দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বর্তমান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবার মন্ত্রিত্ব হারালেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বরখাস্ত করেছেন। স্থানীয় সময় আজ বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে মমতা তাঁকে বরখাস্ত করেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বেশ কয়েকজন নারী সহযোগীর বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও স্বর্ণালংকার জব্দ হয়েছে। সর্বশেষ, তাঁর সহযোগী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের আরেকটি বাড়ি থেকে ২৯ কোটি রুপি ও ৫ কেজি পরিমাণ স্বর্ণালংকার উদ্ধার করে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট–ইডি। একের পর এক তাঁর বিভিন্ন সহযোগীর বাড়ি থেকে অর্থ উদ্ধার হওয়ার ঘটনাই তাঁর মন্ত্রিত্ব হারানোর কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারের পর বিরোধী এবং দলের মধ্যেই ক্ষোভের মুখে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত সপ্তাহে মমতা বলেছেন, ‘তিনি দুর্নীতিকে সমর্থন করেন না এবং দোষী প্রমাণিত হলে গ্রেপ্তার হওয়া মন্ত্রীকে শাস্তি দেওয়া উচিত।’ ধারণা করা হচ্ছে চাপ সামলাতেই এবং দলের ক্লিন ইমেজ বজায় রাখতেই পার্থকে বরখাস্ত করেছেন তিনি।
এদিকে, ইডি কর্মকর্তারা বলেছেন, ১৮ ঘণ্টার দীর্ঘ অভিযান শেষে আজ সকালে অর্পিতার কলকাতার বেলেঘরিয়ার বাসা থেকে ১০ ট্রাংক ভর্তি নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার জব্দ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইডি সূত্র জানিয়েছে, নগদ অর্থ গোনার জন্য নোট গণনার তিনটি মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে।
গত ২৩ জুলাই পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগের দিন অর্পিতার প্রথম বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ জব্দ করা হয়। গত সপ্তাহে ইডি কর্মকর্তারা অর্পিতার একটি বাসা থেকে ২১ কোটি ভারতীয় রুপি, বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও ২ কোটি টাকার সোনার বার উদ্ধার করেছেন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্পিতার বাসা থেকে ৪০ পৃষ্ঠার নোটসহ একটি ডায়েরিও পাওয়া গেছে। ডায়েরিটি তদন্ত কর্মকর্তাদের তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৫০ কোটি নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুটি বাসা থেকে। তদন্ত কর্মকর্তারা কিছু নথিপত্রও জব্দ করেছেন।
রাজ্যের একটি স্কুলে চাকরি কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত একটি দুর্নীতি মামলায় ইডির তদন্তের অংশ হিসেব এই অভিযান চালানো হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রী থাকার সময় সরকারি স্কুলে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কথিত অবৈধ নিয়োগে ভূমিকা রাখার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় তদন্তকারীদের বলেছেন, ‘পার্থ আমার ও অন্য এক নারীর বাসাকে একটি মিনি ব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। সেই নারীও তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু।’