবামা প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই নোবেল পেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘ওবামা কিছুই না করে নোবেল পেয়েছিলেন। তিনি জানতেনই না, কী কারণে এটা পেলেন। তিনি শুধু নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবং তারা ওবামাকে এটি দিয়েছে আমাদের দেশকে ধ্বংস করা ছাড়া একেবারে কিছুই না করার জন্য।’ ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার মাত্র আট মাস পরই বারাক ওবামা মর্যাদাপূর্ণ নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। এই সিদ্ধান্তে অনেকেই বিস্মিত হন।
উদারপন্থি মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস সে সময় জানায়, এই স্বীকৃতি ছিল ‘অত্যন্ত আগাম’ এবং মন্তব্য করে যে নোবেল পুরস্কারের জন্য ‘আরও কঠোর মানদণ্ড থাকা উচিত’।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ঐতিহাসিক মার্কিন মধ্যস্থতায় শান্তি চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা ওবামা কিছুই না করেই শুধু আমাদের দেশ ধ্বংস করার জন্য তাকে পুরস্কার দিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আটটি যুদ্ধ বন্ধ করেছি, যা এর আগে কখনো হয়নি—কিন্তু তারা যা করুক, সেটা তাদের ব্যাপার। আমি জানি, আমি এটা পুরস্কারের জন্য করিনি, আমি করেছি অনেক জীবন বাঁচানোর জন্য।’ নোবেল শান্তি পুরস্কারের ঘোষণা পূর্বাঞ্চলীয় মান সময় (ইএসটি) অনুসারে বৃহস্পতিবার ভোর ৫টায় নরওয়ের অস্লোতে ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে।
জানুয়ারিতে ওভাল অফিসে ফিরে আসার পর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প নরওয়ের পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অস্লোকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যা নোবেল কমিটিকে শান্তি পুরস্কারের প্রার্থী মূল্যায়নে সহায়তা করে। তার এই প্রচেষ্টা মোটেও লুকানো বা ক্ষুদ্র ছিল না।
ট্রাম্প বিভিন্ন ঘটনা ও অর্জনের জন্য প্রায়শই নিজের কৃতিত্ব দাবি করেছেন এবং অনেক সময় তার ব্যক্তিগত প্রভাব অতিরঞ্জিত করেছেন। গত মাসে, তিনি প্রায় নিজেকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছিলেন, জাতিসংঘে তার ভাষণে তিনি দাবি করেছেন, তিনি “সাতটি প্রবল যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন।”
যদিও কিছু দীর্ঘস্থায়ী শত্রুর মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ট্রাম্পের অবদান নিশ্চিতভাবে ছিল। কিন্তু তিনি যে অন্যান্য সংঘাতের অবসানের কথা গর্ব করে বলেছেন, তার মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তার ভূমিকা জড়িত দেশগুলোর কারণে বিতর্কিত হয়েছে।