নিউইয়র্ক     শনিবার, ১২ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৭১ এ পরাজয়ের কারণ, যুদ্ধরত সৈন্যদের সংখ্যা নিয়ে পাকিস্তানে বিতর্ক চলছেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৫:৩২ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
৭১ এ পরাজয়ের কারণ, যুদ্ধরত সৈন্যদের সংখ্যা নিয়ে পাকিস্তানে বিতর্ক চলছেই

বিতর্কটি বেশ পুরনো। কিন্তু, অতি সম্প্রতি পুরনো সেই বিতর্ককেই নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছেন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সদ্য সাবেক প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া। ২০১৬ সাল থেকে দুই দফায় মোট ছয় বছর সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালনের পর গত ২৯শে নভেম্বর অবসরে যাওয়ার আগে দেশের সেনাবাহিনী নিয়ে খোলামেলাভাবে বেশকিছু কথা বলেছেন তিনি।

গত ২৩ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে বাজওয়া স্বীকার করে নেন যে, বিগত সাত দশক ধরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দেশের রাজনীতিতে ভূমিকা রেখে চলেছে যা ‘অসাংবিধানিক।’ ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ‘হাত ছাড়া হয়ে যাওয়া’ একটি ‘রাজনৈতিক ব্যর্থতা’ ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৯২ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণের কথা প্রত্যাখ্যান করে তিনি দাবি করেন, “পূর্ব পাকিস্তানের পতন সামরিক ব্যর্থতা (যেটি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়) নয়, বরং রাজনৈতিক ব্যর্থতা ছিল। যুদ্ধরত সৈন্যদের সংখ্যাও ৯২ হাজার ছিল না। সেটা ছিল মাত্র ৩৪ হাজার৷ বাকিরা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত ছিলেন।” তিনি বলেন, “ওই ৩৩ হাজার মানুষ আড়াই লাখ ভারতীয় সৈন্য এবং দুই লাখ প্রশিক্ষিত মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধাদের সাথে লড়াই করেছিল। কিন্তু, তারপরও তারা সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও বীরত্বের সাথে লড়াই করেছিল এবং অভূতপূর্ব ত্যাগ স্বীকার করেছিল।”

বাজওয়া জানান, তিনি সম্প্রতি লক্ষ্য করছেন যে, রাজনৈতিকশক্তি মিথ্যা ও মনগড়া অভিযোগ তুলে সেনাবাহিনীকে টার্গেট করছে৷ বাজওয়া বলেন, “সেনাবাহিনী সবকিছুর জবাব দিতে সক্ষম হলেও তারা নিশ্চুপ রয়েছে। (কিন্তু) সেনাবাহিনীর ধৈর্য্যেরও একটা সীমা রয়েছে।”

পূর্ব পাকিস্তান হাতছাড়া হওয়ার কারণ সামরিক নয়, ‘রাজনৈতিক ব্যর্থতা’ ছিল বলে বাজওয়া দাবি করলেও তার ঠিক এক সপ্তাহ পর পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ওই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন! শুধু তাই নয়, পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধরত সেনাদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বাজওয়ার দাবি মূলত প্রত্যাখ্যান করে দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, ওইরকম সেনাদের সংখ্যা ছিল ৯০ হাজার।

দেশব্যাপী দলের ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে গত ৩০ নভেম্বর করাচীর ‘নিশতার পার্ক র‍্যালী’তে বিলাওয়াল পিপিপি’র প্রতিষ্ঠাতা, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও নিজের নানা জুলফিকার আলী ভুট্টোর কৃতিত্ব তুলে ধরে দাবি করেন, ১৯৭১ সালে পরাজয়ের পর ভুট্টো নেতৃত্ব গ্রহণ করে ‘সংহতি নষ্ট হওয়া’ পাকিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশের ‘হারানো গৌরব’ ফিরিয়ে এনেছিলেন।

বিলাওয়াল বলেন, “যখন জুলফিকার আলী ভুট্টো সরকারের দায়িত্ব নেন তখন জনগণ সব আশা হারিয়ে ভেঙ্গে পড়েছিল, কিন্তু তিনি জাতিকে ঠিকই পুনর্গঠিত করেন এবং জনগণের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনেন। শেষ পর্যন্ত আমাদের ৯০ হাজার সেনা দেশে ফিরে আসে যারা ‘সামরিক ব্যর্থতার’ কারণে যুদ্ধবন্দি হয়েছিল। ওই ৯০ হাজার সেনা তাদের পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলিত হয়।” কেবল বিলাওয়াল ভুট্টোই নন, বাজওয়ার কথার সাথে দ্বিমত প্রকাশ করছেন অনেকেই।

বলা হয়ে থাকে, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই পাকিস্তানের রাজনীতি কখনোই প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর প্রভাব থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেনাবাহিনীই মূলত দেশ শাসন করেছে। তাছাড়া, ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সরাসরি সামরিক শাসকরাই (ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান, জেনারেল ইয়াহিয়া খান) দেশ শাসন করেছেন। সুতরাং, ১৯৭১ সালের পরাজয়কে ‘রাজনৈতিক ব্যর্থতা’ বলাকে কেবল অযৌক্তিকই নয়, সামরিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা ঢাকার অপচেষ্টা বলে মনে করছেন অনেকেই।

আরেকটি অংশ অবশ্য মনে করেন, ১৯৭১ সালে কোন রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রক্ষমতায় না থাকলেও ওই পরাজয়ে রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের ব্যর্থতা অস্বীকার করতে পারে না। তারা সাবেক সেনাপ্রধান বাজওয়ার একটি কথাকে গুরুত্বসহকারে নিচ্ছেন। ২৩ নভেম্বর বাজওয়া এটাও বলেছিলেন, বাস্তবতা হচ্ছে- আমাদের সবগুলো প্রতিষ্ঠানেরই কোনো না কোনো ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এবং নাগরিক সমাজও রয়েছে। আর, জাতি হিসেবে এগিয়ে যেতে এসব ভুল-ভ্রান্তি থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।

শেয়ার করুন