নিউইয়র্ক     বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিবিসি বিশ্লেষণ

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মধ্যে হতাশা, পালিয়ে যাচ্ছেন থাইল্যান্ডে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৩ | ০৯:০৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০১ জুন ২০২৩ | ০৯:০৭ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মধ্যে হতাশা, পালিয়ে যাচ্ছেন থাইল্যান্ডে

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মধ্যে দিন দিন হতাশা যেন বেড়েই চলেছে। আর এ ধারাবাহিকতায় সামরিক বাহিনীতে যোগদানেও দেখা যাচ্ছে কম আগ্রহ। বিবিসির সঙ্গে দেওয়া একটি বিশেষ সাক্ষাতকারে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। বেশ কিছু নওজোয়ান বলছেন, দুই বছর আগে ক্ষমতা দখল করে নেওয়া জান্তা সরকার ক্রমশই গণতন্ত্রের পক্ষে যারা তাদের কে দমনেই বেশি ব্যস্ত।

নে আউং নামের এক সেনা বলেন, এখন আর কেউ সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চায় না। সাধারণ মানুষ এই বাহিনীর নিষ্ঠুরতা ও অন্যায়মূলক কর্মকাণ্ডকে ঘৃণা করছেন। এর আগে একবার সেনা ঘাঁটি থেকে পালানোর চেষ্টা করলে আমাকে রাইফেলের বাট দিয়ে প্রহরা করা হয় ও দেশদ্রোহী হিসেবে আখ্যা দেয় কর্তারা। পরে দ্বিতীয়বারের প্রচেষ্টায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নেন আউং।

বর্তমানে তিনি সেইফ হোমে আরও ১০০ সৈন্যের সঙ্গে বাস করছেন যেখানে তাদের পরিবারও রয়েছেন বলে জানান তিনি। এর আগে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ক্ষমতায় নেয় সেনাবাহিনী। ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) এক তথ্যে জানায়, ১৩ হাজারেরও বেশি সেনা ও পুলিশ সদস্য পালিয়ে গেছেন। আর তা রোধ করতে বাহিনী থেকে নগদ প্রণোদনা ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছিল।

আশ্রয়কেন্দ্রে মাউং সেইন (১৯) নামক এক কিশোর সেনা তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এভাবে, আমি ১৫ বছর বয়সে সেনাবাহিনীতে যোগ দেই। আমার পরিবারের জন্য গর্বময় একটি অধ্যায় ছিল সেটি। কিন্তু স্বজাতির উপর দমন পীড়নের মাত্রা এতই বেশি ছিল যা কিনা আমার মনোবলকে ভেঙে দিচ্ছিল। অনেকটা নাটকিয়ভাবেই পোশাকের উপর লোকদের ঘৃণাও বাড়ছিল। লোকেরা সামরিক সদস্যদের কুকুর হিসেবে সম্বোধন করতেন বলেও সেইন বিবিসিকে বলেন। পরে তিনিও পালিয়ে যান বাহিনী থেকে।

এদিকে সীমান্ত অঞ্চলে গড়ে উঠা বেসামরিক মিলিশিয়া বাহিনী যা পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) নামে পরিচিত এটি পর্যায়ক্রমে পেশাগতভাবে দক্ষ সরকারি সামরিক বাহিনীর চেয়েও চৌকস ও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এমনকি সেনাবাহিনী সংগঠনটির উপর তাদের নিয়ন্ত্রণও হারিয়ে ফেলছে।

মাগওয়ে এবং সাগাইং প্রদেশের তরুণ জঙ্গিগোষ্ঠির মধ্যে বেসামরিক বাহিনীতে যোগদানের সংখ্যাও বাড়ছে। মাউং সেইন জানায়, তিনি সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন এক অভিযানে পিডিএফের এক প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে হামলা চালানোর নির্দেশ আসে। সেসময় অভিযানটি ব্যর্থ হয় ও সাত সেনা মারা যান। কারণ হিসেবে কৌশলগতভাবে পিডিএফ যথেষ্ট চৌকস বলে মনে করেন সেইন।

আরেক কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন থু আউং ১৮ বছর মিয়ানমার বিমান বাহিনীতে কাজ করেছেন। পরে ২০২২ সালে সামরিক ক্যু’র সময় তিনিও পালিয়ে আসেন। তিনি বলছেন, বাহিনীটি সবসময় আক্রমণের শিকার হয়ে থাকছে। কারণ ভাল প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মত দক্ষতা আমাদের সামরিক বাহিনীর নেই। আর তাই সেনাবাহিনী বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিমান বাহিনীকে ব্যবহার করে থাকে।

তিনি আরও বলেন, গত জানুয়ারি থেকে ২০০ বিমান হামলা চালানোর ঘটনা রয়েছে। এর মধ্যে ভয়াবহ হামলাটি ছিল সাগাইং প্রদেশের পা জি গাই গ্রামের অভিযানটি। এপ্রিলে এ হামলায় ১৭০ জনের বেশি নারী ও শিশু মারা যান। তবে বিমান বাহিনী ছাড়া সেনাবাহিনীর পক্ষে এ হামলায় সফলতা সম্ভব ছিল না বলেও উল্লেখ করেন থু আউং। আর এভাবেই নানা হতাশা ও মানবিক দ্বন্দ্বের ফলে সেনা বাহিনীতে সদস্য কমে ৩ লাখে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন এটির সংখ্যা আরও কম হতে পারে।

এদিকে এর আগে যারা বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনী থেকে পালিয়ে গেছেন তাদেরকে ফেরাতে এনইউজি ৫ লাখ ডলার (৪ লাখ ৫ হাজার ইউরো) পুরষ্কার ঘোষণা করলেও কেউ তাতে সাড়া মেলেনি। এদিকে চলতি বছর মিয়ানমার জান্তা প্রধান মিন আউ লাইং অবশ্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত টোম এন্ড্রুজের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।।

উল্লেখ্য, মস্কো মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় অস্ত্রের চালান দিয়ে থাকে। মে মাসে এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, অভ্যুত্থানের পর থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে মস্কো। আর এর মধ্যে দেশটির ১৬ টি অস্ত্র সরবরাহকারীর উপর নিষেধাজ্ঞাও আসে ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশ হতে। -সূত্র: বিবিসি

শেয়ার করুন