যতদিন ভ্লাদিমির পুতিন প্রেসিডেন্ট থাকবেন ততদিন রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা করবেন না বলে ডিক্রি জারি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমিরি জেলেনস্কি। আর জেলেনস্কির এমন কঠিন শর্তকে রাশিয়া শান্তি আলোচনার ‘অন্তরায়’ হিসেবে দেখছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
তিনি বলেছেন, ইউক্রেন আলোচনা করার জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে এগুলো অবাস্তব। মঙ্গলবার জি-২০ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন প্রভাবশালী এ রুশ মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সব সমস্যা ইউক্রেনের দিকে, তারা খোলাখুলিভাবে আলোচনায় বসার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছে এবং শর্ত জুড়ে দিচ্ছে, যেগুলো আসলে অবাস্তব।’
পুতিনের ডানহাত খ্যাত ল্যাভরভ জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোর কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন তিনি। এছাড়া জার্মানির চ্যান্সেলর ওলফ শলৎজের কাছেও রাশিয়ার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে যুদ্ধের শুরুতে রাশিয়া-ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা কয়েকবার আলোচনায় বসেন— এরমধ্যে একবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের মধ্যস্থতায় নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছিল তারা। কিন্তু ওইসব আলোচনা থেকে কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। যদিও জাতিসংঘ ও এরদোয়ানের মধ্যস্থতায় শস্য রপ্তানি চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল দুই দেশ।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন, যতদিন ভ্লাদিমির পুতিন প্রেসিডেন্ট থাকবেন ততদিন রাশিয়ার সঙ্গে কোনো ধরনের শান্তি আলোচনা সম্ভব না। এ নিয়ে জেলেনস্কি একটি ডিক্রিও জারি করেছেন।
পুতিনের সঙ্গে জেলেনস্কির আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানানোর বিষয়টি উল্লেখ করে ল্যাভরভ বলেছেন, ‘তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো জানে…আলোচনা প্রক্রিয়া ইউক্রেনের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত, যার মধ্যে রয়েছে জেলেনস্কির ডিক্রি, যেটি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা নিষিদ্ধ করে রেখেছে।’
তিনি আরও বলেছেন, আমরা বাস্তব প্রমাণ দেখতে চাই পশ্চিমারা জেলেনস্কিকে শৃঙ্খলায় আনতে চায় এবং তাকে বোঝাতে চায় এভাবে চলতে পারে না, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে না চাওয়াটা ইউক্রেনের মানুষের স্বার্থে না।’
এদিকে এবারের জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেননি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নিজে উপস্থিত হওয়ার বদলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে পাঠিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে জি-২০ জোটের সম্মেলনে ভিডিও কলে বক্তব্য দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমিরি জেলেনস্কি। তিনি রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধে পদক্ষেপ নিতে জোট নেতাদের আহ্বান জানান।
এরপর রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা এবং যুদ্ধ বন্ধের কিছু প্রস্তাব দেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, যদি রাশিয়া সত্যিই শান্তি চুক্তি ও যুদ্ধ বন্ধ করতে চায় তাহলে —পারমাণবিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা দিতে হবে, যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে এবং যাদের জোরপূর্বক দেশান্তরে বাধ্য করা হয়েছে তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে, জাতিসংঘ সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে, ইউক্রেন থেকে রুশ সেনাদের প্রত্যাহার করতে হবে এবং শত্রুতাপূর্ণ আচরণ বন্ধ করতে হবে, বিচার নিশ্চিত করতে হবে, পরিবেশ রক্ষা করতে হবে, দ্বন্দ্ব বাড়ানো বন্ধ করতে হবে এবং সর্বশেষ যুদ্ধ বন্ধ করা হবে এটি নিশ্চিত করতে হবে। সূত্র: এএফপি