যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে হুন্দাইয়ের একটি কারখানায় যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ব্যাপক ধরপাকড়ের ঘটনায় মার্কিন বিনিয়োগ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার কম্পানিগুলো ‘খুবই দ্বিধাগ্রস্ত’ বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং।

মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ আইসের গত সপ্তাহের অভিযানে আটক হওয়া তিন শতাধিক দক্ষিণ কোরিয়ান নাগরিক শুক্রবার দেশে ফিরছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জটিলতার কারণে তাদের প্রত্যাবর্তন বিলম্বিত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিউল। পরিস্থিতি অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট লি বলেন, ‘বিদেশে কারখানা স্থাপনের সময় কোরিয়ান কম্পানিগুলো সাধারণত দেশ থেকে কর্মী পাঠায়।

যদি তা আর সম্ভব না হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন আরও কঠিন হয়ে যাবে। ’লি জানান, ‘ওয়াশিংটনের সঙ্গে ভিসা সংক্রান্ত বিকল্প নিয়ে আলোচনা করছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। শিগগিরই হয়তো বাড়তি কোটার মাধ্যমে অথবা নতুন ভিসা ক্যাটাগরি তৈরির মাধ্যমে বিকল্প তৈরি হতে পারে।’

হুন্দাই কারখানায় অভিযানে মার্কিন কর্মকর্তারা মোট ৪৭৫ জনকে আটক করেন। এর মধ্যে ৩০০ জনের বেশি ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ভিসার নিয়ম ভেঙে কাজ করছিলেন। লি বলেন, কর্মীদের দেশে ফেরাতে বিলম্ব হয়েছে হোয়াইট হাউসের নির্দেশে।

দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আটক কর্মীদের মধ্যে কেউ যুক্তরাষ্ট্রে থেকে আমেরিকান কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে ইচ্ছুক কি না তা যাচাই করতে চেয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হুন্দাইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে ওই ব্যাটারি কারখানা পরিচালনা করছে এলজি এনার্জি সলিউশন। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তাদের অনেক কর্মী বিভিন্ন ধরনের ভিসা বা ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন।

কারখানার এক কর্মী বিবিসিকে বলেন, অভিযানের সময় চরম আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি দেখা দেয়। আটক অধিকাংশ কর্মী ছিলেন মেকানিক, যারা উৎপাদন লাইন বসানোর কাজে যুক্ত ছিলেন। তারা মূলত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছিলেন।

এশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া আংশিকভাবে শুল্ক এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। তবে অভিযানের ঘটনায় কোরিয়ান গণমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম দোং-আ ইলবো এ ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগে ‘একটি ধাক্কা’ আখ্যা দিয়েছে।

বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, দুই দেশকে দ্রুত সহযোগিতায় এগিয়ে এসে ‘বন্ধুত্বের ফাটল মেরামত করতে হবে।’ তবে হোয়াইট হাউস হুন্দাই কারখানায় অভিযানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিনিয়োগে বিরূপ প্রভাব পড়বে না জানিয়ে সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে। রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিদেশি কম্পানিগুলোকে আমেরিকানদের চাকরি দেওয়ার আহ্বান জানান।

ট্রাম্প বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি মার্কিন অভিবাসন আইন মেনে চলে, তবে তাদের কর্মী আনা ‘দ্রুত ও বৈধভাবে সম্ভব’ হবে।