৩০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

যুক্তরাষ্ট্র

মারডক ও ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ১০ বিলিয়ন ডলারের মানহানি মামলা

মারডক ও ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ১০ বিলিয়ন ডলারের মানহানি মামলা

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনকে অশ্লীল চিঠি ও এক নগ্ন নারীর স্কেচ পাঠানোর অভিযোগে করা প্রতিবেদনকে ‘মানহানিকর ও বানোয়াট’ বলে দাবি করেছেন। পাশাপাশি তিনি মিডিয়া মোগলখ্যাত রুপার্ট মারডক এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের দুই প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপুর্ণ সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের হুমকি দেওয়ার ২৪ ঘন্টা না পেরুতেই মামলা ঠুকে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

গত শুক্রবার, ১৮ জুলাই ফ্লোরিডার মিয়ামির ফেডারেল আদালতে করা এই মামলায় ট্রাম্প ডাও জোনস এবং রুপার্ট মারডকের প্রতিষ্ঠান নিউজ কর্পের বিরুদ্ধেও অভিযোগ এনেছেন। ক্ষতিপূরণ হিসেবে দাবি করেছেন কমপক্ষে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৩ সালে এপস্টেইনের ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে একটি অশ্লীল চিঠি পাঠিয়েছিলেন ট্রাম্প, যেখানে ছিল হাতে আঁকা একজন নগ্ন নারীর ছবি ও কিছু কৌতুকপূর্ণ বার্তা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিঠিটি ছিল জন্মদিনের একটি ‘বিশেষ’ অ্যালবামের অংশ। এপস্টেইনের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর সাবেক সঙ্গী ঘিসলেন ম্যাক্সওয়েল এটি তৈরি করেছিলেন। চিঠিটিতে ট্রাম্পের নামসহ টাইপরাইটারে লেখা একটি কথোপকথন রয়েছে। একজন নগ্ন নারীর অবয়বে চিঠিটি বাঁধাই করা ছিল। ওই নারীর স্তন, যৌনাঙ্গসহ স্পর্শকাতর অংশে ‘ডোনাল্ড’ স্বাক্ষরও ছিল। চিঠির শেষ লাইনে এপস্টেইনের উদ্দেশে লেখা ছিল, ‘শুভ জন্মদিন—প্রতিটি দিন হোক আরেকটি চমৎকার গোপন রহস্য।’

এদিকে, ট্রাম্প দৃঢ়ভাবে ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন, চিঠিটি ভুয়া। তিনি নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, তিনি নিউজ কর্পের প্রতিষ্ঠাতা মারডককে আগেই সতর্ক করেছিলেন যে, তিনি মামলা করতে যাচ্ছেন।

ট্রাম্প লিখেছেন, ‘জনাব মারডক বলেছিলেন, তিনি বিষয়টা সামলে নেবেন, কিন্তু স্পষ্টতই তাঁর সেই ক্ষমতা ছিল না। বরং তাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে একটি মিথ্যা, হিংসাত্মক ও মানহানিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শিগগিরই ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, নিউজ কর্প এবং জনাব মারডকের বিরুদ্ধে মামলা করবেন।’

ট্রাম্প সংবাদমাধ্যমটিকে সতর্ক করে বলেছিলেন, তাদের এখন সত্য বলা শিখতে হবে এবং এমন উৎসের ওপর ভরসা করা উচিত নয়, যেগুলোর আদৌ অস্তিত্ব আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বর্ণিত চিঠিটিতে একজন নগ্ন নারীর অবয়ব মার্কার দিয়ে আঁকা এবং টাইপরাইটারে কিছু বাক্য লেখা ছিল। চিঠির শেষে লেখা ছিল, ‘শুভ জন্মদিন—প্রতিটি দিনই যেন আরেকটি সুন্দর গোপন রহস্য হয়ে ওঠে’। ট্রাম্প দৃঢ়ভাবে দাবি করেছেন, তিনি এই চিঠি লেখেননি বা ছবিটি আঁকেননি।

জেফরি এপস্টেইন ২০১৯ সালে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বিচার চলাকালে নিউইয়র্কের একটি জেলে আত্মহত্যা করেন। তার বিরুদ্ধে অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীদের পাচার এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে সরবরাহ করার অভিযোগ ছিল। ট্রাম্পের প্রথম প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়েই এই ঘটনা ঘটে।

ট্রাম্প অবশ্য এপস্টেইনের সঙ্গে তার পুরনো সম্পর্কের জন্য আগেও সমালোচিত হয়েছেন। অনেকের অভিযোগ ছিল, ট্রাম্প প্রশাসন এপস্টেইনের অপরাধের তথ্য গোপন রাখছে। তবে চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (এফবিআই) একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এপস্টেইন কোনো গ্রাহক তালিকা রাখতেন বা ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেল করতেন এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারা আরও নিশ্চিত করেছে যে, এপস্টেইন আত্মহত্যাই করেছেন এবং এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য প্রকাশ করা হবে না।

এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার কয়েকটি মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এপস্টেইনের মামলা দেখভালকারী একজন কেন্দ্রীয় কৌঁসুলিকে হঠাৎ বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কোমির মেয়ে, যিনি ট্রাম্পের একজন কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। এই ঘটনা নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

অপরদিকে, এই ঘটনা ট্রাম্প ও মারডকের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন একটি অধ্যায়ও হয়ে উঠেছে। মারডকের মালিকানাধীন ফক্স নিউজ ট্রাম্পকে সমর্থন করে এবং তাঁর দলের অনেক সদস্যও ওই চ্যানেল থেকে এসেছেন। নিউইয়র্কের ট্যাবলয়েড সংস্কৃতি থেকে দুজনেরই উত্থান এবং সম্প্রতি তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয়। ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প তাঁকে ওভাল অফিসে আমন্ত্রণ জানিয়ে ‘কিংবদন্তি’ এবং ‘অসাধারণ একজন ব্যক্তি’ বলে প্রশংসা করেন।