কুখ্যাত অর্থলগ্নিকারী ও যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টাইন সম্পর্কিত নথি প্রকাশে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা বাধা দিচ্ছেন—এমন অভিযোগের তীব্র বিরোধিতা করেছেন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন। বুধবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘কংগ্রেসের কেউ এপস্টাইনের নথি আটকে রাখছে না। কংগ্রেসের কেউ এমন কাজ করছে না।’
জনসনের এই মন্তব্যের একদিন আগেই ডেমোক্র্যাটদের আনা এপস্টাইন নথি প্রকাশে ভোটাভুটির চেষ্টাকে পাশ কাটিয়ে তিনি আগস্ট মাসের জন্য অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন।
এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে জনসন বলেন, ‘আমরা রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের এই রাজনৈতিক প্রহসনে অংশ নিতে রাজি নই। তাই নিয়মকানুন নির্ধারণী কমিটির প্রক্রিয়াকে উপহাসের পাত্র হতে দিচ্ছি না।’
জনসন জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিচার বিভাগকে এই সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের জন্য পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এপস্টাইন মামলা সংক্রান্ত বিশ্বাসযোগ্য সকল তথ্য যেন প্রকাশ করা হয়, তার জন্য আমরা চাপ দিচ্ছি।’ ট্রাম্প প্রশাসন আদালতের মাধ্যমে নথিগুলো প্রকাশের জন্য কাজ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘আমরা দেখেছি রক্ষণশীলরা প্রায়শই প্রতিনিধি পরিষদের কার্যক্রম থামিয়ে দেয়। এপস্টাইন সংক্রান্ত ভোটের ভয়েই কি আপনি প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করেছেন?’ জনসন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘না, আমাদের কোনো ভয় নেই।’ তিনি যোগ করেন, ‘কোনো ভয় নেই। আমরা ডেমোক্র্যাটদের এই বিষয়টিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে দেব না।’
স্পিকার মাইক জনসন বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন চায় ‘এপস্টাইনের এই ঘৃণ্য কর্মকা-ের সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের দ্রুত বিচার হোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই তাদের ওপর আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ হোক। আমি আমার ক্ষমতার মধ্যে থেকে সবকিছু করব তা নিশ্চিত করার জন্য। সেই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে, এবং আমরা দেখব এর ফলাফল কী হয়।’
এপস্টাইন ২০১৯ সালে নিউ ইয়র্কের একটি কারাগারে যৌন পাচারের অভিযোগে বিচারের অপেক্ষায় থাকাকালীন আত্মহত্যা করেন বলে কথিত আছে। যদিও তার মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে ঘোষণা করা হয়, বিখ্যাত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তার বহুল চর্চিত যোগাযোগের কারণে ঘটনাটি ঘিরে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে, মার্কিন সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার এই অচলাবস্থার জন্য জনসনের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং আগস্টের এই ছুটিকে ‘এপস্টাইন ছুটি’ বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, এই বিষয়টি ভবিষ্যতে ‘আরো বড় আকার ধারণ করবে।’
সিনেট অধিবেশনে শুমার বলেন, ‘গত বুধবার, ২৩ জুলাই প্রতিনিধি পরিষদে যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।’ তিনি উল্লেখ করেন, এপস্টাইন বিষয়ক আলোচনা ‘এড়াতে’ স্পিকার জনসন তড়িঘড়ি করে সদস্যদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। শুমার আরও দাবি করেন, ‘গিসলেইন ম্যাক্সওয়েলের ক্ষমার জন্য কাগজপত্র প্রস্তুত করতে ট্রাম্পকে সময় দেওয়ার জন্যই জনসন এই ‘এপস্টাইন ছুটি’ ঘোষণা করেছেন।’
শুমার বলেন, স্পিকারের উচিত এপস্টাইন ইস্যু ‘মোকাবিলা এড়াতে’ আইনপ্রণেতাদের আগেভাগে বাড়ি পাঠিয়ে না দেওয়া। তিনি যোগ করেন, ‘কী ঘটেছিল তা জানার অধিকার আমেরিকান জনগণের রয়েছে। কিন্তু তার পরিবর্তে স্পিকার জনসন এই এপস্টাইন ছুটি তৈরি করেছেন। এটি একটি ভয়াবহ সিদ্ধান্ত।’ সূত্র নিউ ইয়র্ক টাইমস।
ছবির ক্যাপশন: ২০০০ সালে মার-এ-লাগোতে (বাম দিক থেকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প, মেলানিয়া নাউস (বর্তমানে মেলানিয়া ট্রাম্প), জেফরি এপস্টেইন ও তাঁর সঙ্গী ঘিসলেন ম্যাক্সওয়েল। ছবি: এএফপি