নিউইয়র্ক     শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহারের অনুরোধ জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১১:২১ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১১:৩২ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহারের অনুরোধ জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের

জাতিসংঘের চার বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছেন৷ সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আইনিপ্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার চর্চা বন্ধ করার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা৷

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারী) এক বিবৃতিতে এসব আহ্বান জানানো হয়৷ বিবৃতি প্রদানকারী এ চার বিশেষজ্ঞ হলেন, মতপ্রকাশ ও প্রচারের অধিকার সংরক্ষণ এবং উন্নয়নবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান, মানবাধিকারকর্মীদের অবস্থাবিষয়ক বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার মেরি ললর, নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতার কারণ এবং পরিণতিবিষয়ক বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার রিম আলসেলাম এবং বিচারক ও আইনজীবীদের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার মার্গারেট স্যাটাথুয়েট৷

বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ও তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা দৃশ্যত তাঁর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত৷

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থামিয়ে দিতে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করতে ও সেলফ সেন্সরশিপের (স্ব আরোপিত বিধিনিষেধ) সংস্কৃতি উৎসাহিত করতে বিচারব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন এই বিশেষজ্ঞরা৷

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বৃহত্তম সংবাদপত্র প্রথম আলোতে কর্মরত রোজিনা ইসলাম২০২১ সালে কোভিড-১৯ অতিমারির সময় স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা এবং জরুরি চিকিৎসা উপকরণ সংগ্রহে অনিয়মের অভিযোগ বিষয়ে প্রতিবেদন করেন৷ ২০২১ সালের ১৭ মে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে যান৷ সেখানে বিনা অনুমতিতে কোভিড-১৯-এর টিকা ক্রয়সম্পর্কিত সরকারি নথিপত্রের ছবি মুঠোফোন ব্যবহার করে তোলার দায়ে তাঁকে অভিযুক্ত ও আটক করা হয়৷ পরে তাঁর বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেসি আইন ও দণ্ডবিধির আওতায় মামলা করা হয়৷

২০২২ সালের ৩ জুলাই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে৷ সেখানে বলা হয়,রোজিনার বিরুদ্ধে আনাঅভিযোগের সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ সাত মাস পর, অর্থাৎ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই আদালত পুলিশকে অভিযোগ অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন৷ পরবর্তী শুনানি ২৪ ফেব্রুয়ারি হওয়ার কথা৷

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সাংবাদিক ও সম্পাদকদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা, যা প্রায়ই ভিত্তিহীন এবং পরে সেসব মামলার মীমাংসা না করে ঝুলিয়ে রাখার বিপজ্জনক প্রবণতারই প্রতিফলন রোজিনার বিরুদ্ধে করা মামলার দীর্ঘসূত্রতার বৈশিষ্ট্য৷ তাঁদের হুমকি দেওয়া, ভয় দেখানো, হয়রানি করা ও চুপ করিয়ে দেওয়ার উপায় হিসেবে এটা ব্যবহার করা হয়৷

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থামিয়ে দিতে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করতে ও সেলফ সেন্সরশিপের (স্ব আরোপিত বিধিনিষেধ) সংস্কৃতি উৎসাহিত করতে বিচারব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন এই বিশেষজ্ঞরা৷

সরকারের প্রতি পরামর্শ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকারের উচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক আইনি কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা৷ একই সঙ্গে প্রয়োজন ঔপনিবেশিক আমলের দাপ্তরিক গোপনীয়তার আইন ও সাম্প্রতিককালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা করা৷ এ ছাড়া সরকারের উচিত, দেশের আইন ও এর প্রয়োগকে মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা৷

স্বাধীন, সেন্সরশিপবিহীন ও অবাধ গণমাধ্যমকে গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করেরোজিনা ইসলামেরবিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে এবং সাংবাদিক ও সম্পাদকদের বিরুদ্ধে ঝুলিয়ে রাখা সব মামলা তুলে নিতে বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান৷

বিশেষজ্ঞরা আরও উল্লেখ করেন, প্রায়ই জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্য, হয়রানি ও সহিংসতার মুখোমুখি হতে হয় বলে নারী সাংবাদিকেরা দ্বিগুণ ঝুঁকিতে থাকেন৷ সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের জন্য একটি নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছেন তাঁরা৷

বাংলাদেশ সরকারকে যেকোনো কারিগরি পরামর্শ ও সহযোগিতা দিতে সব সময় প্রস্তুত আছেন জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞরা বলেন, উল্লিখিত বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তাঁরা৷ – প্রথম আলো

শেয়ার করুন