১.
শেষ পেরেক ঠোকো
পুরুষ তো একজন মগ্নমন দোনাতেলো, মাইকেল্যাঞ্জেলো।
গোপন অ্যটালিয়ায় ভাঙে আর গড়ে
নক্ষত্র জ্যামিতি আলো।
কারে তুমি চাও — পিকাসোর ফার্নান্দো অলিভার,
দেবী অথবা ডোরম্যাটস;
রবীন্দ্রনাথের নারী — কুয়াশা পর্দায় ঘেরা রহস্যমুখ!
শ্যামলী বিকেল ফেলে ফিরিঙ্গি বিকিনি ঊরু —
নাকি চিরচেনা ঢেকি পাড়ানীর কালো কোমরের নদী।
পুরুষ তো একজন মগ্নমন দোনাতেলো, মাইকেল্যাঞ্জেলো।
গোপন অ্যটালিয়ায় ভাঙে আর গড়ে
নক্ষত্র জ্যামিতি আলো।
বাইরের রূপের সঙ্গে মিলে গেলে অন্তর মুখ
ভাস্কর থামায় রাঁদা, হাতুড়ি ও বাটালি।
হতে পারে সেটা একুশে বা ষাটে। কোনো অভিঘাতে
ঘটেনি তার কবন্ধ হাতে।
বিণয়ের ‘ফিরে এসো চাকা’ —
জানি সে অলীক স্বপ্নালোক নারী —
পালকের বালিশে ঘুমোয় নাদিরার রাত।
নাদিরা, নাদিরা বলে ডাকে পাগল প্রচ্ছায়া!
জানালার ব্লাইন্ড গলিয়ে ডাকে না ধানীরং শাড়ি—
ডাকে না জ্যোৎস্নার আহ্লাদি ডাক।
আধেক ভাস্কর্য ফেলে মাইকেল্যান্জেলো ছেড়েছিল ফ্লোরেন্স,
দোনাতেলো বলেছিল, শিল্প অভিসার মানে ‘নন-ফিনিতো’
চসারের ক্যান্টারবেরি টেলস কখনো হয়নি শেষ
কাফকা চেয়েছিল অসম্পূর্ণ লেখাগুলো পুড়িয়ে দেবে লোক। কী কথা লিখেছিল কৃষ্ণকথার শেষ পৃষ্ঠার শ্লোক।
ও বুড়ো, কান্দো ক্যানো!
ডিডি ও গোগোর মতো অনেক তো হলো প্রতীক্ষা
এবার শেষ পেরেক ঠোকো।
২.
কৃষ্ণকথার শেষ পৃস্টার শ্লোক
ঘুম ভাঙানোর বোধন যাবো না রাধা
এবেলা অবেলা যায়
কে কার অপেক্ষায়
উত্তরায়ণ যাবো এ ক্ষণ রাধাবর্তী দিক
পায়ে পায়ে বাঁধা, তার চরন শেকলে বাঁধা
ধরা যাবে না সোনার অঙ্গ রাধা অলৌকিক !
ডুবে যাবো নাকি তাহার যমুনা জলে
খাঁচার ভিতর অচিন আগুন পাখি
গোপন অনলে জনম দহন জ্বলে
অনার্য বীর্য রতিচোর লাম্পট্যে
অতনু আকাশ অ্যাক্রিলিকে আঁকি।
অলিভ বিকেলে হলুদ পাখির ডানা মহুয়ার ডালে নামে।
কামজ্বর টানে জাগুয়ার হাইওয়ে —
যক্ষাক্ষয়ের গমকে ধমকে বুড়ো গাড়ী টানে কবি
মলে ও মোটেলে সস্তা ঘামের দামে
ঘড়ি গোনে কোন্ বারো ভাতারী মাগী।
নগরে নগর লাজবতী বউ পাল্টায় দোর কৃষ্ণগতর
আলবৎ ছিল ক্যালিপসো ঠোঁট, যুগল উরুর কামে
ওডেসিয়াসের কামড়
পেনিলোপ জানি রাখেনি যোনি বিছানায় অক্ষত
সে ছিল শুধু পুরাণেই বিরহব্রত।
তা ধিন্
তা ধিন্ তা ধিন্
দশ বছর
পাঁচ মাস
আঠারো দিন
মলি ব্লুম, খেয়েছো দেদার রতি চোর মালাকার।
কামজ্বরে ঘোরে নগরপুরাণ কৃষ্ণ দিনমান
ডাবলিনে ঢালে নিলাজ ব্লুম নগরে বীর্যপাত।
মানিনা পুরাণ বিশুদ্ধ সংহিতা
ঢালবো গলায় বিছানায় স্কচ, ভদকার মাখামাখি
মাতোয়ালা হবো তুমুল মাতাল অসবর্ন রাত
এ কি কীর্তি সর্বনাশা সৃস্টি খুনের কথা!
তেজীয়সাং ন দোষায় বহ্ণেঃ সর্বভূজো যথা।
ঘুম ভাঙানোর বোধন যাবো না নারী
এবেলা অবেলা যায়
যতোই বাঁজুক নুপুর যাবো না মথুরা চন্দ্রালোক
যাবো না বৃন্দাবন, হবো না আকাশচারী
যাক পুড়ে যাক রাধা জ্বরে সে বাঁশির পোড়া চিতা
কৃষ্ণকথার শেষ পৃস্টার শ্লোক
কি ছিল সেখানে লেখা
জানো কি তুমি, প্রজ্ঞাপারমিতা!
৩.
যায় ভাঙ্গা তরঙ্গ
তুমি চলে গেলে
ক্র্যাচে ভর দিয়ে হেঁটে যায় রূপসার ঘাসরং জল
ভৈরব মোহনা মোড়ে বাজে মেঘ মালাহার
ভিজে যায় অঝোর যশোর রোড,
জ্যোৎস্নার ধুলো, এভেন্যু ট্রি, কৃষ্ণচূড়ার বন।
তুমি চলে গেলে বসন্ত অদর্শন।
তুমি চলে গেলে উঠে যায়, ছুটে যায় ভাঙ্গা তরঙ্গ
না-বৃষ্টির বছর যেমন উঠে যায় খরাদাহ গ্রাম
দূর নগরের কারখানা, সড়কের ভিড়ে।
একটা গ্রাম উঠে গেলে নৃতত্ত্বের ক্ষয়ক্ষতি হয়!
যেমন, দাঙ্গায় মধ্যরাতে হুন্ডির হাতে উঠে গেলে
হিন্দু বসত — ঝুলে পড়ে লুলো জাত।
৪.
তুমি চলে গেলে
রোজকার ফুটপাথ শোনে না প্রিয় পায়ের পয়ার।
একেলা শিসের বাঁশি বেজে যায় মধ্যরাতের মনোলগ—
পথগুলো পায় না চেনা পায়ের পরশ।
তুমি চলে গেলে বিকল ট্রাকের মতো থেমে যায় নদী।
হেডলাইটের কঙ্কাল জ্বলে জলহীন নদীর কল্লোল।
তুমি চলে গেলে ওঠে না শাখায় সবুজ পাতার ঢেউ
আসে না বিকল্প নারী
খোপায় ফোঁটে না গন্ধরাজ।
তুমি চলে গেলে এইসব কিছু ঘটে যায়।
তুমি চলে গেলে আমার নৃতত্ত্ব যায় পাল্টে।
তুমি চলে গেলে শেবাস্তিয়ান বাখ
তাঁতী বাজারে বাজায় রাত
মাতাল মৌতাত।
৫.
দিবি যদি দে এক প্লেট ভালোবাসা দে
ও সুজাতা,
দিবি যদি দে এক প্লেট ভালোবাসা দে
দুরছাই করিস না তোর গৌতমরে আঁচল ছায়ায় টেনে নে
গতরের জ্বরে যতো আসি পরানের খাই তারো বেশী
দে পরানের ফটক খুলে দে।
তালা ভেঙে এনেছে আমারে রাত মাতাল পূর্ণিমা
নিরঞ্জনা নদী বাঁকে রূপ-আগুনের কাছে
দে জোয়ারে পূর্ণিমা দে।
দে সোনার বাটিতে রসের ক্ষির দে
সন্ধ্যার আন্ধারে মন মজি
আলোর জুয়ায় পন করেছি খেলিব শেষ পুঁজি।
যে যায় ফেলে পাখি পালকের বালিশে চুলের চাঁদ
নিরঞ্জনা নদীতীর রূপসুজাতার কোলে – রূপমায়াজালে
দে তারে এক প্লেট দু:খ দে
দু:খের চারপাশে কালো পর্দা টেনে দে
কামনাসিপ্সালগ্নবাসনামাৎসর্যমগ্নঅনাবৃতস্তন দে
জাতকের মতো চুমুকে চুমুকে পান করি দু:খধারা
দু:খ ছাড়া কামনার জ্বর নেভে না রে !
নক্ষত্র আলোর পথ হেঁটে হেঁটে এসেছি দু:খের কাছে
ওখানেই কাম
ওখানেই প্রেম
ব্লাক হোলের মতো আলোর দোকানে তোর এসেছি অন্ধকার
নে আমারে টেনে
দে অনন্ত দু:খ দে।
মেঘের কালোয় নেই, শিকড়ে ছায়ায় নেই
জপি মন্ত্র গতর-মন্দির মোহের দিনারে
জানিরে জানি এ ভবে
যতো টোটেম ততোই টাবু হবে।
টসটসে মাগী ছাড়া কে আসে গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নার ডাকে !
৬.
মেঘপোয়াতি জলের নীলগন্ধ
চিতার চোখের মতো তীব্র হলে রাত
বনভূমি জাগে।
ব্রুকের জ্যামিতি জলে বাজে অ্যাকুয়িস্টিক গীটার
বাজে গাছের সনাটা।
বন শেকড়ের মতো ছোটে নীল বাঘিনীর দৌড়!
গাছের সবুজ চোখে কামনার চিতা জ্বলে
ডালির স্বপ্নের মতো পরাবাস্তব সখা।
তুমি কি বনের যমজ বোন
বুনো পারদের আয়না!
নগরে নেমেছে মাতাল বানর।
বৃহন্নলা নাচিতেছে নখের মুদ্রা তুলে।
নক্ষত্রের সভা আজ ম্যাপেলের বনে।
বনভূমি ভাসছে নর্ডিক আলোর আকাশ।
আলোর সিংহাসনে বসবে তুমি — এসো চন্দ্রালোক!
কথা ছিল এমন রাত্তিরে আন্ধার বনে
জ্বলবে আনগ্ন ঢেউ —
খাঁচা খুলে তুলে নেবো তুলতুল পাখি,
মেঘপোয়াতি জলের নীলগন্ধ।
বর্ষারণ্য ঝরবে অঝোর ভিজবো সবুজ অনল।
৭.
যাবো, আমি সেখানেই
যাবো, আমি সেখানেই যাবো—
যেখানে করাত ডাকাত ভাঙায় না গাছের গান
বজ্রের অসুর ভাঙায় না গাছের নামাজ
সুরের মুর্ছনা ছোটে না ঝাঁঝরা পালকের মতো ত্রস্তসুর।
যাবো, আমি সেখানেই যাবো—
যেখানে ছড়িয়ে ডানা বুনো পাখিরা ঘুমোয় রাত।
যাবো, আমি সেখানেই যাবো —
যেখানে প্রাজ্ঞ বটের ছায়া উড়ায় উড়ালি সুর—
শীষের ডগায় ওড়ে রাখালী দুপুর
বাজে বাঁশি — আড়বাঁশি
বয়াতীর গীতিরাত সঙ্গমে খোলে ধানের পরাগ।
প্রত্নচাষার মৌনভাষা বলে আসন্ন নবান্ন;
কিষানীর টলোমলো বুকে কটকতারা ধানের মতো
ছড়ায় ঘ্রাণ উনুনের ঝিকের মতো স্তন—
ধানীরং শাড়ির খোয়াবে দোলে রাত্রির জোয়ার।
যাবো, আমি সেখানেই যাবো —
রোদ আর রাত পিঠে যেখানে গুনটানা মাঝি টানে নাও —
জলডুব পাখির মতো স্নানশেষে গ্রামের বউ
বুড়ো বটের ছায়ায় ঝাড়ে চুল, ঢাকে আগুনের ঢেউ।
সেখানে ফিরে যাবো আমি যে কোন দিন
তুমি জেগে থেকো সুন্দর সকাল।
৮.
স্তরীভূত
পিছনে অনেক পিছনে এসেছি ফেলে গন্তব্য স্টেশন।
পিছনে পড়ে আছে কপালের ছোট্ট টিপের মতো
আঁধার শহর। সবুজ লাজুক মেয়েটির মতো মৌনীধ্বনি দিন।
বোকা কিশোর,
কেন তুমি ব্যাটারি পার্কের টাওয়ার ভিউয়ারে রেখে চোখ
স্ট্যাচ্যু অব লিবার্টির বদলে খুঁজেছিলে
ফেলে আসা ইস্টিশান!
এসএ/এমএএস/এমইউএ/টিএ/পরিচয়