নিউইয়র্ক     শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মইনুল হোসেন

প্রধানমন্ত্রী অবাধ নির্বাচন করে প্রমাণ করুন জনগণ তাকে ভালোবাসে

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৩ | ১০:৪০ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৮ মে ২০২৩ | ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
প্রধানমন্ত্রী অবাধ নির্বাচন করে প্রমাণ করুন জনগণ তাকে ভালোবাসে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে বিদেশী সাংবাদিকরা যখনই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন এবং তাকে প্রশ্ন করেন তখনই তিনি ধারাবাহিকভাবে তাদেরকে উত্থাপিত অভিযোগগুলো প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ করেন। এরপর তার উচিত হবে নিজের যুক্তিমতো জনদাবি মেনে নিয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। প্রকৃতপক্ষে দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন যাতে মোকাবেলা করতে না হয় সেজন্য তিনি শাসনতন্ত্র পরিবর্তন করে নিয়েছেন। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি এলে শাসনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা। এটা জাতিসঙ্ঘের চার্টারেরও দাবি। সুতরাং অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টির সাথে কোনোভাবেই ব্যক্তিগত বা দলগত দাবি-দাওয়ার সম্পর্ক নেই। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে অস্বীকার করার অর্থ জনগণকে তাদের পছন্দমতো সরকার গঠন করতে না দেয়ার ষড়যন্ত্র করা। নেতার অনুকূলে ভোট প্রদান করার অর্থ হচ্ছে নেতা ও তার যোগ্যতা ও সততা অনুযায়ী তাদের সেবা করার সুযোগ লাভ। কিন্তু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে না যাতে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে এই মর্মে খোদ শাসনতন্ত্রেই পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই সত্য এতটাই প্রতিষ্ঠিত যে প্রমাণ দেখার দরকার হয় না।

ভোট ডাকাতির মাধ্যমে নির্বাচন জেতা ঠেকাতে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই। বিদেশী সরকারগুলো এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর জোর দিচ্ছে এবং বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিতে হবে এ কারণে যে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন অসম্ভব করে তোলার জন্য শাসনতন্ত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে। অবাধ নির্বাচনের শাসনতান্ত্রিক অধিকার যারা ফিরিয়ে আনতে চাইছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার পুলিশের পাশবিক শক্তি প্রয়োগ করে চলেছে এবং প্রতিদিন দলীয় রাজনীতির ভয়ঙ্কর সঙ্ঘাত প্রত্যক্ষ করতে গিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। এমনকি আইনজীবীদের পেশাগত সংগঠনের বিতর্কিত নির্বাচনী বিরোধকে উপলক্ষ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের গ্রেফতার করবার প্রশ্নেও পুলিশকে কোনো দ্বিধায় ভুগতে হয়নি। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত বা সন্দেহ পোষণের অবকাশ নেই যে বাইরের দলীয় রাজনীতির সাথে আইনজীবীদের সম্পৃক্ততাজনিত অনৈক্য সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণেও এসে পৌঁছেছে। কিন্তু যেটা লক্ষণীয় তা হচ্ছে পেশী শক্তিনির্ভর অসহিষ্ণু রাজনীতি কিভাবে দেশে বিস্তার লাভ করছে। বস্তুত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জনগণের অবাধ নির্বাচনের দাবি প্রত্যাখ্যান করার ভয়াবহ পরিণতি থেকে সব পক্ষকে রক্ষা করতে চাইছে।

নিজেদের পছন্দের কোনো সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে বা সরকার পরিবর্তনের কোনো চেষ্টা বিদেশী কোনো সরকার করছে না। তারা চাইছে জনগণের শান্তিপূর্ণ উপায়ে সরকার পরিবর্তনের অধিকার রক্ষা করতে। মানবাধিকার খর্ব করা হলে তার বিরোধিতা করা এবং মানবাধিকার রক্ষা এখন বিশ্বব্যাপী সার্বজনীন দায়িত্ব। বিরোধী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি কোনো বুদ্ধিজীবী বা বিরোধী দলগুলো তো তুলছে না। তারা চাইছে নির্বাচন সবার জন্য অবাধ ও স্বচ্ছ হোক এবং যাতে জনগণের ‘ভালোবাসার’ দল বা দলগুলো বিজয়ী হয়ে জনগণের সরকার গঠন করতে পারে।

বিশ্বের সামনে সরকারকে অসম্মান করা কিংবা জনগণকে ছোট করার কোনো প্রয়োজন নেই। অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন কি তা অন্যদের কাছ থেকে শিখতে চাইবে আমাদের জনগণ মোটেও তেমন ধরনের নির্বোধ নয়। গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য এ দেশের মানুষ চরম মূল্য দিয়েছে। কিন্তু তারা বেঈমানির শিকার হয়েছে এবং যেসব নেতাকে তারা সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেছে তারাই তাদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানই প্রধানমন্ত্রীর জোরালো দাবি ‘জনগণ তাকে ভালোবাসে’ প্রমাণে সহায়ক হবে। দেশকে অবশ্যম্ভাবী সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের হাত থেকে রক্ষার কথা তিনিই বলছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জনগণের ভালোবাসা প্রমাণ করার জন্য জনগণের ভোটের স্বাধীনতা দিতে তো তার কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।

জনগণ তাকে ভালোবাসে তার এই দাবি এবং তার যুক্তি ব্যবহার করে বিদেশী সরকারগুলো তাকে সাহায্য করতে চাইছে। বিদেশী সরকারগুলোর অবাধ নির্বাচনের দাবির জন্য তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। প্রধানমন্ত্রী নিজের যুক্তি নিজেই মেনে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে দিলেই তো দুশ্চিন্তার কারণ থাকে না। তার প্রতি জনগণের ভালোবাসা প্রমাণ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনে জনগণকে তার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার অবাধ সুযোগ দেয়া। আমাদের জনগণের শিক্ষিত অংশ অতীতের মতো ঘুমিয়ে না থেকে দেখতে চেষ্টা করুন দেশ ভয়ঙ্কর হিংসার দিকে ধাবিত হয়েছে এবং নৈরাজ্য জনগণের জানমালের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এমনটি ঘটার একমাত্র কারণ হচ্ছে দুর্নীতিগ্রস্ত ও ভ্রান্ত চিন্তাভাবনার লোকেরা মনে করেন, তারাই সর্বোত্তম জ্ঞানী।মইনুল হোসেন সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।দৈনিক নয়াদিগন্ত-র সৌজন্যে

এসএ/এমএএস/এমইউএ/টিএ/পরিচয়

শেয়ার করুন