মরক্কোর ছোট্ট শহর আলনিফ। সুদৃশ্য এক মরূদ্যান ঘিরে শহরটি দাঁড়িয়ে। জনসংখ্যা চার হাজারের একটু কম। মূলত মরূদ্যানটিকে কেন্দ্র করেই জীবন চলে শহরের বাসিন্দাদের। এ উদ্যান তাদের শান্তির আশ্রয়। ধু-ধু বালুর সমুদ্রে এর সৌন্দর্যে চোখ জুড়ায়। আশপাশে বিচরণ করে বেড়ে ওঠে তাদের গবাদি পশু। তবে তাদের এ প্রিয় উদ্যান ধীরে ধীরে বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ বছর খরায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র সংকট। অনেক গাছ মরে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে মরূদ্যানের সৌন্দর্য।
মরক্কোর চতুর্থ বৃহত্তম শহর মরক্কেস থেকে ১৭০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে টিনঘির অঞ্চলে আলনিফের অবস্থান। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন এ রকম খরা আর দেখা যায়নি। জমি একেবারে শুকিয়ে গেছে। অনেক কুয়া পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। শতবর্ষ পুরোনো পাম বৃক্ষের উদ্যান শূন্য হয়ে পড়ছে।
মরূদ্যান ও এর আশপাশে ভেড়া ও ছাগল চরান হামৌ বেন আদি। তীব্র খরার কারণে তাঁর গবাদিপশু মাঠে ঘাস পাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সরকারের দেওয়া গবাদি পশুর শুকনো খাবারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। মরু শহর আলনিফে নভেম্বর মাসে সাধারণত ঠান্ডা থাকে। এ সময় বাতাস আর্দ্র থাকে ও বৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার নভেম্বরে বৃষ্টি না হওয়ায় মরক্কোর রাজা সারাদেশের মসজিদগুলোয় বিশেষ প্রার্থনার আহ্বান জানান। এটা দেশটির ঐতিহ্য। বৃষ্টি না হলে বহু বছর ধরে এ রীতি পালন করে আসছে দেশটি। এ ছাড়া আরও কিছু নিয়ম পালন করা হয়। পবিত্র কোরআনের আয়াত লেখা কাঠের স্লেট হাতে শিশুদের নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও কর্মকর্তারা র্যালি করেন। তাঁরা খরার শিকার মরূদ্যানের পাশে গিয়ে দাঁড়ান এবং নিজেদের পাপের জন্য অনুতাপ করেন। মরক্কোর ধর্মীয় নেতারা মনে করেন, মানুষের পাপের কারণে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা মোচি আহমাদ বলেন, এ মরূদ্যান শত শত বছর ধরে এ অঞ্চলের মানুষের জীবিকার উৎস। বর্তমানে এটি বিলুপ্তির হুমকিতে আছে। সবাই দেখতে পাচ্ছেন, পাম গাছগুলো মরে যাচ্ছে। আরেক বাসিন্দা মোহামেদ বোজামা জানান, গত তিন বছরে হাজারো মানুষ মরূদ্যান এলাকা ছেড়ে অন্য শহরগুলোর দিকে চলে গেছেন। বহু তরুণ ইউরোপে চলে গেছেন। মূলত খরার কারণে ত?াঁরা এলাকা ছাড়ছেন।
তবে একটু ভিন্ন কথা বলছেন হাসান বাউয়াজ্জা। তিনি বলেন, পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আলনিফের বাসিন্দাদের হাতেই। তিনি হচ্ছেন আলনিফের প্রথম বাসিন্দা, যিনি সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারের দিকে ঝুঁকেছেন। এ বিদ্যুৎ দিয়ে তিনি সেচের কাজ করতে পারছেন। হাসান মনে করেন, নতুন সেচ ব্যবস্থা চালু ও সৌরশক্তি ব্যবহার করে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়া শিখতে হবে।
অ্যান্টি-আটলাস পার্বত্য এলাকার দক্ষিণ পাশের মরু শহরটিতে হাজার বছর আগেও মানুষের বসবাস ছিল বলে মনে করা হয়। শহরটিতে পর্যটকদের বিচরণ দেখা যায় বছরের অধিকাংশ সময়। এর বোতলজাত খাদ্যপণ্য ‘আলনিফ কুমিন’ বিশ্বখ্যাত। এগুলো উদ্যানে উৎপাদিত কুমিন গাছের কাণ্ড ও বীজ থেকে বিশেষভাবে তৈরি। সূত্র : এপি।