১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ

বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা অবশেষে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আশায় সংগঠিত হচ্ছেন। দীর্ঘ আট বছর ধরে আশ্রয় শিবিরে মানবেতর জীবন কাটানো এই জনগোষ্ঠী এবার তাদের অধিকার আদায়ের জন্য গড়ে তুলেছে একটি নতুন রাজনৈতিক দল—আরকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল কাউন্সিল।

এই রাজনৈতিক দলের মূল লক্ষ্য মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা এবং ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা। দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে রয়েছেন ৪০ জন, আর পুরো সংগঠনে সদস্য সংখ্যা ১০০। এর মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারের ভেতরের প্রতিনিধিরাও, যারা সরাসরি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দাবি-দাওয়া নিয়ে কাজ করছেন। রয়েছেন বাংলাদেশে অবস্থানরত ক্যাম্প নেতারা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গা অভিবাসী নেতৃবৃন্দও।

রোহিঙ্গারা বিশ্বাস করছেন, এ রাজনৈতিক দলই হতে পারে তাদের গৃহে ফেরার প্রথম বাস্তবিক পদক্ষেপ।
“আমরা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই। মরলেও নিজের মাটিতে মরব,”—বলছিলেন বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নুর নাহার, যিনি ২০১৭ সালের ভয়াবহ সেনা নির্যাতনের পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।

আট বছর কেটে গেলেও এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে পারেননি। উল্টো, সাম্প্রতিক সহিংসতা ও সেনা-অস্থিরতার কারণে গত এক মাসেই নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে।

লম্বাশিয়া ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম বলেন, “নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের কথা শুনেছি, কিন্তু বিস্তারিত জানি না। তবে সবাই চাই আমরা যেন নিরাপদে নিজেদের দেশে ফিরতে পারি।” নুর মোহাম্মদ নামের আরেকজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, “আমরা ফিরে যেতে প্রস্তুত। শুধু আমাদের অধিকারগুলো ফিরিয়ে দিতে হবে। আমাদের আর এভাবে দিন চলে না।”

রোহিঙ্গা সংকটে সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে রয়েছে উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় জনগণ। দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি তাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
“আমরা নানা সমস্যার মুখে। শুনেছি তারা নিজ দেশে ফেরার জন্য একটা রাজনৈতিক দল বানিয়েছে, সেটাকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখি,”—বলেন উখিয়ার এক স্থানীয় বাসিন্দা।

রোহিঙ্গারা এবার নিজেদের কণ্ঠস্বর আরও শক্তিশালী করে তুলতে চাইছে। ‘আরকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল কাউন্সিল’ গঠনের মাধ্যমে তারা বার্তা দিচ্ছে—তারা আর কেবল আশ্রয়প্রার্থী নয়, বরং সম্মান ও অধিকার নিয়ে নিজের ভূমিতে ফিরতে চায়। এই প্রত্যাবর্তনের পথে বাধা অসংখ্য, তবে এই প্রথম বার্তাটি অন্তত স্পষ্ট: “আমরা ফিরতে চাই। মরলেও নিজের মাটিতে মরব।”