১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

জোহরান মামদানীর আসনে নির্বাচনে নেমে গেছেন বাংলাদেশি মেরি জোবাইদা

নিউ ইয়র্ক সিটির আসন্ন মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী জোহারন মামদানি যদি বিজয়ী হন, তাহলে তাঁর নিউ ইয়র্বের এষ্টোরিয়ার নিউ ইয়র্ক ষ্টেট অ্যাসেম্বলি আসন খালি হয়ে যাবে, এবং সে আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান আর কমিউনিটির পরিচিত মুখ মেরি জোবায়েদা।

মেরি জোবাইদা বর্তমানে ডেমোক্রেটিক সোশালিস্টস অব আমেরিকার সদস্য। তিনি বলেন, তিনি আইসিই-র বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চান। কিউনি, এসইউএনওয়াই, প্রি‑কে এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ফ্রি করতে চান, এমনকি ক্ষুধার্তদের খাবার চুরি করা অপরাধ না করার প্রস্তাব মেরি জোবাইদার।
মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম মেরি জোবাইদাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নিউইয়র্কের চলমান রাজনীতি আমেরিকার রাজনীতির মাঠে গুরুত্ব হয়ে উঠেছে, পিলিটিকোর এ প্রতিবেদনটি তাই প্রমাণ করছে।

জোবাইদা পলিটিকোকে বলেছেন, “খাবার চুরির জন্য কাউকে গ্রেফতার করা অর্থহীন, এটা সম্পদের অপচয়, এবং মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এটা বাস্তবসম্মত না।”

প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে মেরি জোবাইদা বলেন, “আমি কখনোই জোহারনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতাম না, কারণ আমাদের এখানে প্রগ্রেসিভ নেতার দরকার। তবে আমি বলি এটা যেন আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে এবং জনগণ তা গ্রহণ করেছে।” তিনি জানান, দুই বছর আগে তার এলাকা পুনর্বিন্যাস করে ওই নির্বাচনি এলাকার অংশ করা হয়।

তবে কুইন্স ডেমোক্রেটিক পার্টির পরিকল্পনা ভিন্ন হতে পারে। যদি মামদানি আগামী ১ জানুয়ারি মেয়র হিসেবে শপথ নেন, তাহলে গভর্নর ক্যাথি হোকুলকে ১১ জানুয়ারির মধ্যে একটি বিশেষ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে, যা আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি হতে পারে।

ডেমোক্রেট, রিপাবলিকান এবং ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টি তাদের নিজ নিজ প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে। স্টেট ও কুইন্স ডেমোক্রেটরা এই সুযোগে মামদানির পরিবর্তে একজন মাঝামাঝি ধাঁচের প্রার্থীকেও নিয়ে আসার চেষ্ঠা করতে পারে।

ইতিমধ্যেই মেরি জোবাইদা দাতা খুঁজছেন, ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সংগঠিত করছেন। তিনি জানিয়েছেন, আগস্টের শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি প্রচারনা শুরু করবেন।

সম্প্রতি অ্যাসেম্বলি সদস্য জেসিকা গনজালেস-রোজাস ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি স্টেট সিনেটর জেসিকা রামোসের বিরুদ্ধে প্রাইমারিতে দাঁড়াবেন। মামদানির ঘনিষ্ঠ সহকর্মী মততাব খান কুইন্সের অ্যাসেম্বলি সদস্য ডেভিড উইপ্রিনের বিরুদ্ধে নির্বাচন করার জন্য নিবন্ধন করেছেন।

ডেমোক্রেটিক সোর্স বলেছে, মামদানির আসন পূরণ সংক্রান্ত আলোচনা মূলত শুরু হবে আসছে নভেম্বরে। যখন রাজ্যের এসওএমওএস কনফারেন্সে শুরু হবে। যেখানে রাজনীতিক, লবিস্ট ও নীতিনির্ধারকরা পরবর্তী লক্ষ্য নিয়ে আলাপ করবেন।

ওয়ার্কিং ফ্যামিলিজ পার্টি এখনও জানায়নি তারা প্রার্থী দিবে কিনা, কিংবা মেরি জোবাইদাকে সমর্থন করবে কিনা। মেরি জোবাইদা ও মামদানির মধ্যে এখনো কথা হয়নি, তবে তিনি শীঘ্রই যোগাযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন।

পলিটিকো তাদের প্রতিবেদনে মেরি জোবাইদার বয়স আনুমানিক ৪৫ বছর বলে উল্লেখ করেছে। তিনি বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে তাঁর জন্মতারিখ রেকর্ড হয়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। মেরি জোবাইদা ২০০১ সালের নাইন ইলেভেন ঘটনার কিছু পর তিনি আমেরিকায় আসেন।

কমিউনিটি কলেজে পড়াশোনা করেন, এরপর স্কলারশিপ পেয়ে এনওয়াইউ -তে ভর্তি হন। ২০০৭ সালে বারাক ওবামার প্রচারণায় যুক্ত হয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় এবং পরে বিল থম্পসনের মেয়রাল প্রচারণায় কাজ করেন। জোবাইদা সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন এবং জেসিকা রামোসের অফিসে কনস্টিটুয়েন্ট সার্ভিসও করেছেন।

২০২০ সালে তিনি কুইন্সের ৩৭ অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্টে দীর্ঘদিনের আইনপ্রণেতা ক্যাথি নোলানের বিরুদ্ধে প্রাইমারিতে অংশ নেন এবং মাত্র ১৫০০ ভোটে পরাজিত হন। মামদানি নির্বাচিত হওয়ার পর, কমিউনিটির নেতারা তাঁর সঙ্গে দেখা করে বলেন, “আপনি নীরব থাকতে পারবেন না, আপনাকে এই আসনের জন্য লড়তে হবে।”
মেরি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছেন, “বিশেষ নির্বাচন হলে আমি জিতবই। এটা আমার জন্য ‘পিস অফ কেক’ হবে।” যদিও তিনি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থা এবং দরিদ্রদের প্রতি আচরণে বড় সমস্যা আছে, তবুও এই দেশকে তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে ধারণ করেন।

মেরি জোবাইদা বলেছেন, “আমরা একটি কঠিন সময় পার করছি—একটি জাতি, একটি কমিউনিটি হিসেবে। যেমন শিশুর জন্মের আগে প্রসব যন্ত্রণা হয়, তেমনই আমরা এখন কঠিন সময় পার করছি, কিন্তু আমি আশাবাদী, খুব শিগগিরই আমরা এক সুন্দর আমেরিকাকে দেখব।”