নিউইয়র্ক     সোমবার, ১৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০২৫-এ বিশ্ব যে ১৭ ঘটনায় নজর রাখবে

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
২০২৫-এ বিশ্ব যে ১৭ ঘটনায় নজর রাখবে

চ্যাটাম হাউস সংলাপ, বিতর্ক ও স্বাধীন নীতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান। ২০২৫ সালে বিশ্বরাজনীতিতে যেসব বিষয় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে, তাঁর একটি তালিকা করেছে তারা।

১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প কি বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি বড় চুক্তি করবেন?
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে। ট্রাম্প হয়তো ইউক্রেনের জন্য ‘ভূমির বিনিময়ে শান্তি’ চুক্তি প্রস্তাব করবেন। তবে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করবেন কি? ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য রাশিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনাও হতে পারে। বৈশ্বিক অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্য চীন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্প কি চীনা পণ্য আমদানিতে নতুন শুল্ক চাপিয়ে তাইওয়ানকে রক্ষায় মনোযোগী হবেন? নাকি চীন ও রাশিয়ার অংশীদারত্বকে কাজে লাগিয়ে ইউক্রেন নিয়ে বড় কোনো চুক্তি করবেন? এমন চুক্তি চীন, রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যকার সম্পর্ককে অস্থায়ীভাবে ভালো করতে পারে। ট্রাম্প এমন বড় পরিবর্তনের চেষ্টা করলে নিজেকে লাগামছাড়া করতে হবে।

২. এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর: আমেরিকার শুল্ক নিয়ে চীনের প্রস্তুতি
ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন এশিয়ার জন্য বাণিজ্যযুদ্ধ ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাঁর নীতি তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন সাগর ও উত্তর কোরিয়ার মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে সংঘাত বাড়াতে পারে। মিত্রদের করতে পারে হতাশ। উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে জড়িয়েছে। ট্রাম্প ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। অর্থনৈতিকভাবে, ট্রাম্পের চীনের ওপর শুল্ক আরোপ এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের কার্যকলাপের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হবে। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের নির্বাচনী পরিস্থিতিও নজরে থাকবে।

৩. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: ন্যায়সঙ্গত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাবনা
২০২৫ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক প্রচেষ্টা তীব্র হবে। প্যারিসে এআই অ্যাকশন সামিট (ফেব্রুয়ারি) নীতিমালা গঠনে ভূমিকা রাখবে। রুয়ান্ডায় (এপ্রিল) সম্মেলনে এআই নিয়ে আফ্রিকার ভূমিকা স্পষ্ট করা হবে।

আগস্টে কার্যকর হবে ইইউয়ের এআই আইন, যা বৈশ্বিক মানদণ্ড নির্ধারণ করতে পারে। জাতিসংঘের গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট উদীয়মান দেশগুলোর প্রভাব বাড়াবে। সরকারগুলোর বড় চ্যালেঞ্জ হবে সর্বজনীন কল্যাণে এআইর ব্যবহার নিশ্চিত করা।

৪. বিশ্ব অর্থনীতি: ট্রাম্প কি মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবেন?
ট্রাম্প যদি চীনা পণ্যে ৬০ শতাংশ এবং অন্যান্য পণ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, তাহলে অন্যান্য দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে পারে। এর সঙ্গে অভিবাসীদের গণনির্বাসন ও ট্রাম্পের ব্যয়বহুল নীতিমালা যুক্ত হলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে। ডিজিটাল মুদ্রা ও আর্থিক সেবা নিয়ন্ত্রণ শিথিল করতে ট্রাম্পের সমর্থন অন্যান্য দেশকে তাদের আর্থিক ব্যবস্থা সুরক্ষার পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারে।

৫. ইউরোপ: জার্মানি কি আবার ইইউর নেতৃত্ব দিতে পারবে?
জার্মানির নতুন সরকারকে দেশের অর্থনৈতিক সংকট এবং সমস্যাগ্রস্ত গাড়িশিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। পাশাপাশি ইইউর নেতৃত্ব পুনরুজ্জীবিত এবং ইউক্রেনকে সমর্থন প্রদান করতে হবে। আটলান্টিক নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান অনিশ্চিত। ইউরোপীয় নিরাপত্তা জোরদার করতে ইউরোপীয় কমিশন একটি প্রতিরক্ষা শ্বেতপত্র প্রকাশের পরিকল্পনা করছে। অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ইইউর প্রধান অগ্রাধিকার। তারা নির্ভরশীলতা কমানো, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনার প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করার কৌশল জোরদার করবে।

৬. বিশ্ব স্বাস্থ্য: আগামী মহামারির প্রস্তুতি
অতিমারি মোকাবিলায় প্রথম বৈশ্বিক চুক্তি আগামী মে মাসে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে গৃহীত হওয়ার কথা। এই চুক্তি হবে কি না এবং এর কার্যকারিতা এখনো অনিশ্চিত। জি৭ ও জি২০ ফোরামে মহামারি প্রস্তুতি কতটা গুরুত্ব পাবে?

৭. আফ্রিকা: জি২০-তে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ
২০২৫ সালে আফ্রিকা বৈশ্বিক মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা জি২০–এর সভাপতিত্ব করবে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) ও দক্ষিণ আফ্রিকার সহযোগিতা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে পারে। ২০২৪ সালে আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদের সাফল্য দেখা গেছে। তবে মোজাম্বিকের মতো সহিংসতার ঘটনা এড়িয়ে অর্জনগুলো ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ থাকবে। ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনে আফ্রিকায় মার্কিন সহায়তা কমে যেতে পারে। এতে আফ্রিকার মধ্যম ক্ষমতাধর দেশ এবং উদীয়মান অর্থনীতির জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে।

৮. রাশিয়া ও ইউক্রেন: ২০২৫ হবে ইউক্রেনের জন্য নির্ধারক বছর
পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে সহায়তা করছে না। ২০২৫ সালে দেশটি রাশিয়ার কাছে পরাজয়ের প্রান্তে যেতে পারে। পশ্চিমা সামরিক সহায়তা কমে আসা, রাশিয়ার সাহস বৃদ্ধি এবং পশ্চিমা নেতৃত্বের অভাব ইউক্রেনের পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করবে। পশ্চিমা নেতারা মনে করেন, ইউক্রেন এই যুদ্ধ জিততে পারবে না। ফলে সহায়তা কমবে, সামরিক ক্ষয়ক্ষতি ত্বরান্বিত হবে। রাশিয়া মূলত নিয়ন্ত্রণ চায়, ভূখণ্ড নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় সমঝোতার চেষ্টাও বাড়বে। এতে সংঘাত থমকে যাবে যা ইউক্রেনের ভূখণ্ড হারানোর কারণ হতে পারে। তবে এইভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া রাশিয়ার পক্ষে সম্ভব হবে সর্বোচ্চ ১৮ মাস।

৯. জলবায়ু পরিবর্তন: ব্রাজিলে কপ৩০ হবে গুরুত্বপূর্ণ
প্যারিস চুক্তি ও বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রির নিচে রাখার লক্ষ্য নিয়ে মতৈক্য দুর্বল হচ্ছে। ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপের মতো সুরক্ষামূলক নীতি ডিকার্বনাইজেশনে বাধা সৃষ্টি করবে। ইইউ অন্যান্য পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতেও শুল্ক আরোপ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসা, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ভর্তুকি হ্রাস জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার আরও বাড়াবে। নভেম্বরে ব্রাজিলের কপ ৩০ সম্মেলন হবে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো, জ্বালানি রূপান্তর এবং প্যারিস চুক্তিকে পুনর্জাগ্রত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

১০. আন্তর্জাতিক আইন: আদালত কি রাষ্ট্র ও নেতাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে?
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গত নভেম্বরে নেতানিয়াহু ও পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ২০২৫ সালে এই আদালতের ১২৪টি সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে কারা সে সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে, তা দেখার বিষয়। ট্রাম্প এবার যুক্তরাষ্ট্রের বহুপাক্ষিক চুক্তিগুলো এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তিসহ আন্তর্জাতিক চুক্তি অস্বীকার করতে পারেন। এ পরিস্থিতিতে, অন্যান্য দেশ আন্তর্জাতিক আইন রক্ষায় কী প্রতিক্রিয়া জানাবে? দক্ষিণ আফ্রিকার করা ইসরায়েল নিয়ে মামলাটি ২০২৫ সালে চলতে থাকবে।

২০২৫ সালে, আন্তর্জাতিক ন্যায় বিচার আদালত (আইসিজে) রাষ্ট্রগুলোর জলবায়ু বাধ্যবাধকতা, সাইবার অপরাধের বিচার এবং রাষ্ট্রের সাইবার নীতি নিয়ে নতুন নীতিমালা প্রকাশ করবে। বহুপক্ষীয় ব্যবস্থায় দেশগুলোর আস্থা কমছে। অনেক দেশ স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় আত্মনির্ভরশীলতা বাড়াতে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও জোটের দিকে ঝুঁকছে। ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নেতৃত্বে পরিবর্তন আসতে পারে। নেতৃত্ব কে নেবে—গ্লোবাল সাউথের দেশগুলো নাকি ইইউ, তা এখনো স্পষ্ট নয়। স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি অধিকার এড়িয়ে ওষুধপ্রাপ্তির সুযোগ দেওয়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আইনি নীতিমালার পর্যালোচনাও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হবে।

১১. প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা: ট্রাম্পের নীতির ফাঁক
মধ্যপ্রাচ্য, ইউক্রেন ও সুদানের ক্রমবর্ধমান সংঘাত অন্যান্য অঞ্চলে প্রভাব ফেলবে। ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি এবং ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোর অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ (বিশেষত ইউক্রেনকে নিয়ে) ঐক্যে প্রভাব ফেলবে। ইইউ থাকবে নিজেদের সংস্কার ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের চাপে। যুক্তরাজ্য ন্যাটোর মধ্যে বড় ভূমিকা পালন করতে এবং ইইউয়ের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে কাজ করছে। ইইউ ২০২৫ সালে প্রতিরক্ষা কৌশল পর্যালোচনা করবে। ইউকে-ইইউ প্রতিরক্ষা চুক্তি হতে পারে।

১২. মধ্যপ্রাচ্য: ইরান, সিরিয়া এবং চলমান অস্থিরতা
২০২৫ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতিতে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের অবসান অগ্রাধিকার পাবে না। ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও ইরানকে প্রতিহত করাই হবে তাদের কৌশল। ইসরায়েলের সামরিক অভিযান কমানোর জন্য নেতানিয়াহুর ওপর চাপ প্রয়োগ করা হতে পারে। তবে ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়টির রাজনৈতিক সমাধান আসবে না। সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি সমর্থনের শর্তে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনা আবার শুরু হবে। পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সাহায্য বন্ধে নতুন আলোচনা শুরু করতে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আবার কার্যকর হতে পারে।=

১৩. বিশ্বে যুক্তরাজ্যের অবস্থান: ইউরোপ না আমেরিকা?
নতুন লেবার সরকার ক্ষমতায় আসার পর, যুক্তরাজ্যের লক্ষ্য হবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক ভারসাম্যপূর্ণ রাখা। ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপীয় নিরাপত্তায় ব্রিটেনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। স্টারমার সরকার ইতিমধ্যে প্রতিবছর তিন বিলিয়ন পাউন্ড সামরিক সহায়তা ও জিডিপির দুই শতাংশ ন্যাটো প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন এই প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এই সুযোগে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে আরও শক্তিশালী নিরাপত্তাসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে।

যদি ট্রাম্প বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর শুল্ক আরোপ করেন, তাহলে যুক্তরাজ্যকে হয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে হবে, নয়তো ইউরোপের পাশে থাকতে হবে। তবে সবই নির্ভর করছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে বৈশ্বিক প্রভাব ধরে রাখার ওপর।

১৪. আফ্রিকা: জি২০-তে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ
২০২৫ সালে আফ্রিকা বৈশ্বিক মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা জি২০–এর সভাপতিত্ব করবে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) ও দক্ষিণ আফ্রিকার সহযোগিতা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে পারে। ২০২৪ সালে আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদের সাফল্য দেখা গেছে। তবে মোজাম্বিকের মতো সহিংসতার ঘটনা এড়িয়ে অর্জনগুলো ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ থাকবে। ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনে আফ্রিকায় মার্কিন সহায়তা কমে যেতে পারে। এতে আফ্রিকার মধ্যম ক্ষমতাধর দেশ এবং উদীয়মান অর্থনীতির জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে।

১৫. রাশিয়া ও ইউক্রেন: ২০২৫ হবে ইউক্রেনের জন্য নির্ধারক বছর
পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে সহায়তা করছে না। ২০২৫ সালে দেশটি রাশিয়ার কাছে পরাজয়ের প্রান্তে যেতে পারে। পশ্চিমা সামরিক সহায়তা কমে আসা, রাশিয়ার সাহস বৃদ্ধি এবং পশ্চিমা নেতৃত্বের অভাব ইউক্রেনের পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করবে। পশ্চিমা নেতারা মনে করেন, ইউক্রেন এই যুদ্ধ জিততে পারবে না। ফলে সহায়তা কমবে, সামরিক ক্ষয়ক্ষতি ত্বরান্বিত হবে। রাশিয়া মূলত নিয়ন্ত্রণ চায়, ভূখণ্ড নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় সমঝোতার চেষ্টাও বাড়বে। এতে সংঘাত থমকে যাবে যা ইউক্রেনের ভূখণ্ড হারানোর কারণ হতে পারে। তবে এইভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া রাশিয়ার পক্ষে সম্ভব হবে সর্বোচ্চ ১৮ মাস।

১৬. জলবায়ু পরিবর্তন: ব্রাজিলে কপ৩০ হবে গুরুত্বপূর্ণ
প্যারিস চুক্তি ও বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রির নিচে রাখার লক্ষ্য নিয়ে মতৈক্য দুর্বল হচ্ছে। ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপের মতো সুরক্ষামূলক নীতি ডিকার্বনাইজেশনে বাধা সৃষ্টি করবে। ইইউ অন্যান্য পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতেও শুল্ক আরোপ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসা, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ভর্তুকি হ্রাস জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার আরও বাড়াবে। নভেম্বরে ব্রাজিলের কপ ৩০ সম্মেলন হবে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো, জ্বালানি রূপান্তর এবং প্যারিস চুক্তিকে পুনর্জাগ্রত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

১৭. আন্তর্জাতিক আইন: আদালত কি রাষ্ট্র ও নেতাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে?
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গত নভেম্বরে নেতানিয়াহু ও পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ২০২৫ সালে এই আদালতের ১২৪টি সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে কারা সে সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে, তা দেখার বিষয়। ট্রাম্প এবার যুক্তরাষ্ট্রের বহুপাক্ষিক চুক্তিগুলো এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তিসহ আন্তর্জাতিক চুক্তি অস্বীকার করতে পারেন। এ পরিস্থিতিতে, অন্যান্য দেশ আন্তর্জাতিক আইন রক্ষায় কী প্রতিক্রিয়া জানাবে? দক্ষিণ আফ্রিকার করা ইসরায়েল নিয়ে মামলাটি ২০২৫ সালে চলতে থাকবে।

২০২৫ সালে, আন্তর্জাতিক ন্যায় বিচার আদালত (আইসিজে) রাষ্ট্রগুলোর জলবায়ু বাধ্যবাধকতা, সাইবার অপরাধের বিচার এবং রাষ্ট্রের সাইবার নীতি নিয়ে নতুন নীতিমালা প্রকাশ করবে।

শেয়ার করুন