যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রভাবশালী সংবাদপত্রদ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা ১৫ বিলিয়ন ডলারের মানহানির মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
আদালত বলেছে, ট্রাম্প ৮৫ পৃষ্ঠার যে দীর্ঘ অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন, সেটিতে দেওয়ানি মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি অনুসরণ করা হয়নি। তাই নতুন করে মামলা দায়েরের জন্য ট্রাম্পের আইনজীবীদের আদালত এক মাস সময় দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, অভিযোগপত্রে থাকতে হবে ‘তথ্যের সংক্ষিপ্ত, সরল ও সরাসরি উপস্থাপনা’। অথচ ট্রাম্পের অভিযোগ ছিল ‘স্পষ্টত অনুপযোগী ও অগ্রহণযোগ্য’। বিচারক বলেন, ট্রাম্পের আইনজীবী দল আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় মামলা দাখিল করতে পারবে, তবে সেটি সর্বোচ্চ ৪০ পৃষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। গত সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, এর চার সাংবাদিক এবং প্রকাশনা সংস্থা পেঙ্গুইন র্যান্ডম হাউসের বিরুদ্ধে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মানহানি ও কুৎসার মামলা করেন ট্রাম্প।
মামলার এজাহারে বলা হয়, নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগের একটি সম্পাদকীয় এবং পেঙ্গুইন প্রকাশিত ‘লাকি লুজার: হাউ ডোনাল্ড ট্রাম্প স্কোয়ান্ডার্ড হিজ ফাদার’স ফরচুন অ্যান্ড ক্রিয়েটেড দ্য ইলিউশন অব সাকসেস’ বইটি ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ও পেশাগত সুনামের মারাত্মক ক্ষতি করেছে। মামলার নথিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা জানতেন যে এসব লেখা ও বইয়ের মধ্যে অসত্য ও বিকৃত তথ্য রয়েছে, তবুও তারা তা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকাশ করেছে। ফ্লোরিডার মিডল ডিস্ট্রিক্টের ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক স্টিভেন ডি. মেরিডে শুক্রবার বলেন, মামলাটি ‘নিঃসন্দেহে এবং অমার্জনীয়ভাবে সিভিল প্রসিডিউরের রুল ৮–এর শর্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সংবাদপত্র দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মানহানির মামলা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, পত্রিকাটি প্রায় এক দশক ধরে তার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যার অভিযান’ চালাচ্ছে এবং এটি ‘র্যাডিক্যাল লেফট ডেমোক্র্যাট পার্টির ভার্চুয়াল মুখপাত্রে’ পরিণত হয়েছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) ট্রাম্প লেখেন, ‘আজ আমি দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মানহানি ও অপবাদের মামলা করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি।’ তিনি আরও বলেন, এটি ‘আমাদের দেশের ইতিহাসে অন্যতম নিকৃষ্ট ও অধঃপতিত সংবাদপত্র।’
রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে, নিউইয়র্ক টাইমস তার ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসকে সমর্থন জানিয়ে সেই খবরটি পত্রিকার প্রথম পাতায় বিশেষভাবে ছেপেছে। ট্রাম্পের দাবি, এটি ছিল ‘আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবৈধ নির্বাচনী অনুদান’। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, সংবাদপত্রটি তার পরিবার, ব্যবসা, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এবং ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন (মাগা)’ আন্দোলনসহ গোটা জাতির বিরুদ্ধে অসত্য প্রচার চালিয়েছে।
এছাড়া, ট্রাম্প নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদ প্রকাশনাকে এবিসি এবং সিবিএস-এর মতো অন্যান্য লিবারেল মার্কিন গণমাধ্যমের সঙ্গে একই কাতারে উল্লেখ করেন। তার দাবি, এই গণমাধ্যমগুলো দীর্ঘদিন ধরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপব্যবহার এবং আক্রমণ চালিয়ে আসছে, যা ‘একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও বেআইনি’।
প্রেসিডেন্ট আরও লেখেন, ‘আমি গর্বিত যে, এক সময়ের সম্মানিত এই পত্রিকাটিকে জবাবদিহির আওতায় আনছি, যেমনটা আমরা ভুয়া সংবাদ প্রচারকারী নেটওয়ার্কগুলোর বিরুদ্ধে করেছি। যেমন, জর্জ স্লোপাডোপোলাস/এবিসি/ডিজনি এবং ৬০ মিনিটস/সিবিএস/প্যারামাউন্ট-এর বিরুদ্ধে আমাদের সফল মামলা।’ তিনি বলেন, ‘তারা জানত যে তারা একটি অত্যন্ত জটিল নথি ও ভিজ্যুয়াল বিকৃতির মাধ্যমে আমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে “কলঙ্কিত” করছে, যা প্রকৃতপক্ষে ছিল এক ধরনের বিদ্বেষমূলক মানহানি। তাই শেষ পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ অর্থে এই মামলা নিষ্পত্তি করা হয়।’
টাইমসকে আরও আক্রমণ করে ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে, মার্কিন এই সংবাদপত্রকে দীর্ঘদিন ধরে তাকে ‘মিথ্যা ও মানহানিকরভাবে আক্রমণ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘তারা দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিতভাবে এই ধরনের অপব্যবহার চালিয়েছে, যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও বেআইনি। নিউইয়র্ক টাইমসকে দীর্ঘদিন ধরে আমাকে মিথ্যা, কলঙ্কজনক ও মানহানিকরভাবে আক্রমণ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং আজই সেটির ইতি ঘটছে! মামলা দায়ের করা হচ্ছে মহান ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে। এ বিষয়ে আপনাদের মনোযোগের জন্য ধন্যবাদ। মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন!