১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পুতিন–মোদি অতি ঘনিষ্ঠতায় তীব্র প্রতিক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রের

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চীন সফরের শেষ দিনে তাঁকে বারবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেই দেখা গেছে। গত সোমবার ছিল চীনের তিয়ানজিন শহরে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) সম্মেলনের শেষ দিন। সেখানে মোদি ও পুতিনকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে আলাপ করতে দেখা যায়।

মোদি ও পুতিনের এ ঘনিষ্ঠতা ভালোভাবে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। এসসিও সম্মেলনে পুতিনের সঙ্গে মোদির ঘনিষ্ঠতায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে রাশিয়ার তেল কেনার মাধ্যমে দেশটিকে রসদ যোগাচ্ছে ভারত।

পুতিন ও সির সঙ্গে এসসিও সম্মেলনে মোদির বৈঠককে গুরুত্ব দিচ্ছেন না স্কট বেসেন্ট। মোদি এমন এক সময়ে এ সম্মেলনে যোগ দেন, যখন ভারতের আমদানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে আমদানি করা তেলও রয়েছে।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী বেসেন্ট বলেন, ‘সাংহাই সহযোগিতা সংস্থায় এটা প্রতিবছর ঘটে। এটা ঘুরেফিরে সেই একই ঘটনা। দেখুন, এগুলো খারাপ কর্মকাণ্ডে যুক্ত…ভারত রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রকে জ্বালানি দিচ্ছে, চীনও রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রকে তেল দিচ্ছে…আমি মনে করি, একসময় আমরা এবং আমাদের মিত্ররা এগিয়ে এসে পদক্ষেপ নেবে।’

বেসেন্ট আরও বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা বিবেচনা করছে। কারণ, রাশিয়ার সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় কিয়েভে কমপক্ষে ১৭ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে চার শিশু রয়েছে।’

ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক প্রসঙ্গে বেসেন্ট বলেন, ‘দিন শেষে দুই দেশ তাদের সমস্যা সমাধান করবে। তবে ভারত রাশিয়ার তেল কিনে তা পুনরায় বিক্রি করার মাধ্যমে এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধচেষ্টার তহবিল সরবরাহের ক্ষেত্রে খুব ভালো ভূমিকা পালন করছে না।’

বেসেন্টের মতোই গত সোমবার ১ সেপ্টেম্বর ভারত, চীন ও রাশিয়ার সমালোচনা করেছেন ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো। তিনি বলেছেন, সি ও পুতিনের সঙ্গে মোদির মেলামেশা দেখে লজ্জা লাগে। নাভারো বলেন, ‘আমাদের, ইউরোপ এবং ইউক্রেনের সঙ্গে তাঁর (মোদির) থাকা উচিত, রাশিয়ার সঙ্গে নয়।’

হিন্দুস্তান টাইমস–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নাভারো বলেছেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গণতন্ত্রের নেতা হিসেবে মোদিকে বিশ্বের দুই প্রধান স্বৈরতান্ত্রিক নেতা পুতিন ও সির সঙ্গে মেলামেশা করতে দেখা লজ্জার বিষয়। এটা কোনোভাবেই বোধগম্য নয়।’

অতীতে এসসিওকে এত গুরুত্ব দেয়নি ভারত। এবার যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে চাপের মুখে এসসিও সম্মেলনে যোগ দেন মোদি। এসসিও মূলত আঞ্চলিক একটি জোট। এর লক্ষ্য হলো পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির বিকল্প এক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা। এবারের সম্মেলনে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন সি ও পুতিন। এবার তিয়ানজিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যোগদান সম্মেলনকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। এবারের সম্মেলনে ২০ দেশের নেতা উপস্থিত হন।

সম্মেলনে ভারত ও রাশিয়ার বৈঠকের দিকে চোখ রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। গত সোমবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, মোদি আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পথে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের গাড়িতে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলেন। পরে মোদি বৈঠকের শুরুতে বলেন, ‘ভারত ও রাশিয়া সব সময় সবচেয়ে কঠিন সময়েও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা ইউক্রেনের সাম্প্রতিক শান্তি অর্জনের সব প্রচেষ্টাকেই স্বাগত জানাই।’

রাশিয়া–চীন সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায়: রাশিয়া ও চীনের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গতকাল বিশাল সামরিক প্যারেডের আগে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। গতকাল সির সঙ্গে বৈঠকে পুতিন জানান, ‘আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাশিয়া-চীনের সম্পর্কের কৌশলগত প্রকৃতি প্রতিফলিত করে, যা বর্তমানে অনন্য মাত্রায় পৌঁছেছে।’