কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছর মার্চে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে প্রবাসীরা ২.৬৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১.৭২ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালে সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২.৪০ বিলিয়ন ডলার। রোববার (৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। গত আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছিল ২.৪২ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছর মার্চে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আর মে মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২.৯৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৭.৫৯ বিলিয়ন ডলার। আর আগের অর্থবছরের একই সময় এই পরিমাণ ছিল ৬.৫৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫.৯০ বিলিয়ন ডলার।
হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ হওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ মনে করছেন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে প্রতি মাসেই দুই বিলিয়নের ওপর রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দর আগের চেয়ে অনেক বাড়ার কারণেও বৈধ পথে রেমিট্যান্স বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে পেরেছে, যা আর্থিক খাতের জন্য ইতিবাচক। তবে আর্থিক খাতে সুশাসন বজায় রাখা আগামী নির্বাচিত সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ নির্বাচিত সরকার আসার পর যদি আবার ডলার সংকট তৈরি হয়, তাতে আর্থিক খাতের জন্য ভালো হবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালন ফাহমিদা খাতুন বলেন, “এক বছরে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেশ ভালো। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকাই সামনে মূল চ্যালেঞ্জ হিসাবে আমি মনে করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগের সরকারের ক্ষেত্রে অনেক রকম ব্যত্যয় দেখা গেছে। তবে এখন ভালো চর্চা শুরু হয়েছে। তবে আশঙ্কা থাকে যে ভালো চর্চাগুলো সামনে নির্বাচিত সরকার চলমান করবে কি না। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য এক রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা চলমান রাখাই রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটা অবজেকটিভ (উদ্দেশ্য) হওয়া উচিত।’
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সের দর আগের চেয়ে অনেক বেশি। তাই খোলাবাজার ও ব্যাংকিং চ্যানলের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। তাছাড়া আগে এলসি (ঋণপত্র) খোলা হলে হুন্ডির মাধ্যেম বিল পরিশোধ করা হত। সেই চর্চা এখন নেই। তাই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ছে।’
এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. তৌহিদুল আলম খান বলেন, ‘নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর প্রবাসী কর্মীরা বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠাতে আরও বেশি আস্থাশীল হয়েছেন। কর্মী প্রেরণকারী দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রণোদনাও বহাল রাখা হয়েছে।
‘এছাড়া কঠোর নজরদারির কারণে অবৈধ হুন্ডি লেনদেন কমে এসেছে। অন্যদিকে ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো দ্রুত ও সুবিধাজনক সেবার পাশাপাশি ভালো বিনিময় হার দেওয়ায় কর্মীরা বৈধ পথে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং সচেতনতামূলক প্রচারণা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোকে আরও উৎসাহিত করেছে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আস্থা বাড়িয়েছে এবং ডিজিটাল ব্যাংকিং টাকা পাঠানোকে আরও নিরাপদ ও সহজ করেছে।’