নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিউইয়র্কে ২য় আন্তর্জাতিক লালন ও লোক উৎসব অনুষ্ঠিত

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪ | ০১:৩৮ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪ | ০১:৩৮ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
নিউইয়র্কে ২য় আন্তর্জাতিক লালন ও লোক উৎসব অনুষ্ঠিত

লালন পরিষদ ইউএসএ-র আয়োজনে নিউইয়র্কে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো আন্তর্জাতিক লালন ও লোক উৎসব। গত ২৬ অক্টোবর শনিবার নিউইয়র্কের জ্যামাইকার ম্যারি লুইস একাডেমিতে আয়োজিত এই উৎসব বেলা ২টা থেকে শুরু হয়ে অনুষ্ঠান চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। এবারের উৎসবে বাংলাদেশ, ভারত, লন্ডন, কানাডা ও আমেরিকার বিভিন্ন স্টেট থেকে প্রায় ২০০ শিল্পী ও কলাকুশলী অংশ নেন।এবারের লালন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল গোল্ডেন এজ হোমকেয়ার ।

২৬ অক্টোবর শনিবার অপরাহ্নে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কিংবদন্তি শিল্পী নীনা হামিদ। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায় ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরন নবী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সংস্কৃতিসেবী লুত্‌ফুন নাহার লতা,কমরেড জাকির হোসেন, মিনহাজ আহমেদ জাবেদ, উৎসবের প্রধান উপদেষ্টা নুরল আমিন বাবু, ২য় লালন উৎসবের আহ্বায়ক আব্দুল হামিদ, সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী, চিত্রনায়িকা মন্দিরা রায়, অদিতি চক্রবর্তী,সাংস্কৃতিক সংগঠক গোপাল সান্যাল ও স্বীকৃতি বড়ুয়া, লালন উৎসবের মিডিয়া সমন্বয়ক পিনাকী তালুকদারসহ আয়োজকরা।

উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রবীণ শিল্পী নীনা হামিদ বলেন, প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতির এই নান্দনিক বিকাশ দেখে ভীষণ ভালো লাগছে। আয়োজকদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে আরো বেশি করে আমাদের বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। এবারের উৎসবমুখর ও নান্দনিক এই অনুষ্ঠানে নতুন প্রজন্মের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।’

এবারের উৎসবে বর্তমানে নিউ ইয়র্কে বসবাসরত জনপ্রিয় গুণী সঙ্গীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নীর পরিবেশনা উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করে। বিশেষত তার গানে নীনা হামিদ মুগ্ধ হয়ে তার গায়কীর ভীষণ প্রশংসা করেন। উদ্বোধনের পরপরই নীনা হামিদসহ সবাইকে পাশে রেখে মুন্নী প্রথম গেয়ে ওঠেন, ‘আমার সোনার ময়না পাখি’ গানটি। এরপর সবার অনুরোধে নীনা হামিদও এই গান গেয়ে শোনান সবাইকে। মুন্নী এবং নীনা হামিদের পরপর একই গানের পরিবেশনায় অনুষ্ঠানজুড়ে এক অন্যরকম ভালো লাগার সৃষ্টি হয়েছিল।এ ছাড়াও মুন্নী আলাদাভাবে আরো পরিবেশন করেন ‘আশা পূর্ণ হলো না’ ও ‘বকুল ফুল বকুল ফুল’ গান দুটি।

দিনাত জাহান মুন্নী বলেন, ‘আমার পরম সৌভাগ্য হলো যে আমি শ্রদ্ধেয় নীনা আপার পায়ের কাছে বসে গাইতে পেরেছি। জীবনে মাঝে মাঝে এমন কিছু সময় আসে যা বিশ্বাস করা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। আমার গান শেষ করার পর নীনা আপা আমার মাথায় হাত রেখে আমাকে আশীর্বাদ করলেন। এটা কতবড় প্রাপ্তি তা ভাষায় প্রকাশের নয়। আমি এবারই প্রথম লালন উৎসবে অংশগ্রহণ করেছি। রাত যত গভীর হচ্ছিল মানুষের উপস্থিতি যেন বেড়েই যাচ্ছিল। কেউই অনুষ্ঠান শেষ করার আগে নিজের স্থান ছেড়ে যাননি। আয়োজকদের কষ্ট সার্থক হয়েছে। তাছাড়া তরুন প্রজন্মের মধ্যে লালনের দর্শন ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এমন একটি আয়োজনের জন্য আয়োজকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা’

উৎসবে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে আরো আসেন লোকগানের জনপ্রিয় শিল্পী লায়লা। অনুষ্ঠানে সংগীতশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী, শাহ মাহবুব, আলভিন, মাইশা জেরিন এবং চিত্রনায়িকা ও নৃত্যশিল্পী মন্দিরা চক্রবর্তীর পরিবেশনা আমন্ত্রিত দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে। লন্ডন থেকে আসা অদিতি রায়ের বিশেষ আলেখ্য ‘হু এম আই’ দর্শকরাবেশ উপভোগ করেন।

এবারের লালন উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল রোড আইল্যান্ড ষ্টেট থেকে আসা মহিতোষ তালুকদার তাপস ও তার দলের বিশেষ পরিবেশনা। নিউজার্সির চন্দ্রা ব্যানার্জির তত্ত্বাবধানে সমবেত নৃত্য পরিবেশনা উৎসবটিকে এক উচ্চমাত্রায় নিয়ে যায়।

উৎসবে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে যােগ দেন দিনার মনি।

লালন উৎসবের প্রধান উপদেষ্টা নুরুল আমিন বাবু বলেন, লালন কোনো জাতিভেদ মানতেন না। তাই তিনি গেয়েছেন, ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে/লালন কয় জাতির কি রূপ দেখলাম না এ নজরে’। এরূপ সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিমুক্ত এক সর্বজনীন ভাবরসে সিক্ত বলে লালনের গান বাংলার হিন্দু-মুসলিম সবার কাছে সমান জনপ্রিয়। লালনের গান একসময় এতই জনপ্রিয় ছিল যে তা সাধারণ মানুষ ও নৌকার মাঝিমাল্লাদের মুখে মুখে শোনা যেত। এমনকি বর্তমানেও সকল মহলে এ গানের কদর বাড়ছে। লালন ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালি। যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামে পরিচিত। তিনি একাধারে একজন আধ্যাত্মিক ফকির সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক। লালনকে বাউল গানের অগ্রদূতদের অন্যতম একজন হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। তার গান উনিশ শতকে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ‘

অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন সাদিয়া খন্দকার, স্বাধীন মজুমদার ও সেঁজুতি তালুকদার।

শেয়ার করুন