(১)
হারানোর বেদনা ভেতরে ক্ষত রেখে যায়
যা জেগে থাকে দিনরাত
কখনই ঘুমায় না।
ভিতরে একটি গর্ত
একটি শূন্যতা
যা পূরণ করার জন্য পুরো একটা জীবন,
দাঁড়িয়ে থাকে কখনো ল্যামপোস্টের মতো।
পৃথিবী এখন বদলে গেছে
স্মৃতির বন্যায় অভিভূত চোখ
সে চোখে অশ্রু বয়ে যায় অবাধে
হৃদয় ভেঙ্গে যায়
একটি জীবন চিরতরে শেষ হয়ে গেল ;
পুনর্নির্মাণের সুযোগ না রেখেই।
হয়তো ফোয়ারায় আবারো গা ভেজাবে
সুখী কোনো এক পাখি
রান্নাঘরে উনুন জ্বলবে
আগুনে-ফাগুনে শীতের আড়ষ্টতা ভেঙে
জেগে উঠবে প্রকৃতি
কিন্তু যে মানুষটিকে আমরা হারিয়েছি আজ
সে আর ফিরবে না।
হয়তো আমি-আমরা আবারো স্নান সেরে
অফিস রওনা হবো
দিন শেষে হিসাব মিলাবো নুন-চালের
হেসে কুটিকুটি হবো
অশ্রু ঝরাবো
আবারো দিন শেষে একত্রিত হবো
কিন্তু যে মানুষটিকে আমরা হারিয়েছি আজ
সে আর ফিরবে না।
(২)
বলেছিল মানুষটি এ কলম থামিও না
লিখে যাও
শাণিত আঁচড়ে বদলে দাও পৃথিবীর যতো
শঙ্কা, ত্রাস, রিষ আর বিষ
বলেছিল মানুষটি থেমে যেও না
পথের শেষটা হিসাবে রাখো
পড়ে গেলে উঠে দাঁড়াও
না হলে হামাগুড়িতে সামনে বাড়ো
বলেছিল মানুষটি হতাশ হতে নেই
বিষাদ বিচ্চিন্নতা কোন সমাধান নয়
জানালার পর্দা সরিয়ে দেখো,
সূর্যের আলোয় জীবন কেমন লুটোপুটি খায়
শুধু বলেনি মানুষটি-
সময়ের সাথে যে পাতা শুকিয়ে যায়,
ঝরে পড়ে অবলীলায়;
সে আর জেগে উঠে সবুজ ছড়ায় না।
(৩)
জয়দেব তাঁর গীতগোবিন্দ কাব্যে গেঁথেছিলেন ‘পদাবলী’
বৈরাগী শহীদ কৃষকের ধানখেতে দেখেছেন
শস্যের পদাবলী
কাকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছিলেন তিনি
দূরের জলাশয়ে?
ন্যাংটা কান্নার সেই দিনে বাল্যকালের মার্বেল খোঁজা
আবদুস শহীদ,
বেলাভূমির সমুদ্র সৈকতে দেখেছিলেন হয়তো
ফুল-পাতা সবুজ হারানো বেদনায় সিক্ত-
নগ্ন গাছ্দের বাকল, শাখা
নিজের আঙিনা ছেড়ে কেন পালালে তুমি?
কেন নিরুদ্দেশ হলে?
তোমার ঝরা পাতারা আজ সত্যিই কান্না লুকায়
বৃষ্টির কোলে
আবদুস শহীদ
কেন পালালে ঝরা পাতাদের মর্মর ধ্বনীতে
আবিস্ট হয়ে?
(৪)
সে এখনো পথে হাঁটছে,
তাঁর পদচিহ্ন অবিচল এবং নিশ্চিত,
শুদ্ধ আকাঙ্ক্ষায় ভরে ওঠে তাঁর হৃদয়।
বাতাস বহন করছে তাঁর ভার
সে তোয়াক্কা না করেই চলতে থাকে
গ্রাম, শহর ধানখেত এবং সর্বত্র,
তার চোখ দূরের সূর্যের দিকে স্থির হয়ে তাকায়
তার আত্মা আজ মুক্ত, তবে যাত্রা সবে শুরু।
সে কার দিকে তাকায়? কার সাথে গল্প করে?
এই পৃথিবী তাকে বিস্ময় নিয়ে খোঁজে।
বৃষ্টি ও ঝড়ের মধ্যে দিয়ে সে এগিয়ে যায়
ঝরা পাতাদের আলিঙ্গন করে সৌহার্দ্য বাড়ায়
তাঁর পথ অপ্রকাশিত বিশ্বাসে আলোকিত,
সে জানে জীবন শুধু একটা খোঁজ মাত্র
তবু সে খোঁজে জীবন।
প্রতিটি পদক্ষেপে সে সৃষ্টি করে বিষাদ
প্রতিটি পদক্ষেপে, শত শত আত্মা জ্বলে ওঠে,
অথচ সে এগিয়ে চলেছে সেই আনন্দ খুঁজে পেতে
যা এক পরবাসী জীবন।
সে এখনো পথে হাঁটছে,
তাঁর অন্তরে একটি গান বেজে চলেছে।
বাতাস তাঁর একমাত্র ভার বহন করছে
তার যাত্রা দীর্ঘ, নিশ্চিত
অথচ তার হৃদয় আজ এত হালকা কেন?
কারণ সে জানে, সব একদিন ঠিক হয়ে যাবে।
(৫)
আমরা তোমাকে স্মরণ করবো
তোমার কাজ, তোমার কথা, তোমার সহনশীলতা
আমাদের হৃদয়ে খোদাই করা হয়ে গেছে।
তুমি আমাদের জীবন স্পর্শ করেছো ভিন্ন উপায়ে
উদারতা, ভালবাসা এবং নিঃস্বার্থ শ্রম সহ,
তুমি আমাদের শিখিয়েছো কীভাবে মৃত্যু অনিবার্য জেনেও
কবিতা লিখতে হয়
শিখিযেছো, নীরবতা মানেই ব্যর্থতা নয়।
তুমি আমাদের আশা দিয়েছো যখন সব হারিয়ে যায়
গণনা করতে শিখেয়েছো-প্রতিটি কর্ম, প্রতিটি শব্দ
যা আমরা অবলীলায় বলে যাই।
তুমি উদ্দেশ্য এবং অর্থপূর্ণ জীবন যাপন করেছো
তোমার প্রতিটি মুহুর্ত, একটি পাঠ যা জ্বলজ্বল করে
তুমি সঠিক এবং সত্যের পক্ষে ছিলে
তাই তোমার পদাঙ্ক, আমরা অনুসরণ করবো।
তুমি চলে যেতে যেতে আমাদের হৃদয় ছুঁয়েছো
রেখে গেছো এমন কিছু, যা অনুস্মারক।
তুমি শান্তিতে বিশ্রাম করো
আমরা আমাদের স্মৃতিতে, চিরকালের জন্য তোমাকে
সংরক্ষিত এবং লালিত করবো।
সুমি/পরিচয়