যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হিসেবে রেকর্ডখাতায় নাম লেখাতে চলছেন জো বাইডেন। রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউসে নিজের ৮০তম জন্মদিন উদযাপন করতে যাচ্ছেন তিনি।
দেশটির ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নিজের ৮০তম জন্মদিন উদযাপন করছেন। তার জন্মদিনে কী কী আয়োজন থাকছে, সে সম্পর্কে এখনও হোয়াইট হাউস থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে জানা গেছে— জন্মদিন পার্টির পুরো আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছেন বাইডেনের নাতনি।
সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম এমএএনবিসিকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাইডেন। সেখানে নিজের বয়স সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে রসিকতা করে তিনি বলেন, ‘আমার কত বয়স হতে চলল, তা আমি বলতে পারছি না। এমনকি আমি সেই সংখ্যাটি উচ্চারণও করতে পারছি না।’
এর আগে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা জানিয়েছিলেন বাইডেন। যদি তিনি সেই নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান, সেক্ষেত্রে ওই বছর তিনি ৮২ বছর পূর্ণ করবেন এবং নির্বাচনে জিতে গেলে ৮৬ বছর বয়স পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকবেন।
কিন্তু এখন যে বয়স, তাতে আগামী নির্বাচনে দাঁড়ানো এবং জয়ী হলে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা এই ডেমোক্র্যাট নেতার পক্ষে সম্ভব হবে কিনা— সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে এমএএনবিসিকে বাইডেন কেবল বলেন, ‘আপনারা শুধু দেখতে থাকুন, কী হয়।’
বয়স আশি বছর হলেও বার্ধক্যজনিত তেমন কোনো শারীরিক সমস্যা নেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের। গত বছর একটি সার্বিক মেডিকেল চেকআপ করিয়েছেন তিনি। চেকআপের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্টের বয়সজনিত বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা নেই এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের জন্য যতখানি শারীরিক সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন, তা তার আছে।’
হালকা-পাতলা শারীরিক গড়নের অধিকারী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ধূমপান কিংবা মদ্যপান করেন না। ১৯৮৮ সালে অ্যানিউরিজমসে (মস্তিষ্কের রক্তবাহী নালীতে রক্ত জমে ফুলে যাওয়া) আক্রান্ত হয়ে অস্ত্রোপচার করতে হয় বাইডেনকে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত বড় কোনো শারীরিক অসুস্থতায় তার আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েস জো বাইডেনকে দেশের ‘সুপার এজারস’ দলে অন্তর্ভূক্ত করেছে। এই দলে সাধারণত সেই সব লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়—যারা আশি বছরের কাছাকাছি বা আশি পেরোনোর পরও শারীরিকভাবে কর্মক্ষম ও সুস্থ থাকেন।
মার্কিন গবেষকদের মতে, বর্তমানে বাইডেনের যে শারীরিক অবস্থা— তাতে তিনি প্রায় ৯৭ বছর বাঁচবেন বলে ধারণা করা যাচ্ছে। তবে ৯৭ বছর বয়স পর্যন্ত হাঁটাচলা করার মতো শারীরিক সক্ষমতা তার থাকবে কিনা কিংবা স্মৃতি শক্তি অটুট থাকবে কিনা— এ সম্পর্কিত কোনো ভবিষ্যদ্বাণী গবেষকরা করতে পারেননি।
কিছুদিন আগে মার্কিন আইনসভায় ভাষণ দেওয়ার আগে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘জ্যাকি কোথায়? তাকে তো দেখছি না।’ ডেমোক্র্যাটপন্থী এক আইনপ্রণেতাকে দেখতে না পেয়ে এই প্রশ্ন করেছিলেন বাইডেন। তবে যে আইনপ্রণেতার খোঁজ তিনি করছিলেন, তিনি পরলোকগত হয়েছেন কয়েক বছর আগেই।
এদিকে, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা প্রকাশের পর বাইডেনের সমালোচনা শুরু হয়েছে তার নিজের দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতেই। রুটস অ্যাকশন নামে পার্টির একটি তৃণমূল পর্যায়ের গোষ্ঠী ‘নির্বাচনে দাঁড়াবেন না জো’ (ডোন্ট রান জো) নামে প্রচারাভিযানও শুরু করেছে।
তবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নীতিনির্ধারকদের ভাষ্য, বর্তমানে পার্টিতে বাইডেনের বিকল্প হয়ে ওঠার মতো কোনো নেতা নেই। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস হয়তো বিকল্প হতে পারতেন, তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াতে হলে দলের ভেতরে ও বাইরে একজন প্রার্থীর যে জনপ্রিয়তা থাকা প্রয়োজন, তা তার নেই।