নিউইয়র্ক     শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাস্ট্রের অস্ত্রের বাজার চীনের দখলে

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৩ | ১০:৩৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩ | ১০:৩৫ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাস্ট্রের অস্ত্রের বাজার চীনের দখলে

সৌদি আরব ও মিসরের সঙ্গে বড় চুক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের অস্ত্রের বাজারে প্রবেশ করতে প্রস্তুত চীন। অথচ সৌদি আরব ও মিসর ঐতিহ্যগতভাবে অস্ত্রের বড় ধরনের আমদানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল। চলতি মাসে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি অ্যারাবিয়া মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিজ (এসএএমআই) চীনের তৈরি স্কাই সেইকার এফএক্স৮০ ও আড়াআড়ি ওঠানামা করতে সক্ষম (ভার্টিক্যাল টেক-অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং) সিআর৫০০ ড্রোন কেনার বিষয়ে চায়না নর্থ ইন্ডাস্ট্রিজ গ্রুপ করপোরেশনের (নরিনকো) সঙ্গে আলোচনা করছে। এ ছাড়া ক্রুজ ড্রাগন ৫ এবং এইচকিউ-১৭এই স্বল্প পাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও কিনতে চায় দেশ দুটি।

মিসরের বিমানবাহিনীও চীনের চেংডু এয়ারক্রাফ্ট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপের (সিএআইজি) জে-১০সি যুদ্ধবিমান কেনার জন্য প্রস্তুত বলে জানা গেছে। মালয়েশিয়ায় চলতি বছরের ল্যাংকাউই ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ও এরোস্পেস প্রদর্শনীতে দুই পক্ষের দেখা হবে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বলেছে, মিসর ১২জে১০সি কেনারও পরিকল্পনা করছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) ট্রেন্ডস ইন ইন্টারন্যাশনাল আর্মস ট্রান্সফার রিপোর্ট ২০২২-এ উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সৌদি আরব ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ। সেই সময়ের মধ্যে বিশ্বব্যাপী অস্ত্র আমদানির প্রায় ১০ শতাংশই আমদানি করে সৌদি আরব। আর ওই সময়ে সৌদি আরব যে অস্ত্র কেনে তার ৭৮ শতাংশই সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র।

একই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মিসর সেই সময়ের মধ্যে বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম অস্ত্র ক্রেতা ছিল, যা বৈশ্বিক অস্ত্র আমদানির ৪.৫ শতাংশের জন্য দায়ী। এই আমদানির ৩৪ শতাংশ সরবরাহ করে রাশিয়া। ২০১৮ সালে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একটি নিবন্ধে পিটার ওয়েজম্যান উল্লেখ করেন, সৌদি আরব পশ্চিমা অস্ত্র বিক্রির বিধিনিষেধের প্রভাব কমানোর জন্য তার আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক নেটওয়ার্ককে প্রশস্ত ও গভীর করতে অস্ত্র সরবরাহকারীদের বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ইয়েমেনে সৌদি আরবের সমালোচিত সামরিক হস্তক্ষেপ, ২০১৮ সালে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী ও সাংবাদিক জামাল খাশোগির নৃশংস হত্যাকাণ্ড এবং গত বছর তেলের মূল্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ওপেক প্লাসের বিরোধকে কেন্দ্র করে অস্ত্র বিক্রিতে মার্কিন বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এশিয়া টাইমসের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আফগানিস্তান থেকে বিপর্যয়কর প্রত্যাহার, ইরাক ও সিরিয়ায় পররাষ্ট্র নীতির ভুল এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মনোযোগ প্রভৃতি কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অস্ত্র সরবরাহকারীদের খুঁজছে সৌদি আরব।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সৌদি আরবের অস্ত্র কেনার বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অতিরিক্ত মূল্য এবং সৌদির অন্তর্নিহিত কৌশলগত চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিহীন বলে সমালোচিত ছিল। রাশিয়া সব সময় মিসরের পছন্দের অস্ত্র সরবরাহকারীর তালিকায় ছিল না। ব্র্যাডলি বোম্যান এবং অন্য লেখকরা ২০২১ সালের মে মাসে ডিফেন্স নিউজ নিবন্ধে উল্লেখ করেন, ২০১৩ সালে মিসরে অভ্যুত্থানের আগে মিসরের অস্ত্র আমদানির ৪৭ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্র সরবরাহ করে।

২০১৩ সালে অভ্যুত্থানের পর ওবামা প্রশাসন সম্পর্কের উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত দুই বছরের জন্য কায়রোতে বিমান, ট্যাংক ও ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে দেয়। সেই স্থবিরতার কারণে, বোম্যান ও অন্য লেখকরা উল্লেখ করেন, মিসর রাশিয়া ও ফ্রান্স থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র কেনে। যাই হোক, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা করার পর উদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার হুমকি থাকায় মিসরকে ২৪টি এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা বাদ দিতে হয়। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অস্ত্রের দুর্বল পারফরম্যান্স মিসরের মতো ক্রেতারা বিকল্প খুঁজতে চীনের প্রতি মনোযোগ দিয়েছে।

২০২০ সালের নভেম্বরে ফোর্বসের একটি নিবন্ধে সেবাস্তিয়ান রবিন লেখেন, চীনের শীর্ষ জেট, যেমন জে-১০সি ইতোমধ্যেই রাশিয়ার সেরা যুদ্ধবিমানকে ছাড়িয়ে গেছে। রবিন উল্লেখ করেন, রাশিয়ার এসইউ-৩৫-এ প্যাসিভ ইলেকট্রনিক স্ক্যান অ্যারে (পিইএসএ) রাডার রয়েছে; যা জে-১০সি এবং অন্যান্য আধুনিক চীনা বিমানের অ্যাক্টিভ ইলেকট্রনিক স্ক্যান অ্যারে (এইআরএ) থেকে নিকৃষ্ট। চীন তার দেশীয় জেট ইঞ্জিন প্রযুক্তি উন্নত করেছে এবং রাশিয়ার তুলনায় উচ্চতর ক্ষেপণাস্ত্র, আরও পরিপক্ব স্টিলথ (রাডারকে ফাঁকি দেওয়া) প্রযুক্তি এবং অস্ত্রের উন্নয়ন ঘটিয়েছে।

২০২২ সালের মে মাসে উসানাস ফাউন্ডেশনের জন্য একটি নিবন্ধে মিহির কৌলগুদ উল্লেখ করেন, চীন মধ্যপ্রাচ্যে একটি প্রধান শক্তি হতে চায়। চীন এই অঞ্চলে তার সম্পর্ক ও নেটওয়ার্ক প্রসারিত করছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে উস্কে দিচ্ছে না। চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাস্তব পথে হাঁটছে। চীন তার অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য তেল ও গ্যাস সরবরাহকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক সুরক্ষিত করতে চাইতে পারে। চীন সম্ভবত নতুন আঞ্চলিক নিরাপত্তাব্যবস্থা তৈরি করতে পারে, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আরও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে। সূত্র : এশিয়া টাইমস

এসএ/এমএএস/এমইউএ/টিএ/পরিচয়

শেয়ার করুন