নিউইয়র্ক     বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোস্তফা সারওয়ার

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে নয়

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৩ | ০১:১৫ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৭ মে ২০২৩ | ০১:২১ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে নয়

দেখে-শুনে মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ অর্জনের এক প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হবে। ২০২৩ সালের ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী (Secretary of State) অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছেন। এই নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের অবাধ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাদানকারীদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়া হবে না। শুধু তাই নয়, ভিসা দেওয়া হবে না বাধাদানকারীদের পতি অথবা পত্নী এবং ছেলে-মেয়েদেরও। ব্লিঙ্কেন টুইট করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। পরে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে এই ঘোষণাটি প্রকাশ করা হয়। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো প্রধানমন্ত্রীকে এই সিদ্ধান্তটি জানানো হয় ৩ মে, যখন তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশে এই ঘোষণাটি গোপন রাখা হয়েছিল। তিন সপ্তাহ পরে যুক্তরাষ্ট্র এটাকে ফাঁস করে দিল।

সাধারণ বাংলাদেশীদের ভিসা প্রাপ্তির ব্যাপারে এই নতুন নীতির কোনো বিরূপ প্রভাব থাকবে না। এই নীতির অধীনে, বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্তকারী ও তাদের পরিবার পরিজন ভিসা পাবে না। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে।” নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চারটি বিষয়ের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে : ১) ভোট কারচুপি, ২) ভোটারদের ভয় দেখানো, ৩) শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করা ও সংগঠিত হওয়ার অধিকারকে সহিংসতার মাধ্যমে খর্ব করা এবং ৪) ভোটার, গণমাধ্যম, রাজনৈতিক দল অথবা সুশীল সমাজের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা প্রদান।

নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত কারা করতে পারেন তারও একটি ফিরিস্তি ব্লিঙ্কেন দিয়েছেন। বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা বা কর্মচারী, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন সম্ভাব্য বাধাদানকারী হিসেবে। সবচেয়ে দৃষ্টি আকর্ষণীয় হলো ব্লিঙ্কেন সরকার ও বিরোধী দল উভয়কেই সম্ভাব্য বাধাদানকারীদের তালিকায় রেখেছেন। এই ঘোষণাটি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পর যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডোনাল্ড লু চ্যানেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রা অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের কোনো দলকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে না এবং বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক স্বার্থেই এই নতুন ভিসা নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে এই ঘোষণার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘এটা নিষেধাজ্ঞা নয়। বিএনপির উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, তারা নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের সময় যে সহিংসতা চালিয়েছে, সেটার জন্যও ভিসা বিধিনিষেধ আসতে পারে। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তাই এই ভিসা নীতিতে সরকারের উদ্বেগের কিছু নেই।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তারা বলেছে নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসা নয়। আমাদেরও এটা কথা, এই নির্বাচনে যারা বাধা দেবে তাদের অবশ্যই প্রতিহত করব।’

বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নীতিকে সাধুবাদ দিচ্ছে। মনে হচ্ছে সরকার এবং বিরোধী দল বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির বিরোধিতা থেকে সাবধানে পথ চলার দিকে ঝুঁকছে। যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রমাণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের ভিত্তি দারুণ মজবুত। পৃথিবীর কোনো প্রক্রিয়া অথবা পদ্ধতি শতভাগ নিখুঁত হতে পারে না। এই ধারণা মনে রেখেও বলা যাবে যে, যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ক্ষমতায় থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করেও ডোনাল্ড ট্রাম্প পরিবর্তন করতে পারেনি। ট্রাম্প মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছে তার নিজের দলের নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং তার দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারকদের বিরুদ্ধে। এমনকি অভ্যুত্থানের চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু গণতন্ত্রের বিজয় ঠেকাতে পারেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন চাইছেন, বিশ্বের সকল দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মতো গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করুক। সব দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। সব দেশে বেজে উঠুক গণতন্ত্রের বিজয় ডঙ্কা। একই কারণে ১৫ মে যুক্তরাষ্ট্র নাইজেরিয়ার জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। নাইজেরিয়ায় নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাদানকারীদেরও ভিসা দেয়া হবে না। ভিসা পাওয়া অধিকার নয়। এটা একটা বিশেষ ধরনের সুবিধা। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে নয়। বরং জনগণের অধিকার আদায়ের পক্ষের নীতিমালা। তাই শাহরিয়ার আলম ও ওবায়দুল কাদের এর বিপক্ষে ঘোষণা দেয়নি। অবস্থা দেখে-শুনে মনে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ অর্জনের এক প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হবে।সুত্র বিডিনিউজ২৪.কম

এসএ/এমএএস/এমইউএ/টিএ/পরিচয়

শেয়ার করুন