১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ট্রাম্পের নীতিতে মাথায় হাত যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের

বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অনেক বেশি লাভ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। বিদেশি মুদ্রা তো বটেই, ডলারেও আয় হয় প্রচুর। বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা বরাবরই আমেরিকায় বাড়তি সুযোগসুবিধা পেয়ে থাকেন।

বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই আর আমেরিকায় পড়তে যেতে চাইছেন না। বরং বলা ভাল, উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় যেতে তাঁরা ভয় পাচ্ছেন। প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসে ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক নীতি বদলেছেন। আমেরিকায় বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে কঠোর হয়েছেন। ফলে হাতে বিকল্প থাকলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আমেরিকাকে এড়িয়েই যাচ্ছেন অধিকাংশ বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা। এতে আখেরে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষতি হচ্ছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স একটি রিপোর্টে তেমনটাই জানিয়েছে। বিভিন্ন মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের চেয়ে এ বছর বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা কম ভর্তি হয়েছেন।

বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অনেক বেশি লাভ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। বিদেশি মুদ্রা তো বটেই, ডলারেও আয় হয় প্রচুর। বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা বরাবরই আমেরিকায় বাড়তি সুযোগসুবিধা পেয়ে থাকেন। বিশেষ করে বিভিন্ন গবেষণায় মার্কিন বিনিয়োগ বিদেশিদের আরও বেশি করে এই দেশের প্রতি আকৃষ্ট করে। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে ছবিটা বদলে গিয়েছে। বিদেশি ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা হু হু করে কমছে আমেরিকার বিভিন্ন নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফলে প্রমাদ গুনছেন কর্তৃপক্ষ। শিকাগোর ডিপল ইউনিভার্সিটি ইতিমধ্যে খরচে কাটছাঁট করার কথা ঘোষণা করে দিয়েছে। এ বছর সেখানে আগের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম বিদেশি ভর্তি হয়েছেন। গত বছরে ডিপলে মোট ২১ হাজার পড়ুয়া ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২৫০০ ছিলেন বিদেশি।

শিকাগোর ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বার গত বছরের তুলনায় বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ৭৫৫ জন কম। ডিপল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যানুয়েল জানিয়েছেন, বিদেশিদের ভিসা পেতে সমস্যা হচ্ছে। অনেকের ভিসা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। নতুন ভিসার আবেদন মঞ্জুর হতেও সময় লাগছে বেশি। সম্প্রতি আমেরিকার বিদেশ দফতর নতুন ফতোয়া জারি করেছে। বলা হয়েছে, বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের সমাজমাধ্যমের খুঁটিনাটি প্রকাশ করতে হবে, যাতে তা ঘেঁটে মার্কিন আধিকারিকেরা বুঝতে পারেন, আমেরিকা সম্পর্কে কার মনোভাব কেমন। সেই অনুযায়ী পড়ুয়াদের চিহ্নিত করবে ট্রাম্প প্রশাসন। এই নতুন নিয়মের কথা শুনেও অনেকে আমেরিকা থেকে মুখ ফিরিয়েছেন।

গত মে মাসে ট্রাম্পের কোপে পড়েছিল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বলা হয়েছিল, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নেওয়া যাবে না। ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিদ্বেষ এবং জাতিগত হয়রানির মোকাবিলা করতে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন ট্রাম্প। হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে তাঁর এই পদক্ষেপও বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের মন বদলের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তাঁরা আমেরিকার বিকল্প খুঁজছেন।

ট্রাম্পের নতুন নীতির পর ডিপল-সহ আমেরিকার অন্তত ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় বাজেটে কাটছাঁট করেছে। জন্‌স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে গত মার্চ মাসে দু’হাজারের বেশি কর্মীছাঁটাই হয়েছে। গবেষণার কাজে বরাদ্দ থেকে ৭.১ হাজার কোটি ডলার তুলে নেওয়া হয়েছে। নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪২৫টি পদ বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে ৬৩০ জন কর্মচারীকে। প্রতি ক্ষেত্রেই অর্থের অভাবকে কারণ হিসাবে দেখা হয়েছে, যার নেপথ্যে অন্যতম বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা হ্রাস।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে ভারতের এক ছাত্রী জানিয়েছিলেন, তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু ভিসার জটিলতা হতে পারে ভেবে সেখানে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন। অন্যত্র যাবেন বলে ভাবছেন। চিনের এক ছাত্র২০২৪ সালে নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করেছিলেন। পরে তাঁকে গবেষণার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি আমেরিকার পরিবর্তে ব্রিটেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকি, অধ্যাপকেরাও ছাত্রছাত্রীদের আমেরিকা ছাড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি নিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর বক্তব্য, আমেরিকার চাকরি কিংবা শিক্ষায় আমেরিকানদেরই প্রাধান্য দিতে হবে। বাইরে থেকে এসে আমেরিকার সুযোগসুবিধা যাঁরা নিচ্ছেন, তাঁদের জন্য মার্কিন নাগরিকদের চাকরি কিংবা শিক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। প্রতিযোগিতা কঠিন হচ্ছে। সেই কারণেই বিদেশিদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের নীতি কঠোর। তবে এর ফলে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।