বিশ্বখ্যাত টাইম সাময়িকী তাদের ‘টাইম শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবন ২০২৫’ তালিকায় ‘সামাজিক প্রভাব’ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করেছে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারকারী বিশেষ সম্পূরক খাবার এমডিসিএফ-২। এমডিসিএফ অর্থ হলো মাইক্রোবায়োটা ডিরেক্টেড কমপ্লিমেন্টারি ফুড, যা একটি বিশেষ ধরনের সম্পূরক খাবার, যা অন্ত্রের উপকারী জীবাণুগুলোকে উদ্দীপ্ত করে শিশুদের সুস্থ বিকাশে সহায়তা করে। এটি আইসিডিডিআর,বি ও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির যৌথ গবেষণার ফল।
এমডিসিএফ-২ তৈরি হয়েছে ছোলা, সয়াবিন, চিনাবাদাম ও কাঁচা কলার গুঁড়ার বিশেষ মিশ্রণে। উপাদানগুলো এমনভাবে নির্বাচন করা হয়েছে, যাতে অন্ত্রের নির্দিষ্ট উপকারী জীবাণুগুলো পুষ্টি পায় এবং শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, স্নায়বিক বিকাশ ও স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি নিশ্চিত হয়।
এ উদ্ভাবনের সূচনা হয় আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ এবং ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অন্ত্র জীবাণু গবেষক ড. জেফরি গর্ডনের মধ্যে এক অনানুষ্ঠানিক আলোচনার মাধ্যমে। ড. তাহমিদ শিশুদের অপুষ্টি নিয়ে কয়েক দশক ধরে কাজ করছেন, আর ড. গর্ডন মূলত স্থূলতা নিয়ে গবেষণা করলেও অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম বিষয়ে পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত।
ড. গর্ডন বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের পুষ্টি ও বৃদ্ধি নির্ভর করে অন্ত্রের জীবাণুর ওপর। আমরা যে উপকারী জীবাণুগুলো চিহ্নিত করেছি, তারা এমন খাদ্য উপাদান প্রক্রিয়াজাত করতে পারে, যা শরীর নিজে থেকে করতে পারে না। বাংলাদেশী শিশুদের নিয়ে পরিচালিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, এমডিসিএফ-২ অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম পুনর্গঠনে সক্ষম এবং এর প্রভাব অন্ত্রের বাইরেও বিস্তৃত।’
ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘এ স্বীকৃতি আমাদের জন্য গভীর অনুপ্রেরণার উৎস। এটি প্রমাণ করে, বিজ্ঞান ও মানবিক সহমর্মিতা একত্র হলে বিশ্বের জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান সম্ভব। স্থানীয়ভাবে তৈরি, সাশ্রয়ী এ সমাধান কোটি কোটি অপুষ্টিগ্রস্ত শিশুকে শুধু বাঁচিয়ে রাখতেই নয়, বরং পূর্ণ বিকাশের সুযোগ দিতে পারে।’
বিগত বছরগুলোতে কিছু অগ্রগতি হলেও বিশ্বজুড়ে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রায় অর্ধেকের জন্য দায়ী অপুষ্টি। যুদ্ধ, বাস্তুচ্যুতি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ সমস্যা আরো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, ফলে কোটি কোটি শিশু খর্বতা ও কৃশতার ঝুঁকিতে রয়েছে। এমডিসিএফ-২ পুষ্টি কর্মসূচিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে বিশ্বজুড়ে অপুষ্টি রোধ ও চিকিৎসার পদ্ধতিকে আমূল বদলে দেয়ার সম্ভাবনা রাখে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান, মালি ও তানজানিয়ায় এ খাবার নিয়ে বৃহৎ পরিসরে গবেষণা চলছে।