জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স (ইউএন ডিইএসএ) প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েশন প্রক্রিয়া বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে তৈরি পোশাকের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার কারণে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ছিল ৪৮ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার, যার ৮১ দশমিক ৪৯ শতাংশই এসেছে পোশাক খাত থেকে। প্রতিবেদনে এ একক নির্ভরশীলতাকে দেশের অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যহীনতার বড় সংকেত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার, যেখানে মোট রপ্তানির ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ যায়। এ বাজারে রপ্তানির ৮৭ শতাংশই পোশাক পণ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে শুল্কহার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় প্রায় ২১ শতাংশ কমে যেতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণার পর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ওপর কার্যকর শুল্কহার দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
জাতিসংঘের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়লেই বাংলাদেশের রপ্তানির আয় কমতে পারে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।
যদি ঘোষিত মাত্রায় শুল্ক কার্যকর হয়, তবে ক্ষতি দাঁড়াতে পারে ৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার—যা দেশের মোট রপ্তানির আয়ের প্রায় ১২ দশমিক ৮ শতাংশ।
এ ধাক্কা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, কর্মসংস্থান ও শিল্প প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
২০২৬ সালে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার কথা। তবে শুল্ক সুবিধা হারালে এ উত্তরণ টেকসই হবে না বলে প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশেষ করে ওষুধ খাত মেধাস্বত্বজনিত বাধার মুখে পড়তে পারে, ফলে দাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারক সংগঠনগুলো গ্র্যাজুয়েশন অন্তত তিন বছর পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।
তাদের মতে, এ সময়ের মধ্যে শিল্প খাতকে প্রতিযোগিতার উপযোগী করা, নতুন বাজার খোঁজা এবং রপ্তানির বৈচিত্র্য নিশ্চিত করা জরুরি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পিছিয়ে দিতে হলে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) কাছে আবেদন করতে হবে এবং মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের ভিত্তিতে শক্ত যুক্তি হাজির করতে হবে। অন্যথায় আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশ দুর্বল অবস্থানে পড়তে পারে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন স্পষ্টভাবে বলছে, শুল্ক আঘাত স্থায়ী হলে বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পথ আরও কঠিন হয়ে উঠবে। তাই রপ্তানি খাতের বহুমুখীকরণ, নীতিগত সংস্কার এবং নতুন বাজার কৌশল গ্রহণ এখনই জরুরি।