অবশেষে জাতীয় ঋণসীমা বাড়ানোর শেষ তারিখ ৫ জুনের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অফ রিপ্রেসেন্টেটিভসের পরে সিনেটেও পাশ হলো ঋণসীমা বৃদ্ধির বিল। এই আবহে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নতুন করে ঋণ নিতে পারবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সরকার। আর এই সিদ্ধান্তের জেরে কোনোক্রমে মুখরক্ষা হলো বাইডেন প্রশাসনের। কংগ্রেসের উভয় কক্ষের সম্মতির পর বিলটি এখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আইনে পরিণত হবে। যত দ্রুত সম্ভব বিলটিকে আইনে পরিণত করতে তাতে স্বাক্ষর করবেন বাইডেন।
বিলটি পাস হওয়ায় আগামী দুই বছরের জন্য ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কোনো সীমা থাকবে না। ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ ব্যবস্থা কার্যকর থাকবে। নতুন ঋণ নিয়ে আপাতত পুরোনো ঋণ পরিশোধের কাজটাও সরকার করতে পারবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অফ রিপ্রেসেন্টেটিভসে ৩১৪-১১৭ ভোটের ব্যবধানে গৃহীত হয়েছিল এই ঋণসীমা সংক্রান্ত বিল। আর গত ১লা জুন সিনেটেও পাশ হয়েছে বিলটি। প্রস্তাবটির পক্ষে সিনেটে ৬৩ ভোট পড়ে। বিপক্ষে পড়ে ৩৬ ভোট। ১০০ আসনের সিনেটে বিলটি পাস হতে ৬০ ভোটের দরকার ছিল।
এই আবহে নয়া বিল অনুযায়ী, ঋণসীমা দুই বছরের জন্য বাড়ানো হবে ওই দেশে। এই বিল পাশ না হলে আগামী ৫ জুন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ফুরিয়ে আসত।সাম্প্রতিককালে আয়ের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বেশি ব্যয় করে থাকে। এই আবহে বিভিন্ন দেশ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের থেকে ঋণ নিয়ে থাকে মার্কিন সরকার। তবে এই ঋণ নেয়ার একটি সীমা ধার্য করা ছিল। ৩১.৪ লক্ষ কোটি ডলারের বেশি ঋণ নিতে পারবে না আমেরিকা। তবে এ বছরের শুরুতেই এই সীমা ছুঁয়ে ফেলে আমেরিকা। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ভাণ্ডারে দেখা দেয় ডলারের আকাল।
এদিকে আগামী বছরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই আবহে রাজনৈতিক কারণে কর বাড়িয়ে সরকার আয় করতে পারবে না। তবে প্রশাসন এবং অর্থনীতিকে সচল রাখতে তাই আরো অর্থের প্রয়োজন। এই আবহে রিপাবলিকানদের দ্বারস্থ হন বাইডেন। দেশের স্বার্থে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানরা মিলে এই ঋণসীমা বৃদ্ধির বিল পাশ করাল মার্কিন কংগ্রেসের দুই কক্ষেই।
উল্লেখ্য, কোভিডের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ আরো বেড়ে গিয়েছিল। এই আবহে আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে পারেনি আমেরিকা। প্রশাসনিক কাজ চালিয়ে যেতেই আমেরিকার প্রয়োজন ১.৭ হাজার কোটি ডলার। এই আবহে আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়ে আমেরিকা। তবে এর আগে বিগত ৬ দশকে এমনটা হয়েছে ৭৮ বার। প্রতিবারই রাজনৈতিক বিরোধ ভুলে একে অপরের সাথে হাত মিলিয়েছে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটরা।
এদিকে বিশ্ব বাণিজ্যের লেনদেনের ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই অর্থ পরিশোধের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের ডলার। তা সত্ত্বেও নিজেরা অর্থসংকটে পড়েছিল আমেরিকা। এই মুহূর্তে আমেরিকার মাথায় চেপে রয়েছে মোট ৩১.৮ লক্ষ কোটি ডলারের ঋণের বোঝা। জাপানের থেকে তারা সর্বোচ্চ ১.১ লক্ষ কোটি ডলারের ঋণ নিয়েছে। এদিকে চীনের কাছ থেকেও ৮৬ হাজার কোটি ডলারের ঋণ রয়েছে আমেরিকার। ভারতের থেকে নেয়া মার্কিন ঋণের পরিমাণ ২৩.২ হাজার কোটি ডলার।
বিলটি পাসের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সময়োপযোগী পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন বাইডেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘এই দ্বিদলীয় সমঝোতা আমাদের অর্থনীতি ও আমেরিকান জনগণের জন্য একটি বড় বিজয়।’ বাইডেন বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব, বিলটিকে আইনে পরিণত করতে তিনি তাতে স্বাক্ষর করবেন। পাস হওয়া বিলটিতে বলা হয়েছে, আগামী দুই বছরের জন্য ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন সরকারের কোনো সীমা থাকবে না। ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ ব্যবস্থা কার্যকর থাকবে। আপাতত যথাসময়ে ঋণ পরিশোধের কাজটাও সরকার করতে পারবে।
সুইটি/পরিচয়