লাসলো ক্রাসনাহোরকাই ১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের রোমানিয়া সীমান্তবর্তী ছোট শহর গিউলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রথম উপন্যাস ‘শাতান্তাঙো’ ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয়।
এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন হাঙ্গেরির লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ‘অ্যাপোক্যালিপটিক আতঙ্কের মাঝেও শিল্পের শক্তিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা তার প্রভাবশালী ও দূরদর্শী সৃষ্টিকর্মের জন্য’ তাকে এ পুরস্কারে ভূষিত করেছে নোবেল কমিটি।
আজ বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫ টার দিকে নোবেল কমিটি এ পুরস্কার ঘোষণা করে। নোবেল কমিটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব লাইভে এই ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই ১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের রোমানিয়া সীমান্তবর্তী ছোট শহর গিউলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রথম উপন্যাস ‘শাতান্তাঙো’ ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয়, যা হাঙ্গেরিতে প্রকাশের পরই সাহিত্যজগতে ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং ক্রাসনাহোরকাইয়ের সাহিত্যজীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
উপন্যাসটিতে কমিউনিজমের পতনের ঠিক আগমুহূর্তে হাঙ্গেরির প্রত্যন্ত এক গ্রামীণ এলাকায় পরিত্যক্ত এক যৌথ খামারে বসবাসরত একদল অসহায় মানুষের জীবনচিত্র গভীর ও প্রতীকী ভঙ্গিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে বলা হয় ‘ধৈর্যের লেখক’—তার বাক্য দীর্ঘ, তার বর্ণনা ধীর, কিন্তু সেই ধীরতার ভেতরই তৈরি হয় এক অদ্ভুত ঘূর্ণন। ‘শাতান্তাঙো’ [Satantango] ও দ্য মেলানকোলি অব রেসিস্ট্যান্স [The Melancholy of Resistance] ইউরোপীয় সমাজের পতন ও মানসিক বিশৃঙ্খলাকে এক প্রলয়ের মতো ফুটিয়ে তুলেছে।
তার লেখা পড়লে মনে হয়, সভ্যতার শেষ মুহূর্তগুলো কোনো তীব্র সংঘর্ষ নয়, বরং দীর্ঘ নিঃশ্বাসের মতো নিস্তব্ধ। ক্রাসনাহোরকাই সাহিত্যের মধ্যে একটি ‘মেটাফিজিক্যাল’ গতি আনেন—যেখানে প্রতিটি চরিত্র যেন একেকটি প্রশ্ন, প্রতিটি ঘটনা এক ধরণের ধ্যান।
তিনি এক দার্শনিক গল্পকার, যিনি মানুষের ব্যর্থতার সৌন্দর্যেটুকু সাহিত্যে ফুটিয়ে তুলতে চান। মানবসভ্যতার আত্মপর্যালোচনার ধারায় ফিরে যেতে চাইলে, তার মতো একজন লেখক দিকচিহ্ন হয়ে উঠতে পারেন আমাদের জন্য। তার এই উপন্যাস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৯৪ সালে একই নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন পরিচালক বেলা টার। সাদাকালো এই সিনেমাটির ব্যাপ্তি প্রায় ৭ ঘণ্টা।
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করে সুইডিশ একাডেমি। পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে বিজয়ীরা পাবেন ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার। এ অর্থ তারা তাদের ভবিষ্যতের গবেষণায় কাজে লাগানোর সুযোগ পাবেন।
সুইডিশ একাডেমি এক বিবৃতিতে জানায়, “লাসজলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের রচনাবলি বৈশ্বিক ভয়াবহতার মধ্যেও শিল্পের শক্তিকে পুনর্নির্মাণ করেছে। তিনি মধ্য ইউরোপীয় সাহিত্যের এক মহাকাব্যিক কণ্ঠস্বর, যার কাজ কাফকা ও থমাস বার্নহার্ডের মতো লেখকদের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বহন করছে।”
লেখকের জীবনী ও সাহিত্যজগতে অবদান : লাসজলো ক্রাসনাহোরকাই জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৪ সালের ৫ জানুয়ারি হাঙ্গেরির গিউলায়। দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে তিনি হাঙ্গেরি, ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান ও সুইডিশসহ একাধিক ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছেন। গভীর দার্শনিক ভাবনা, বিমূর্ত গদ্য ও অস্তিত্ববাদী বয়ানে তার লেখনী বিশ্বজুড়ে সমাদৃত।
গত বছর সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান কাং। হান কাং ছিলেন প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ান ও ১৮তম নারী নোবেল সাহিত্য বিজয়ী। উল্লেখ্য, ১৯০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ১১৭ বার। সাম্প্রতিক বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন, অ্যানি এরনো, বব ডিলান, আবদুল রাজাক গুরনাহ, লুইজ গ্লিক, পিটার হান্ডকে, ওলগা তোকারচুক ও হান কাং