আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজের প্রয়োজন পড়ে। তেমনি একটি হচ্ছে ভিটামিন কে। রক্ত জমাট বাঁধা ও হাড়ের স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপের জন্য এই ভিটামিন অপরিহার্য। এ ছাড়া ভিটামিন কে শরীরের আরো বিভিন্ন কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ভিটামিন কে কেন প্রয়োজন-
রক্ত জমাট বাঁধা : শরীরে কোনো কাটা বা আঘাতের পর রক্তপাত থামাতে কিছু প্রোটিন কাজ করে। সেগুলোর সক্রিয়তায় ভিটামিন কে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
হাড়ের স্বাস্থ্য : এই ভিটামিন অস্টিওক্যালসিন নামক একটি প্রোটিনকে সক্রিয় করে, যা হাড়ে ক্যালসিয়াম জমাতে সাহায্য করে। ফলে হাড় থাকে শক্তিশালী ও টেকসই।
হৃদ্রোগ প্রতিরোধ : গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন কে ধমনীতে ক্যালসিয়াম জমা রোধ করে, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন কে-এর অন্যান্য উপকারী প্রভাব থাকতে পারে। যেমন কোলন, পাকস্থলী, প্রোস্টেট, মুখ ও নাকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা এবং লিভার ক্যান্সার রোগীদের স্থিতিশীল করা।
কাদের ভিটামিন ‘কে’ এর ঘাটতি থাকতে পারে-
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ভিটামিন কে-এর ঘাটতি তুলনামূলক কম দেখা যায়।
তবে যারা দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে আসছেন, পিত্ত বা অন্ত্রের রোগ রয়েছে যাদের বা যারা অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করেন, তাদের ক্ষেত্রে ঘাটতির ঝুঁকি বাড়ে।
ভিটামিন ‘কে’ এর অভাবে কী হতে পারে :
সহজেই রক্তপাত হওয়া (কাটা বা ঘা শুকাতে সময় লাগা)
নাক ও মুখ থেকে রক্ত পড়া
দাঁত ব্রাশের সময় মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
অতিরিক্ত ঋতুস্রাব
হাড় দুর্বল হওয়া বা সহজে ভেঙে যাওয়া (অস্টিওপোরোসিস)
নবজাতকের ক্ষেত্রে ইনট্রাক্রেনিয়াল ব্লিডিং বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ
কিছুক্ষেত্রে ভিটামিন কে-এর অভাব হাড়ের ব্যথা, পেশি দুর্বলতা এবং ক্লান্তিও সৃষ্টি করতে পারে।
শিশু ফরমুলা ভিটামিন কে দিয়ে সমৃদ্ধ। কিন্তু বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুদেরও কয়েক সপ্তাহ ধরে ভিটামিন কে কম থাকতে পারে, যতক্ষণ না তাদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া বিকশিত হয়। এটি নবজাতকের রক্তক্ষরণজনিত রোগের কারণ হতে পারে।
শিশুদের জন্য কে ভিটামিন কে জরুরি :
নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন কে-এর ঘাটতি মারাত্মক হতে পারে। জন্মের পরপরই শিশুদের শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন কে না থাকায় ‘নিউবর্ন হেমোরেজ ডিজঅর্ডার’ দেখা দিতে পারে, যা প্রাণঘাতী হতে পারে। এজন্যই অনেক দেশে জন্মের পরপরই শিশুদের ইনজেকশন বা মুখে ভিটামিন কে সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়।
কিভাবে পর্যাপ্ত ভিটামিন কে নিশ্চিত করবেন-
দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় সবুজ শাক-সবজি রাখা উচিত।
প্রতিদিন অন্তত এক কাপ ভাপে সিদ্ধ বা হালকা রান্না করা শাক খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
যাদের হজমজনিত সমস্যা আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন কে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।
শিশুদের ক্ষেত্রে জন্মের পর হাসপাতাল থেকে দেওয়া ভিটামিন কে ইনজেকশন গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে নিতে ভিটামিন কে-এর ভূমিকা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সচেতন খাদ্যাভ্যাস ও শিশুদের সময়মতো চিকিৎসা নিশ্চিত করলেই ভিটামিন কে জনিত সমস্যাগুলো সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।