১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

যুক্তরাষ্ট্র
ট্রাম্প ও ভান্সের ফোনেও কান চিনা হ্যাকারদের

আমেরিকায় বড় সাইবার হানা! প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য এখন চিনের হাতে?

আমেরিকায় বড় সাইবার হানা! প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য এখন চিনের হাতে?

বড়সড় সাইবার হানার শিকার আমেরিকা। ‘সল্ট টাইফুন’ নামক একটি চিনা হ্যাকারগোষ্ঠী এই হানার নেপথ্যে রয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। অভিযোগ, গত বছর দীর্ঘ সময়ের জন্য আমেরিকার বিভিন্ন সংস্থার নেটওয়ার্ক হ্যাক করা হয়েছিল। চিনা হ্যাকারদের মধ্যে এই গোষ্ঠীকেই আপাতত ‘সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। মার্কিন গোয়েন্দারা সম্প্রতি একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, মোট ৮০টি দেশে চিনের এই হ্যাকারেরা জাল বিস্তার করেছে। যে ভাবে নিঃশব্দে তারা তাদের কাজ করে গিয়েছে, তাতে আমেরিকার প্রায় প্রত্যেক নাগরিকের তথ্যই তারা হাতে পেয়ে গিয়ে থাকতে পারে।

নিউ ইয়র্ক টাইম্‌সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ টেলিযোগাযোগ সংস্থাগুলিকে নিশানা করেছিল চিনা হ্যাকারগোষ্ঠী। তদন্তকারীরা গত সপ্তাহে এ নিয়ে যৌথ ভাবে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, যতটা ভাবা হয়েছিল, ‘সল্ট টাইফুন’-এর হাত তার চেয়েও লম্বা। যে পরিমাণ তথ্য তারা চুরি করে নিয়েছে, তা হোয়াইট হাউসের বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে। ওই তথ্যের সাহায্যে চিনের গোয়েন্দারা বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে রাজনীতিবিদ, গুপ্তচরের উপর নজর রাখতে পারবেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যমে দাবি, চিনের সরকারই এই হ্যাকারদের মদত দিচ্ছে। তাদের নিশানায় শুধু টেলিযোগাযোগ সংস্থাই নয়, বিভিন্ন দেশের সরকার, পরিবহণ, আবাস এবং সামরিক কাঠামোও রয়েছে।

চিনা হ্যাকারদের হাত থেকে নিস্তার পাননি খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সও। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গত বছর আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্প যখন পুরোদমে প্রচার করছেন, সেই সময়ে তাঁর ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল। ভান্সের ফোনের কথোপকথনও শুনে ফেলেছে হ্যাকারেরা। এ ছাড়া, ‘এনক্রিপ্‌টেড’ বা সংরক্ষিত নয়, এমন লিখিত কথোপকথনেও তারা আড়ি পেতেছে। শুধু রিপাবলিকান নয়, আমেরিকার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতারাও তাদের নিশানায় ছিলেন।

তদন্তকারীদের যৌথ বিবৃতিতে আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, ইটালি, জাপান এবং স্পেনের স্বাক্ষর রয়েছে। ব্রিটেন এবং আমেরিকার আধিকারিকেরা এই সাইবার হানাকে ‘অসংযত’ এবং ‘নির্বিচার’ বলে উল্লেখ করেছেন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিশ্বব্যাপী প্রভাব খাটানোর যে আকাঙ্ক্ষা চিনের রয়েছে, এই সাইবার হানা তার পরিচায়ক।

মনে করা হচ্ছে, ২০১৯ থেকে সক্রিয় চিনের ‘সল্ট টাইফুন’। শুধু আমেরিকারই অন্তত ছ’টি বড় বড় টেলিযোগাযোগ সংস্থার নেটওয়ার্কে ঢুকে পড়েছিল তারা। কে কার সঙ্গে ফোনে কী কথা বলেছেন, সব শোনা হয়েছে। এর আগেও আমেরিকার অনেক বড় বড় সংস্থায় সাইবার হামলা চালিয়েছিল চিন। ২০২১ সালে জো বাইডেন প্রশাসন অভিযোগ করেছিল, মাইক্রোসফ্‌টের ইমেল ব্যবস্থা ব্যবহার করে বিশ্বে নজরদারি চালাচ্ছে চিন। এ ছাড়া রুশ হ্যাকারদের বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ তোলা হয়েছে আমেরিকা থেকে। তবে ‘সল্ট টাইফুন’ নিয়ে হোয়াইট হাউসের চিন্তা বাড়ছে।