নিউইয়র্ক     বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাকিয়া শিমু

ভূতের বাড়ি

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১১:৫০ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১১:৫৮ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
ভূতের বাড়ি

এবার অবশ্য ভূতেরবাড়ি’ যাবার পরিকল্পনা পাকা করলাম। এর আগে, বহুকাল আগে আমার ওঠতি বয়েসকালে- বন্ধুদের জোরাজুরিতে দলবেঁধে বারদুয়েক শক্তিসাহস যোগারযন্ত্র করে যেই এগিয়েছি,সেবাড়ির নদীর মতো দীর্ঘ দিঘিটার কাছাকাছি পৌঁছতে, চোখমুখ খিঁচিয়ে একদৌড়ে জানপ্রান নিয়ে পালিয়ে বেঁচেছি। এযাত্রায় অবশ্য স্বেচ্ছায় যাওয়া ! সেসব দিন পেরিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। বয়েসও ঢের বেড়েছে। বয়সের ভরে, ভয়ডরও ছুটে পালায়।

সাধ করে এ-কলিকালেও নাকি কেউ ভূতেরবাড়ি’ যাবার নাম মুখে আনে না; বিপদে না পড়লে ওবাড়ির গাঘেঁষা সরকারি-পথটাকেও সবাই এড়িয়ে চলে। কিন্তু ভূতের বাড়ি’ যাবার নাম মুখে আনতে, আমাদের হাসি বু’ আমার পিছু ছাড়ে না। আমি অবশ্য আমার তাগিদেই তার আবদার লোফে নিই।

বহুদিন পর গাঁয়ে ফেরা। গাঁওগেরামের চায়চেহারা পুরোটাই প্রায় বদলে গেছে। অনেকটা ছেঁড়াজুতায় নতুন লেসের মতো বেখাপ্পা হয়ে বদলে গেছে নির্দ্বিধায় বলা যায়। এঅঞ্চলের মানুষ বিদেশমুখি। তাদের হাতে কড়কড়ে বিদেশি টাকাকড়ি আসাযাওয়া করে হরহামেশা। যাবতীয় সুখের সুযোগসুবিধা ক্রমেই তাদের হাতের নাগালে ধরা দেয়। একসময় যুগের সাথে পাল্লা দিতে নিজের ঐতিহ্যকে ঝাঁটা মেড়ে বিদায় করে বিদেশি সাঁচে ঘরবাড়ি করার হাউস জন্মায়। টিনকাঠের ঐতিহ্যবাহী ঘরগুলোকে সহজেই অবজ্ঞায় সরিয়ে ফেলে, ইটবালুসুরকির আস্তরে ঢেকে ফেলে। আমার শৈশবে দেখা, দিগন্তছোঁয়া ধুধু ফসলের মাঠের পর মাঠগুলো অনিয়ন্ত্রীত স্থাপনায় ভরে গেছে। বদলে গেছে চিরচেনা গ্রামগঞ্জের সহজাত সে রূপ। আমার কাছে এখন নিজের এ গ্রাম, পুরোটাই অচেনা ঠেকে। হাসি বু’র উৎসাহে আমি বরং পথ খুঁজে পেতে ভরসা পেলাম।

হাসি বু’ কম কথার লোক। বেঁটেখাটো একহারা গড়নের শরীর। গোলগাল চেহারার মধ্যিখানে পাতিহাঁসের ঠোঁটের মতো একখানা চ্যাপ্টা নাক বড্ড বেখাপ্পা হয়ে বসে আছে। নাকের দু’পাশের কথক-চোখজোড়ার সমস্ত সৌন্দর্য খুইয়ে গেছে ওই বেঢপা নাসিকার কারণে। মাথায় এককাছি চুল। আমার ঠিকঠাক মনে পড়ে- হাসি বু’ বয়েসকালে যখন চঞ্চলাপায়ে হেঁটে বেড়াত,পিঠের ওপর বিছিয়ে থাকা খোলাচুলে, সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো কৃষ্ণকেশের ঢেউ বয়ে যেত। হাসি আর খুশি নামে তারা জোড়াবোন, এ গাঁয়ের বড়ো আদুরে মেয়ে ছিলেন। হাসি বু’র তখন বয়স তেরচৌদ্দ হবে। হুট করে, জোড়া ভেঙ্গে- নদীর ঐপাড়ের একগাঁয়ে বিয়ে হয়ে গেল।

বিয়ের চারপাঁচ বছর না যেতে ঘরে সতিন এসে জুটল। এ- ক’বছরেও যার কোলে সন্তানের দেখা নেই তার একা সংসার করার ভাগ্য নাই। অবধারিত শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে সইতে না পেড়ে, গাঁয়ে ফেরত চলে এলেন। ততদিনে খুশি বু’ চলে গেছে ভিন্গাঁয়ে, স্বামীর সংসার করতে। তার ঘরে তখন দু’সন্তান। হাসি বু’র বাবা বিছানা পেতেছে কবরে। মায়ের সাথে তার সংসার, কোনোমতে চলছিল বটে।

সেসময়ে, একদিন ভোরবেলায়- চারিপাশের সুরগোলে ঘুম ভেঙ্গে যায়। শীতের সকাল, চতুর্দিকে পইলের পোড় পড়ে অন্ধকার গেঁড়ে বসেছে। কোথায় কী হচ্ছে ঠাহর করার যোগার নাই। আধো- আঁধার ঠেলে বাইরে বের হলে মানুষের ভিড় দেখা গেল, হাসি বু’র বাড়ির দিকে। তাদের বাড়ি, আমাদের বাড়ির অদূরে হলেও- পথের মাঝখানে ঘন বাঁশঝাড়ের বাগ,তারও পরে একটা পচাডেঙ্গা- দিনেদুপুরে সেপথে ভূতুরে ভয়ে গা ছমছম করে। সেপথ পেড়িয়ে খানিকটা উঁচুনিচু মেটেপথের শেষমাথায়, তাদের বাড়ি। মানুষের ভিড়ের সাথে হাসি বু’র বাড়ি পৌঁছে দেখি, বিস্ময়কর কাণ্ড! সাদাসিধে হাসি বু’ তার মায়ের সেই কবেকার চকমকা বিয়ের শাড়িতে নতুন বউয়েরসাঁজে বাঁঁশেরমাচার বিছানায় বসে আছে। অকারণ খিলখিলেয়ে হেসে উঠছে আবার মুহূর্তে হাসি ইস্তফা দিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে। খানিক বাদেবাদে কোমর দুলিয়ে হাতপা ছড়ায় ছিটায়ে নাচেরও কমতি রাখছে না। যখন সে নাচে, ঘুঙুরের আওয়াজ চারপাশে ঝনঝনিয়ে উঠে কিন্তু তার পায়ে কোন ঘুঙুর নাই।

গ্রামসুদ্ধ লোক বলাবলি করছে, ভুতের আছর। বাঁশঝাড়ে যে ভূত থাকে ( প্রাচীন ভূত, বহুবছর ধরে বাঁশবনে বাস করছে, গাঁয়ের বেশিরভাগ লোক নাকি স্বচক্ষে দেখেছে ) সেই ভূত হাসি বু’র ওপর ভর করেছে। এরপর ভূত ছাড়াতে ভূ্তেরবাড়ির লোকের ডাক পড়ল। ভানুসাধু ( ভূতেরবাড়ির বর্তমান ভূত-কবিরাজ ) খবর পাওয়ামাত্র এসে হাজির হলেন এবং ভূত ছাড়াতে জাদুমন্ত্র শুরু করলেন।

ভানুসাধুর ভূতচিকিৎসা কীভাবে কী কাজ করল জানা গেল না। আমাদের মতো ছোটদের বাড়িছাড়া করে তবেই চিকিৎসা শুরু হল। আমরা লুকিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে অবশ্য হাসি বু’র দুর্দশা দেখতে পেলাম। চারপাঁচ জন জবরদস্ত লোক হাসি বু’কে চেপে ধরে আছে। ভানুসাধু পোড়া মরিচ আর গরম পানি তার নাকমুখে ঢেলে দিচ্ছে। আমরা এতদূর থেকেও হাসি বুর আকাশফাটা চিৎকারের সাথে একাত্ন হয়ে কেঁদেকেটে বুক ভাসালাম।

তারপর, অতপর হাসু বু’র ওপর থেকে ভূত উড়ে গিয়ে আবার বসত গড়ল বাঁশঝাড়ে। কিন্তু ভূত উড়ে গেলেও ভূতেরপলি মানুষের মনকোঠরে শক্তভাবে গেঁড়েগেঁথে বসল। হাসি বু’ আমাদের পাড়ায় তো বটেই পুরোগাঁয়ে অপাংক্তেয় হয়ে কোনোমতে টিকে রইল। তার বিয়ের কথা আসে, পাড়ারলোক ভূতেরকাণ্ড ফুলিয়েফাঁপিয়ে বলে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়। পাড়ার কারো বিয়েশাদী কিংবা শুভকাজে হাসি বু’র জায়গা হয় না। এরপর তার মাও একসময় অকালে দুনিয়া ছাড়লেন। হাসি বু’ একদম একা হয়ে গেলেন। খুশি বু’ নিজের সংসার ঠিক রাখতে হাসি বু’র সাথে সম্পর্ক ছাড়তে বাধ্য হলেন। বলতে দ্বিধা নেই নির্দোষ হাসি বু’র উপর সৃষ্টিকর্তার একপেশে ভারটা একটু বেশিই পরে গিয়েছিল। সেই থেকে একটু অস্বাভাবিক স্বভাবচিত্ত নিয়ে সে বাপের ভিটেয় রয়ে গেছে। এতবছর পরও তার মধ্যে এবং তার প্রতি সকলের আচরণে তেমন একটা পরিবর্তন দেখলাম না।

পূর্বের কথামতো হাসি বু’ বাড়ির দখিনকোণায়, আমার জন্যে অপেক্ষা করে। আমি আর হাসি বু’ ভূতেরবাড়ি রওনা হই। দূরত্ব খুব একটা না হলেও আমরা বেলা বেশখানিকটা থাকতে রওনা হয়ে যাই। আমাদের পাড়া ছেড়ে খানিকটা পথ পেরোলে চকের মাঝবরাবর একটা মেটেপথ ধরে এগুতে হবে। হাসি’বুর পায়ে জোর মন্দ নয়, আমাকে বেশখানিকটা পেছনে ফেলে, একা একা হেঁটে চলেছে। এদিকটায় এসে আর রাস্তা চিনতে পারছি না। ঢের বদলেছে সব।

অথচ একসময়ে এপথে হেঁটেছি কতো সহস্রবার! জগতের নিয়মই বুঝি তাই- সময়ের প্রবাহে মুছে যাবে পুরনো ছাপ। তারপরও বুকটা কেমন হুহু করে ওঠে। অবুঝ মন নতুনের মাঝে পুরনোকে তন্নতন্ন করে খুঁজে ফিরে! আমি বহুকাল পরে ঘরছাড়া পাওয়া অবুঝবালিকা চোখে অচেনা জগত দেখার মতো অবাক চোখে বদলে যাওয়া আমার গ্রাম দেখছি। আমরা যেপথে হেঁটে চলেছি, একসময়ে ডাকাতের ভয়ে এ তল্লাটে দিনেদুপুরে পেরিয়ে যেতে বুকেরপাটায় ভার থাকতে হতো। চোখ ধাঁধাঁনো সবুজ ধানক্ষেতের বুক চিড়ে পাহাড়ি অজগরের মতো রাস্তাটা যেয়ে ঠেকেছে শহরেযাওয়ার বড়ো রাস্তাটার সাথে। বড়োরাস্তাটা যেস্থান দখল করে এগিয়েছে, একসময়ে তাও ছিল বিলের জলের তলে। বিলের মাঝ বরাবর উঁচু একটা ডিবি মতো ছিল; সেখানে সদর্পে দুখানা জোড়া তালগাছ দাঁড়িয়ে ছিল। দিনেরবেলা ডাকাতদল তাদের ছুরিকাঁচি তালগাছের তলার ঝোপঝারে লুকিয়ে রাখত। মধ্যরাতে সেসব নিয়ে বিলের চতুর্দিকের গ্রামগুলোতে ঝাঁপিয়ে পড়ত।

রাস্তাকে ঠেস দিয়ে দুপাশে স্থানীয়-অস্থানীয়দের অযাচিত ঘরবাড়ি, চারিধারের পরিবেশের সাথে বড্ড বেখাপ্পা হয়ে গড়ে উঠেছে। স্থানে স্থানে ইট-বালু স্তূপাকারে রাখা আছে। নতুন বসতবাড়ি করার প্রস্তুতি। এ অঞ্চলের সাথে অসামঞ্জস্য ইটবালুসিমেন্টের মিশেলে হাস্যকর দালানগুলো এ অঞ্চলের চির-ঐতিহ্যের প্রহসন রচনা করেছে। অদূর ভবিষ্যতে ডাকাতবিলের চিহ্ন ধুয়েমুছে গড়ে উঠবে অগোছাল একশহর। সেশহরের মানুষগুলো জানবেও না অল্পকিছুকাল আগেও এখানে প্রাকৃতিক সভ্যতায় সয়লাব ছিল- বক সারসের অভয়ারণ্য ছিল। বিলেরজলে কিলবিল করত হাজার জাতের জলজপ্রাণী।

আমি হাসি বু’র সঙ্গ ধরতে পায়ের জোর বাড়াই কিন্তু সহজে তার নাগাল পাই না। আমরা পথে আছি বহুক্ষণ; তারপরও পথের শেষ হয় না। শীতকাল। বিকেল না পড়তে সন্ধ্যা ঘনায়। আমার ভূতেরবাড়ির দূরত্ব অজানা নয় এবং বুঝতে পারছি- হাসি বু’ আমাকে অযথা দুনিয়ায় পথ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে চলেছে।

বোসদের পাড়াটাই- ভূতেরবাড়ি। ভূতেরবাড়ি’ নামের আবডালে বোসদের নামডাক অনেকটাই ঢাকা পরে গেছে। এককালে এঅঞ্চলে বোসদের নামডাক এবং দাপট ছিল বেশ। মাটির তলে দেবে যাওয়া ইটসুরকি সে ইতিহাসের সাক্ষ্য আজও বয়ে চলেছে। একসময়ে বোসদের দাপটের মাত্রা কমে আসে। বেশিরভাগ বোস, ঘরবাড়ি ছেড়ে ওপারবাংলায় পারি দেয়। নামকামহীন দু’চারজন অবশ্য রয়ে যায় ভিটেমাটি আঁকড়ে ধরে।

সেসময়ে ভানুসাধুর দাদা, তার পরিবার নিয়ে দূরদেশ থেকে এসে বোসদের বাড়িতে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। কুড়িকক্ষের বিশাল বাড়ি। মানুষশূন্য বাড়ির চারপাশ দিনেরবেলাও হাহাকার করত। সবমিলিয়ে সহজেই আশ্রয় জুটে যায় তার। তিনি দিনে সাধুবেশে পথেঘাটে ঘুরে বেড়ান, রাতেরবেলায় বিলের জলে মাছ ধরেন। বিলেরজলে মাছ কিলবিল করে। অল্প সময়ে সালতির খোল ভরে উঠে মাছে। কিন্তু বাড়ির পথ ধরতে, মাছশূন্য নাওয়ের খোল। পরপর কয়েকদিন এরূপ ঘটনা ঘটতে থাকে। একসময়ে তিনি টের পান, এসব ভূতের কাণ্ড। ভূতে তার সালতিতে আরাম করে বসে, খোলের মাছ খেয়ে সাবার করে দিয়ে যায়। ভানুসাধুর দাদা যাদুমন্ত্র জানেন। মন্ত্রের বলে ভুতকে কাঁচের বোতলে আটক করলেন। বোতলের ভূত দেখতে অবধারিতভাবে চারগাঁয়ের লোক জমায়েত হয়, বোসবাড়িতে। সেই থেকে বোসবাড়ির নাম লোকমুখে ভূতবাড়ি হয়ে যায়।

ভানুসাধুর বাবাও ভূত নামাতে উস্তাদ ছিলেন। অত্রএলাকার ভূতের আছড়ের চিকিৎসা তিনিই করতেন। ভানুসাধু এরপর তার বাবার জায়গা পেয়ে যান, আমাদের দেশিয় অমুষ্টিমেয় রাজনীতিবিদদের মতো- উত্তরাধিকারসুত্রে । আজ অবধি সে-পেশা তিনি ধরে রেখেছেন। এলাকায় অবশ্য ভূতের দাপট আগের মতো আর নেই। ঝোপজঙ্গল নেই, পুকুরডোবা নেই। আগের মতো সারি সারি তাল- গাবের বনও নেই। ভূতের অভয়ারণ্যে জনবসতি হয়েছে। ভূতেরা বোসদের মতো দেশ ছেড়েছে। ভানুসাধুর সেরূপ বিশ্বাস এবং আমার হাসি বু’রও। মানুষের মাঝে অমানুষের সংখ্যাধিক্য ঘটেছে ঠিক তদ্রুপ ভূতদের মধ্যেও অভূতদের জয়জয়কার। যেসব ভূত অত্রএলাকায় আজও রয়ে গেছে তারা অসভ্যভূত, ভানুসাধুর বিধিনিষেধ মানছে না। লোকমুখে এও শোনা গেল,ভানুসাধুকে অবাধ্য ভূতেরা তার বাড়ির পেছনের মজাডেঙ্গার জলকাদায় নাক অবধি গেঁড়ে রেখেছিল। বর্তমানে তিনি বাঁচামরার মধ্যিখানে কোনরকমে টিকে আছেন।

দিনশেষের সূর্যটা ডুবুডুবু করছে। কুয়াশা ঘন হয়ে মাকড়শার জালের মতো ঢেকে ফেলছে শেষবিকেলের স্তিমিত, অপরিচ্ছন্ন আলোটাকে। পৌষের শেষ বলে হয়তো শীতটা কড়াভাবে গায়ে এসে লাগছে। আর কয়েক কদম পথ পেরুলে, ভূতেরবাড়ি। হাসি বু’ পুরোরাস্তায় একবারও আমার সমানে হাঁটে তো নায়-ই, একবাক্য কথাও বলেনি। আমাকে ছাড়িয়ে অনেকটা পথ এগিয়ে দ্রুতপায়ে এগিয়েছে। মূলরাস্তা হতে ঢালু পথে নেমে সরিষাক্ষেতের আলধরে অল্পক্ষণের পথ। দিঘিপাড় স্পষ্ট দেখতে পারছি। বিশাল দিঘি। একপাড় ধরে হাঁটতে শুরু করলে শেষপাড়ে পৌঁছতে আধঘণ্টা সময় বয়ে চলে যায়! দিঘিপাড় ধরে প্রাচীন খেজুরগাছগুলো আকাশ সমান উঁচু হয়ে পুরনোকে আঁকড়ে ধরে পড়ে আছে। যতবার এ বাড়ি ঢুকতে চেয়েছি,দিঘি অবধি এসে পালিয়ে গিয়েছি।

এতক্ষণে লিলিমার লালচে রং মুছে গিয়ে চারদিক কালো করে ধেয়ে আসছে আঁধার। চারপাশের কথিতসভ্যতার ছুঁয়া আদ্দিনেও ভূতেরবাড়ি অবধি পৌঁছতে পারেনি। পূর্বের মতোই এমুল্লুক ভয়ধরানো শুনশান নিরবতায় ঢেকে আছে। আচমকা আওয়াজের উৎস খুঁজতে তাকিয়ে দেখি, হাসি বু’ সরিষাক্ষেতের মধ্যিখানে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমি দৌড়ে তাকে ধরতে গেলে, একঝটকায় ছুটে যেয়ে উঁচুঢালু-দিঘিপাড় মুহূর্তে তড়তড়িয়ে বেঁয়ে উপড়ে উঠে যায়। আমি অন্ধকারে উপরে উঠার পথ হাতরে মরি। ততক্ষণে হাসি বু’ সারিবদ্ধ খেজুরগাছের আবডালে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। আমি জংলাকাটায় ভরা, ঢালু দিঘিপাড়ে খানিকটা উঠতেই পা পিছলে বারকয়েক গড়িয়ে পড়ি।

ভানুসাধুর বাপের মধ্যরাতে বাহ্যে চাপলে কুপিবাতি নিয়ে দিঘিপাড়ের বেতেরঝোপে আসে। প্রাকৃতিক কাজ সে স্বভাবমতো সেখানেই সারত। অমাবস্যার রাত, ঘুটঘুটে অন্ধকার। বুকে বল ছিল বেজায়,সেসব কিচ্ছাকাহিনি লোকমুখে এখনো ঘুরেফিরে। কুপিবাতির নিবুনিবু আলোতে চেনাপথে হাঁটতেচলতে তার মোটেও বেগ পেতে হয় না। মূলবাড়ি পেরিয়ে ঠাকুরঘর পেছনে রেখে কয়েক পা এবড়োথেবড়ো হাঁটার পর, তবেই দিঘির শুরু। সহসা কোথা থেকে এক দমকা হাওয়া এসে কুপিবাতির আলো নিভিয়ে দিয়ে গেল। অতল আঁধারে ডুবে গেল চেনা পথঘাট, সামনে এগোনোর জো নেই।

অন্ধকারে কুপি হাতড়ে খুঁজতে যেয়ে চোখ পড়ে- দিঘির দিকে। এতবড়ো দিঘিতে চিহ্নমাত্র জল নেই। পুরোটাজুড়ে বিশালাকৃতির মাঠ। সে মাঠে চড়ে বেড়াচ্ছে গরু-ছাগলের পাল। সেই কবে পরপারে চলে যাওয়া বোসদের বৃদ্ধ জ্যাঠামশাই নবীন বোস ( শেষপর্যন্ত ভিটে আঁকড়ে পড়ে থাকা একমাত্র বংশধর ) খড়েরস্তূপ থেকে একমনে খড়কুটু টেনে বাঁশেরজাকায় জড়ো করছেন। আকাশে পূর্ণিমার ঝকমকা নিশাপতি। জোসনায় ভেসে যাচ্ছে মাঠঘাট। জ্যাঠা মশাই ইশারায় তাকে কাছে ডাকেন। সে এক পা, দু’পায়ে এগিয়ে যায়। এরপরের ঘটনা আর জানা যায় নাই কারণ তার জবান আর খোলেই নাই। ভোরসকালে তাকে আধমরা হয়ে পুকুর ঘাটে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেই পড়াই পড়া, একবারে চিতায় গেল।

বহুকষ্টে আগরা গাছের কাটায় হাতপা ফুটিয়ে তবেই দিঘিপাড়ে উঠে আসি। এতসব ঝড়ঝাঁপটায় পায়ের জুতোজোড়া কোথায় রয়ে গেছে টের পাই নাই। ততক্ষণে আঁধারের পোঁছ ভালোভাবেই রাতের গায়ে পড়ে গেছে।

এ অঞ্চলে একসময় খেজুরগাছের ছড়াছড়ি ছিল, সেসব এখন অবশ্য লোকমুখের কিচ্ছাকাহিনি। আমি নিজেও বহুদিন পর এখানে সারিসারি খেজুরগাছ একসাথে দেখলাম। সাঁজেরবেলায় গাছি, গাছের আগা কেটেছুঁলে হাড়ি পেতে রেখে গেছে। টপাটপ ফোঁটায় ফোঁটায় খেজুর-রস ঝরছে হাঁড়িতে। আমি গাছের মগডালে দৃষ্টি রাখতে- কোথা থেকে একখণ্ড শক্তিশালী ঝড়োবাতাস এসে খেজুরগাছটাকে মাটির সাথে নুইয়ে দিল এবং আমি তীব্র হাওয়ার তোরে, দুষ্টছেলের হাতের মার্বেলের মতো গড়াগড়ি খেয়ে দিঘিরতলে যেয়ে পড়লাম। শীতকাল,জল শুকিয়ে হাঁটুজলে ঠেকেছে। আমি অনেকটাই জলকাদায় গেঁড়ে যাই। এরআগে হাসি বু’ আমাকে একলা রেখে চলে গেলে; আমার মধ্যে ভয় নয়, তবে উৎকণ্ঠা কাজ করছিল এবার অবশ্য ভয়আতঙ্কে পুরোদস্তুর জব্দ হয়ে পড়ি। আমি ভয়ে কুঁকড়ে ওঠে হাসি বু’ বলে, কণ্ঠের সমস্তজোর ব্যয়ে চিৎকার করে ডাকি। ঘোরসন্ধ্যবেলায় শিকলের ঝনৎকারের মতো আমার কণ্ঠ বোসদের ভগ্ন দালানকোঠায় বারকয়েক প্রতিধ্বনি হলেও হাসি বু’র কানে তা পৌঁছে না।

দৃষ্টি পড়ে- দিঘিরপাড়ে, সে পথ ধরে কেউ একজন এগিয়ে আসে! সফেদশাড়িতে বউঘোমটা টানা, সামান্য বাঁদিকে কাত এবং কুঁজো হয়ে হেঁটে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। কী অবাক কাণ্ড! দিঘির ঐমাথা থেকে পলকের ব্যবধানে আমার খুব নিকটে চলে এল। হেঁটে নাকি উড়ে এলো আমি স্পষ্ট চোখে তাকিয়ে থেকেও ধরতে পারলাম না। এতকিছুর পরও আমি তাকে দেখে কেনো যেন উচ্ছ্বসিত হলাম। নিকটে আসলে চিনলাম, আমাদের – মুড়িমাসি।

আমাদের ছোটবেলার সকালবেলায়, মুড়িমাসির মুড়ি না হলে দিনের শুরুই হতো না। প্রতিশুক্রবার সকাল হলেই মুড়িমাসি হাজির। পিঠে বয়ে নিয়ে আসত চটের বস্তাভর্তি কালাকোড়া চালের জুঁইফুলের মতো ধবধবে সাদামুড়ি। টিনের চৌকোণাজার ভর্তি করে মুড়ি দিয়ে যেতেন। মুড়িমাসির আসল নাম জানি না। কেউ কখনো জানতেও চায়নি। ছেলেবুড়ো সকলে তাকে এ নামেই ডাকত।

মুড়িমাসির পিঠে উটের মতো কুজটা, আগের মতোই আছে। সে হাত বাড়িয়ে আমাকে প্যাঁককাদা থেকে একঝটকায় টেনে তুলে আনে। আমি তার মুখটা এখনো ঠিকঠাক দেখতে পাই না। কিন্তু হাতের সেই জোড়াআঙ্গুলটা, স্পষ্ট আমার চোখে পড়ে।

মুড়িমাসির মায়ের একচোখ অন্ধ ছিল। মা তাকে মুড়িভাঁজায় সাহায্য করত। একদিন হল কী- মা তপ্ত বালুচালের মিশ্রন ঝাঁঝরে ঢালতে, সরাসরি মুড়িমাসির হাতের উপর ঢেলে দিল। হাত পুড়ে একাকার। সেসময়ে এগাঁয়ে ডা.কবিরাজ ছিল না। টোটকা সেবায় ঘা সেরে উঠলেও, দু’অঙ্গুষ্ঠ জোড়া লেগে এক হয়ে গেল। মুড়িমাসির জোড়াআঙ্গুলের উপস্থিতি আমাকে কিছুটা হলেও ভয়ডর কাটিয়ে স্বস্তি দিল।

রাতের আঁধার বাড়তে থাকলে আকাশে ঝাঁকেঝাঁকে নক্ষত্ররা বেরিয়ে আসে। আজকের আকাশটা খুব বেশি সুন্দর। সেদিকে তাকিয়ে আমি মুড়িমাসির সাথে উঠে আসি দিঘির দখিনপাড়ে। মুড়িমাসির হাতভর্তি শাঁখা-পলা, ঝমঝম শব্দ করে। আমার যদ্দুর মনে পড়ে, মুড়িমাসির স্বামী ছিল না। সাঁজগোঁজ বলতে কানে একজোড়া রূপোর পাশা দেখতাম। হাসি বু’র মতো সেও কোন কথা বলছে না। তারপরও এমন চমৎকার একরাতে সে আমাকে ভয়ঙ্কর বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে, তা ছাপিয়ে অন্যকিছু ভাবতে মন সায় দেয়না।

ঠিক সেসময়ে খসে-পড়া দেয়াল আর চক্ষুহীন কোটরের মতো পাল্লাহীন জানালা- দরজা দিয়ে বোসদের নাচঘর থেকে রাজ্যের আলো ঠিকরে পড়ে বাহিরে, ঘুঙুরের রিনিঝিনি আওয়াজও হাওয়ায় ভেসে আসে। মুড়িমাসি ঔৎসুক্য হয়ে নাচঘরের দিকে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে যান। আমিও তার পিছুপিছু যাই।

লোকমুখে শোনা যায়- বোসদের সময়ে পূজাপার্বণে কলিকাতার বিখ্যাতসব নাচেরদল এই নাচঘরে এসে নেচেগেয়ে বোসদের মন জয় করে যেত। ইতিহাস হয়ে আজও দাঁড়িয়ে বয়সের ভারে নূব্জু,পুরনো ক্ষয়ে পড়া লাল ইটসুরকির ভাঁজে ভাঁজে সেসব স্মৃতি ফিরে ফিরে কাঁদে।

একবার কলিকাতার সেরূপ খ্যাত এক নাচেরদলকে বোসবাড়িতে আমন্ত্রণ জানানো হয়, দুর্গাপূজার উৎসবকে সামনে রেখে। সেযাত্রায় মাসখানেক সে-দল এইবাড়িতে থেকে যায়। রাতভর নাচেগানের আসর বসত। বোসবাড়ির ছোটছেলে পড়াশুনা করে কলিকাতায়, সেও পুজোর বন্ধে বাড়ি আছে। বছর দুই হয় ঢাকঢোল পিটিয়ে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের সম্ভান্ত্র এক জাহাজব্যবসায়ীর একমাত্র কন্যার সাথে সে সাতপাকে বাঁধা হয়ে আছে। কিন্তু নাচদলের মাঝবয়সী একনর্তকী তার মনে ধরে যায়। জাতপাত, সাতপাকের বাঁধসাধ ভুলে সে দিনভর সে নর্তকীকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। একসময় নর্তকীদল এবাড়ি হতে বিদায় হয় কিন্তু বোসদের ছোটো ছেলে কলিকাতা ফিরে যেয়েও তার সাথে সম্পর্ক রেখে চলে। এদিকে নবপরিণীতা মনঃকষ্টে নাচঘরের লোহাকাঠের আড়ায় দড়ি বেঁধে ঝুলে পড়ে।

জাহাজব্যবসায়ী একমাত্র মেয়ের অপমৃত্যুতে যারপরান ভেঙ্গে পড়েন এবং শহরের নামকরা উকিল ধরে বোসদের বিরুদ্ধে মামলা টুকে দেন। সেসময়ে বহুল আলোচিত সে-মামলায় দুপক্ষের প্রচুর খরচাও বেরিয়ে যায়। এবং অবধারিতভাবে বোসদের নামধাম এবং ব্যবসাপাতির নিক্তি নীচের দিকে নেমে আসে। বছরঘুরে পূজাপার্বণ এলেও পূর্বেরমতো জমকালো হয়ে ওঠার অবকাশ থাকে না। নাচঘরে ঘুঙুরের শব্দহীন সেই পার্বণগুলোতে শুধু বোসদের নয় পুরোএলাকার মানুষের মনে বেদনার সুর বেজে ওঠত।

পুরুদস্তুর পাটাতনের মেঝের সেই দ্বিতল নাচঘরে শক্ত তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হল। এরপর থেকে ঘটল আরেক বিপত্তি। মাঝরাতে নাচঘর থেকে ঘুঙুরের আওয়াজ ভেসে আসে। শুধু বাড়ির লোকজন নয়, প্রতিবেশীরাও তা শুনতে পায়। বিলাপ সুরে কান্নাও। লোকমুখে চাউর হয়-ছোটবোসের বউয়ের আত্না মাঝরাতে সারাবাড়ি ঘুরঘুর করে, এবং বসত গেড়েছে নাচঘরে। সেই থেকে বাতিহীন নাচঘরের আশেপাশে কেউ ঘেঁষে না। গাছগাছড়া লতাগুল্মের নিচে দেবে আছে নাচঘর, মূলবাড়ি থেকে তা অবধারিতভাবে আলাদা হয়ে গেছে বহুকালআগে।

কিন্তু এতদিন পর নাচঘর ঝলমলে আলোর বন্যায় ভেসে যাচ্ছে। দিঘিপাড় হতে আমি স্পষ্ট দেখতে পাই- কথক নৃত্যের পেশোয়াজ জামা, চুড়িদার পাজামায় উজ্জ্বল প্রসাধন আর ভারী অলংকারে আবৃত এক নর্তকী ; একমনে নেচে চলেছে। আমি আরও একটু এগিয়ে যেতে চোখে পড়ল- হাসি বু-কে। নাচের তালে তালে সেও কোমর দোলাচ্ছে। এবারও আমি তার চেহারা স্পষ্ট দেখতে পাই না। তবে তার পোশাকআশাক আমার স্মরণে আছে। লালপেড়ে ডোরাকাটা শাড়িটায় নাকসমান ঘোমটা টানা। আমি মোহাবিষ্ট হয়ে ঘন বনজঙ্গল মাড়িয়ে প্রাচীন ক্ষয়েযাওয়া-নোনাধরা প্রাচীরের গায়ের ভেতর থেকে বহুকাল অযত্নে বেড়ে ওঠা লতাগুল্প টেনেধরে ওপাশে ঝাঁপ দিয়ে নেমে, নাচঘরের একদম নিকটে চলে আসি।

কিন্তু আমি দোরের কাছে আসতেই- ধপ করে নিভে যায় সাজঘরের সমস্ত আলোকবাতি ! খটাখট শব্দে একে একে জানালা-দরজা বন্ধ হয়ে যায়। চারদিক ডুবে যায় ঘুটঘুটে অন্ধকারে। ভেতর থেকে একদল মেয়ের সমস্বরে আর্তনাদের মতো হাসির আওয়াজ ভেসে আসে। ঘনআঁধারেও আমি ঠাহর করি- ঘনকালো বৃহদাকার একজোড়া লোমশ হাত আমার দিকে ধীরলয়ে এগিয়ে আসছে।

আমি প্রাণপণে পিছু ফিরি। অচেনা পথঘাট ভুদৌড়ে পেরিয়ে বড়ো রাস্তায় কখন উঠে এসেছি, কে জানে। খালিপা’ জঙ্গলের ঝোপঝাড়ের আঘাতে কেটেছুঁলে রক্ত ঝরতে শুরু করেছে, তার যন্ত্রণায় অসহ্য হয়ে ওঠি। গায়ের পোশাকআশাক, সেও জলকাদায় মাখামাখি। শীতরাতের জারটা ভেজাকাপড়ে যুতমতো জেঁকে বসেছে। তখনও পল্লিবিদ্যুতের রুটিনবাধা লোডশেডিং চলছিল। দূরের গ্রামগুলোতে হারিকেন-কুপিবাতির আলোক, জোনাকির আলোর মতো জ্বলজ্বল করছে। আমি চকের বুকচিড়ে পেড়িয়ে যাওয়া মেটেপথটা ধরে বাড়ির দিকে দ্রুত পায়ে হাঁটতে শুরু করি।

বাড়ি ঢুকতে হাসি বু’র সাথে মাঝদুয়ারে দেখা হয়ে যায়। ততক্ষণে পল্লিবিদ্যুত চলে এসেছে। লালপেড়ে ডোরাকাটা তাঁতের শাড়ির আঁচলটা তার মুখের ওপর টানা নয়, পিঠময় ছড়ানো- সবসময় যেমন থাকে। অভিমানে গালঠোঁট ফুলিয়ে আমার অপেক্ষায় সেই বিকেল থেকে নাকি বসে আছে! হাসি বু’র অভিযোগ- আমি তাকে সঙ্গে না নিয়ে, একা লুকিয়ে ভূতেরবাড়ি ঘুরতে চলে গেছি ! তার কথা শুনে আমি চমকানোর ক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলি!

গত বেশকদিন হয় আমার ঘুম হয় না। শরীরটা সুরাশক্তদের মতো এপাশওপাশে ঢুলতে থাকে। হাসি বু’কে পাশ কাটিয়ে আমি আমার ঘরে ঢুকে পড়ি। খুব করে ঘুমাতে হবে। মেলাটোনিন- এ মোটেও কাজ হচ্ছে না। কড়ামাত্রার গোটাদুই রিভোট্রিল খেয়ে বিছানায় গড়িয়ে পড়লাম।

শেয়ার করুন