নিউইয়র্ক     শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সাইমন মোহসিন

বিশ্ব রাজনীতিতে নির্বাচনের বছর

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৩ | ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৩ মে ২০২৩ | ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
বিশ্ব রাজনীতিতে নির্বাচনের বছর

ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি–২০ সম্মেলনে জো বাইডেন ও সি চিন পিংয়ের করমর্দন

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচন, বিশ্লেষণের কোনো শেষ নেই। এ বছরের পুরোটাই আমরা নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সংবাদ, আলোচনা দেখব। এই তো কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকার আসন্ন নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দেখতে চায়। অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও প্রেরণাদায়ক বক্তব্য। এমন আরও অনেক সংবাদ, বক্তব্য আমরা দেখব আসন্ন দিনগুলোতে। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন কেবল দেশের জন্যই নয়, আঞ্চলিক ও ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও এ নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক। একইভাবে এ বছর বিশ্বে আরও কয়েকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, কিংবা হবে যেগুলোর গুরুত্ব বিশ্বরাজনীতিতে অপরিসীম। যেমনটা ছিল গত বছর ২০২২ সালে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় রক্ষণশীল প্রার্থী উন সুক-ইয়োল অল্পতে নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন। হাঙ্গেরিতে চরম ডানপন্থি দলের প্রার্থী পুনর্নির্বাচিত হন গত বছর। গত দুই দশকে প্রথমবার কোনো ফরাসি রাষ্ট্রপতি (ম্যাকরন) পুনর্নির্বাচিত হন। ফিলিপিনসের ভোটার ১৯৮৬ সালের ক্ষমতাচ্যুত একনায়কের পুত্র ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন। অস্ট্রেলিয়াতে লিবারেল পার্টির ৯ বছরব্যাপী ক্ষমতার অবসান করে নির্বাচনে লেবার পার্টির অ্যান্থনি আলবানিজ জয়যুক্ত হন। কলম্বিয়ানরা তাদের রাষ্ট্রপতি হিসেবে এই প্রথমবার একজন বামপন্থি, সাবেক গেরিলা যোদ্ধা গুস্তাভো পেত্রোকে বেছে নেন। অ্যাঙ্গোলাতে গত বছরে ইতিহাসের সবচেয়ে স্নায়ু টানটান প্রতিযোগিতায় পিপল্স মুভমেন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব অ্যাঙ্গোলা অল্পের জন্য ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়। মাত্র দুই শতাংশের কম ভোটের পার্থক্যে কেনিয়ার উইলিয়াম রুটো জয়যুক্ত হন। ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি জায়ের বলসোনারো হাড্ডাহাড্ডি নির্বাচন প্রতিযোগিতায় সাবেক রাষ্ট্রপতি লুলা দ্য সিলভার কাছে পরাজিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন আর রিপাবলিকানরা হাউসের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় পেয়ে যান। ইসরাইলে গত চার বছরের পঞ্চমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় আর শেষের বারে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আবারও নতুন সরকার গঠন করেন।

গত বছরই উপরিউল্লিখিত নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয় আর এতে করে ভূরাজনৈতিক ও ভূআঞ্চলিক কতটা প্রভাব পড়েছে সেটা আমরা দেখতেই পাচ্ছি। কেবল শেষের ইসরাইলের নির্বাচনের ফলাফলের কথা চিন্তা করলেই সেটা পরিষ্কার হয়। ফিলিস্তিনির মানবিক অধিকার হননের সেই সাত দশক পুরোনো দুঃখগাথা যেন এখন নতুন আরেক অধ্যায়ে পতিত। যেখানে এখন ফিলিস্তিনিদের মানবিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধার্মিক অধিকার হননকে এক নতুন মাত্রা দেয়া হচ্ছে। এ নির্বাচনগুলো কেবল বিশ্বব্যাপীই ভূরাজনীতিতেই প্রভাব ফেলেনি, বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক চিন্তাধারা ও ভূরাজনীতির কৌশলগত ধারার একটি চিত্র ফুটে ওঠে। অল্প কথায় বললে, বিশ্বব্যাপী রাজনীতিতে আমরা মেরুকরণ ও ব্যক্তিত্বনির্ভর রাজনীতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকতে দেখছি। এ বিষয়ে আরও আলোচনা হয়তোবা পরে করা যাবে। তবে আপাতত আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু হলো এ বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনসমূহ এবং বিশ্বব্যাপী সেগুলোর সম্ভাব্য প্রভাব।

এ বছরও আমরা কতগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন বিশ্বে অনুষ্ঠিত হতে দেখব। ইতিমধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসে নাইজেরিয়াতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী জুন মাসে তুরস্কের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন এটি। নির্বাচনের ফলাফল যেমনটা ইউরোপ ও ন্যাটোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মুসলিম বিশ্বের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পরাশক্তিগুলোও এ নির্বাচনকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। এ নির্বাচনের ফলাফল ওয়াশিংটন থেকে মস্কো পর্যন্ত, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়াতে ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমীকরণের বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। এরদোয়ান ২০০৩ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী এবং ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালে দেশের শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রপতি পদ্ধতিতে পরিণত হয়। ২০১৮ সালে এরদোয়ান আরও শক্তিশালী, ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী হয়ে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। অনেক পণ্ডিতের মতে, এরদোয়ান আর আগের মতো তার রাজনৈতিক জাদুমন্ত্রে দেশবাসীকে মোহিত করতে পারছেন না। অর্থনীতিতে অনেক অব্যবস্থাপনার লক্ষণ পরিষ্কার। মুদ্রাস্ফীতি তুঙ্গে, আর বেকারত্বও উঁচু মাত্রায় দেখা দিয়েছে। তবে, তার সামনে দাঁড়ানোর মতো কোনো উপযুক্ত প্রার্থী ঠিক নির্ধারণ করতে পারেনি। বিরোধী দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা করছে। এ রকম দুটি জোট রয়েছে। এতে করে বিরোধী ভোট বিভাজনের আশঙ্কা রয়েছে। এতে যদি কেউ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে সর্বাধিক ভোট পাওয়া দুটি পক্ষ আবার দুই সপ্তাহ পর আরেক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে। বিরোধিরা এরদোয়ানের অনেক নীতি পরিবর্তনের কথা বলছে। বিশেষ করে এরদোয়ানের ধর্মীয় চর্চার প্রতি গুরুত্বারোপ, সামরিকশক্তি প্রভাবিত বিশ্বকূটনীতি ও স্বল্প সুদহার পরিবর্তনের কথা বলছে বিরোধিরা। এই স্বল্প সুদহারের কারণেই নাকি দেশের মুদ্রাস্ফীতি এখন চরমে। এর সঙ্গে যে যুক্তরাষ্ট্র নির্দেশিত বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা জড়িত, সেটা বিরোধিরা উপেক্ষা করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে, কামাল আতাতুর্কের পর এই প্রথম কোনো রাষ্ট্রনেতা এতটা প্রভাব ও প্রতিপত্তি অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। তার এই প্রভাব ও ইসলামী শাসনব্যবস্থার প্রতি গুরুত্বারোপ তুরস্ককে বিশ্বরাজনীতি ও ভূকৌশলগত প্রাঙ্গণে যে পরিমাণ সম্মান ও সমীহ এনে দিয়েছে, সেটা তুরস্কের সাধারণ নাগরিকদের অগোচর নয়। এরদোয়ান তুরস্কের সামরিক শক্তি ও প্রভাবের নিদর্শন- সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া ও আজারবাইজান- এই চার দেশে চারটি ভিন্ন সামরিক অভিযানের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরেছে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা স্নায়ু টানটান হবে জুন মাসের নির্বাচনে।

অক্টোবর মাসে এই উপমহাদেশে হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে সোচ্চার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে পাকিস্তানে। পাকিস্তান এখন সংকটে। বিভিন্ন দিক থেকে সংকটের সম্মুখীন দেশটি। ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশটির কোনো প্রধানমন্ত্রীর পুরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় না থাকার ধারা অব্যাহত রয়েছে। ইমরান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর চুপচাপ থাকেননি সেটা তো সবাই জানেন। তার ওপর তাকে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা অকার্যকর ও তাকে হত্যার অপচেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। তার সমর্থকরা তার জন্য আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। এ ছাড়া দেশটি অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত- ঋণে পিষ্ট দেশের আর্থিক ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যর্থ দেশের জ্বালানি খাত, তার ওপর দেশের এক-তৃতীয়াংশ বন্যা জর্জরিত। একদিকে চীন, আরেকদিকে আফগানিস্তান, অন্যদিকে ভারত- বোঝাই যাচ্ছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আঞ্চলিক ও ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যে দলই কিংবা বলা উচিত যে ব্যক্তিই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবেন আসন্ন অক্টোবরে, তার ওপর দিয়ে কী ঝড় বয়ে যাবে, সেটা কল্পনা করাও কঠিন। ইমরান যে ক্রমশ আরও পশ্চিমাবিরোধি আচরণ ও বক্তব্য দিয়ে চলেছেন সেটা তো বলা বাহুল্য। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার চেষ্টা তিনি ক্ষমতায় থাকতেই আরম্ভ করেন। একসময় তালেবানের সঙ্গে পশ্চিমাদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা পালন করা পাকিস্তান সেই অবস্থানচ্যুত হয়েছে। তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। সীমান্তে দুই বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের কারণে দুই পক্ষেই হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। চীনের সঙ্গে ইমরান খানের চেয়ে তার বিরোধী দুই দলের সঙ্গে সম্পর্কের কার্যকরী ইতিহাস রয়েছে। ইমরানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ চীনের সঙ্গে কোনোরকম রাজনৈতিক ঝামেলা উপেক্ষা করে অবকাঠামোগত বড় বড় প্রকল্প পাশ করার জন্য বেইজিংয়ে সুখ্যাত। ইমরান খান যেখানে ভারতে মুসলিমদের প্রতি চলমান বিদ্বেষ ও সহিংসতার তীব্র প্রতিবাদ ও প্রধানমন্ত্রী মোদির কঠোর সমালোচনা করেন, সেখানে শরিফের দল যতবার ক্ষমতায় ছিল, ততবারই তারা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টা চালিয়েছে। যদি দেশটিতে কোনো বিশাল ভারতবিরোধি আন্দোলনের উদ্রেক হয়, কিংবা বিশাল কোনো ঘটনা, যেমন কোনো রাজনৈতিক হত্যার কারণে বিশাল বিদ্রোহের উদ্রেক না হয়, তাহলে আপাতত পাকিস্তান নিয়ে তেমন মাথা ঘামাবে না যুক্তরাষ্ট্র।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপ্রান্তে বিশ্বের আরেকটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আর্জেন্টিনায়। অক্টোবরে এই অঞ্চলে বামপন্থি রাজনীতির নিয়তি নির্ধারণ হবে বলেই ধরে নেয়া যায়। লাতিন আমেরিকার রাজনীতি ও ভূরাজনীতিতে একবিংশ শতাব্দীতে অনেক চড়াই-উতরাই দেখা যায়। শতাব্দীর শুরুর দিকে লাতিন অঞ্চলে বামরাজনীতি শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ২০১০-এর পর থেকে সমাজতন্ত্রের পতন শুরু হয় অঞ্চলব্যাপী। ডানরাজনীতি আবারও মাথাচাড়া দেয়। আর্জেন্টিনায় ২০১৫ সালের শেষে মরিশিও মাক্রি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে দেশের এক যুগ পুরোনো কার্শার বিপ্লবের ইতি করেন যেন। আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করলে মাক্রির বিজয় সাবেক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ের বালসোনারোর পররাষ্ট্রনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই তিন নেতাই আমেরিকা মহাদেশে বামরাজনীতির পতনের ধারক ও বাহক। প্রেসিডেন্ট মাক্রি লিমা গ্রুপ ও এমইআরসিওএসইউআর (মারকুসোর) নামক দুটি জোটের সদস্য। এক কথায় এই দুই জোটের লক্ষ্য হলো ভেনেজুয়েলা এবং পরবর্তীতে কিউবাতে (উল্লেখ্য, কিউবাতেও এ বছর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে) সমাজতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার পতন। এ ছাড়া মাক্রি সরকারের কারণে এই অঞ্চলে রাশিয়া ও চীনের অনেক স্বার্থই বাধাগ্রস্ত হয়েছে। পুনর্নির্বাচিত হলে সেই বাধা রীতিমতো ক্ষতির পর্যায়ে উন্নীত হবে। ক্ষমতাসীন মাক্রি সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই শুধূ চীন ও রাশিয়াই নয়, এমনটি ইরান ও সিরিয়ার সঙ্গেও কতগুলো অর্থনৈতিক চুক্তি বাতিল করে। কারণ হিসেবে দেখানো হয় যে চুক্তিগুলো পূর্ববর্তী বামপন্থি সরকারপুষ্ট দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বে স্বাক্ষরিত হয়। মাক্রির এই সিদ্ধান্তে প্রথমবার এই অঞ্চলে শীতল যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কিছুটা শক্ত হয়। আর যুক্তরাষ্ট্রের যেখানে স্বার্থসিদ্ধি হবে, সেখানে বামপন্থিদের অবস্থান দূর্বল হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর হয়েছেও তাই। তবে, আর্জেন্টাইন জনগণের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিদ্বেষ এখনো শেষ হয়নি। সিআইএ পরিচালিত কন্ডর প্ল্যানের দরুন কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাধারা দক্ষিণ আমেরিকায় কমিউনিস্ট আদর্শ রোধের জন্য বিভিন্ন একনায়কদের ক্ষমতায়ন করে সেটা তারা ভোলেনি এখনো। এজন্য আর্জেন্টাইন ক্ষমতাকেন্দ্রে কার্শনারের প্রত্যাবর্তন যেমন আর্জেন্টাইন বামপন্থি রাজনীতির জন্য জরুরি, তেমনি বৈশ্বিক বাম আদর্শের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের নির্বাচন বিশ্ব ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা নিয়ে আমাদের অনেক আলোচনা হবে সামনে। কিন্তু উপরিউল্লিখিত নির্বাচনগুলোর গুরুত্ব যে শুধু বিশ্বব্যাপীই নয়, শুধু বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে। তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বহুমাত্রিক রূপ নিচ্ছে। আর আঞ্চলিক রাজনীতি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের বিচারে, পাকিস্তানের নির্বাচন যে আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বলাই বাহুল্য। তা ছাড়া ২০২৪ সালে, অর্থাৎ আগামী বছর, বাংলাদেশের নির্বাচনের পরই আবার কয়েকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হবে বিশ্বব্যাপী। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও ইউক্রেনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৪ সালে। আদৌ এসব দেশে নির্বাচন হবে কি না সেটা নিয়ে আলোচনার করতে সময় আছে এখনো। তবে, বিশ্বে নতুন মেরুকরণ এবং রাজনৈতিক আদর্শ ও প্রেক্ষাপটের চলমান ধারায় গত বছর ২০২২, এ বছর ২০২৩ ও আগামী বছর ২০২৪ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা মনে হয় বলার প্রয়োজন রাখে না। সাইমন মোহসিন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক। দৈনিক বাংলা-র সৌজন্যে

সাথী/পরিচয়

শেয়ার করুন