১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সিডনি ম্যারাথনে নিউইয়র্ক প্রবাসী নাসির শিকদার

গত ৩১শে আগস্ট, রোববার অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অনুষ্ঠিত হলো বিশ্বের সপ্তম বিশিষ্ট ম্যারাথন: ‘টিসিএস সিডনি ম্যারাথন’। এটি শুধু একটি দৌড় প্রতিযোগিতা নয়, বরং এক মহোৎসব, যেখানে খেলাধুলার সঙ্গে মিলেমিশে ছিল আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির রঙ। এবারের আসরে যোগ দিয়েছিলেন বিশ্বের একশো বিশটিরও বেশি দেশ থেকে আসা প্রায় পঁইত্রিশ হাজার দৌড়বিদ। ভোর সাড়ে ছয়টায় নর্থ সিডনি ওভাল থেকে দৌড় শুরু হয়ে শহরের নানা সড়ক ও সেতু অতিক্রম করে শেষ হলো অপূর্ব ল্যান্ডমার্ক সিডনি অপেরা হাউসের সামনে। সেই ভিড়ের মাঝে আলাদা করে আলো ছড়ালেন বাংলাদেশের মুখ— নাসির শিকদার।

নিউইয়র্ক প্রবাসী নাসির শিকদারের গল্প আসলে লড়াইয়ের গল্প। কিছু বছর আগেও তিনি ছিলেন চরমভাবে স্থূলতায় (অবিসিটি) আক্রান্ত। হাঁটা-চলা কষ্টকর হয়ে উঠেছিল, দৈনন্দিন জীবন ছিল ভীষণ দুর্বিষহ। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিজেকে পাল্টাবেন। সেই সিদ্ধান্তের হাতিয়ার হলো— দৌড়। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ঘাম ঝরিয়ে নাসির শুধু নিজের শরীরকেই পাল্টালেন না, পাল্টালেন জীবনদর্শন।

মাত্র চার বছরের ভেতরে নাসির শিকদার অর্জন করেছেন এক অসাধারণ সাফল্য— ১৮৩টি হাফ-ম্যারাথন, ৩৭টি পূর্ণ ম্যারাথন এবং ১০টি আল্ট্রা ম্যারাথন। সব মিলিয়ে তার পায়ের ছাপ পড়েছে প্রায় আট হাজার মাইল পথে। এ সংখ্যাগুলো শুধু একটি ক্রীড়াবিদের রেকর্ড নয়, বরং তার অদম্য মনোবল ও জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ জয়ের দলিল।

নাসির এখন শুধু নিজের জন্য দৌড়ান না। তিনি কাজ করছেন “অবিসিটি ফ্রি ওয়ার্ল্ড” উদ্যোগ নিয়ে। তার বিশ্বাস— সচেতনতা ও শারীরিক অনুশীলনের মাধ্যমে পৃথিবীকে স্থূলতামুক্ত করা সম্ভব। তিনি নিয়মিত নিজের দৌড়জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করছেন নানা প্ল্যাটফর্মে, যেখানে হাজারো মানুষ অনুপ্রাণিত হচ্ছেন, নতুনভাবে জীবন শুরু করছেন। তার বার্তা সহজ— “দৌড়াও, সুস্থ থাকো, নিজের সীমা ভেঙে বেরিয়ে এসো।”

সিডনি ম্যারাথনের সকালটা ছিল অন্যরকম। হাজারো দৌড়বিদ ছুটে চলছিলেন অপেরা হাউসের দিকে, কিন্তু নাসির শিকদারের প্রতিটি পদক্ষেপ যেন আলাদা অর্থ বহন করছিল। তিনি শুধু একজন অংশগ্রহণকারী নন; তিনি ছিলেন লড়াই, জেদ আর আশার প্রতীক। আন্তর্জাতিক এই আয়োজনে একজন বাঙালির এমন উপস্থিতি শুধু বাংলাদেশের ক্রীড়াজগতের জন্যই নয়, বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাঙালিদের জন্যও এক গর্বের মুহূর্ত। সিডনির আকাশের নিচে, দৌড়বিদদের ঢেউয়ের মাঝে, বাঙালি নাসির শিকদারের প্রতিটি পদক্ষেপ যেন ঘোষণা করছিল— “একটি স্থূলতামুক্ত পৃথিবী শুধু স্বপ্ন নয়, বরং তা সম্ভব।”