রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লাভরভ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও বাংলাদেশের বন্ধুরা বিদেশি শক্তিকে মোকাবিলা করে নিজেদের জাতীয় স্বার্থে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি বজায় রেখেছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অক্টোবরে জ্বালানি সরবরাহ শুরু হবে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে রূপপুর প্রকল্পে সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে লাভরভ বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের পক্ষে রাশিয়ার অবস্থান রয়েছে।
জাকার্তায় আসিয়ান সম্মেলনে যোগদান শেষ করে লাভরভ সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। প্রথমে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত একান্ত বৈঠক করেন। এরপর দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের প্রধান নিয়ামক ২৪ মেগাওয়াট রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র। ১৩ বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পে ইউরোনিয়াম জ্বালানি সরবরাহের মাধ্যমে অক্টোবরে বাংলাদেশ পরমাণবিক যুগে প্রবেশ করবে। বাংলাদেশে নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মধ্যে সার্গেই লাভরভের সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বাইরে আর কারও সংযুক্তি ঠিক হবে না। বাইরের লোক কম থাকলেই ভালো। বাইরের সম্পৃক্ততা সীমিত করতে হবে। বাইরের হস্তক্ষেপ হিতে বিপরীত হতে পারে। আমরা দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনা করে সমস্যার সমাধানকে সমর্থন করি। প্রয়োজন হলে আমরা মিয়ানমারে আমাদের বন্ধুদের এ ব্যাপারে কাজ করার জন্য অনুরোধ করতে পারব।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লাভরভ বলেন, এই প্রথম আমি ঢাকায় এসেছি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ আমাদের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধু। আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি হলো বন্ধুত্ব ও সমতা। কোভিড-১৯ সত্ত্বেও আমরা রাজনৈতিক সংলাপ করেছি। আজ আমাদের আলোচনা আরও নিবিড় হয়েছে। আমাদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরই বাংলাদেশ আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশীদার। ২০২২ সালে আমাদের দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার। আমাদের মধ্যে রয়েছে ফ্লাগশিপ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ নির্ধারিত সময়েই অগ্রসর হচ্ছে। অক্টোবরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি বাংলাদেশে পৌঁছাবে। আমাদের আছে কিছু প্রতিশ্রুতিশীল গ্যাসক্ষেত্র, গ্যাসপ্রম যা করছে। বাংলাদেশে ২০টি কূপ রয়েছে। বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহের কাজও রয়েছে। আমরা সার সরবরাহের বিষয়ও আলোচনা করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসিয়ান স্পিরিট হলো ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি। আমরা লক্ষ্য করছি, যুক্তরাষ্ট্র ও সহযোগীরা তথাকথিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে এই অঞ্চলে চীনকে মোকাবিলা এবং ন্যাটোর কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে চায়। এটা আসিয়ানের স্পিরিটের পরিপন্থি। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগীরা আসিয়ানের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে অবহেলা করতে চায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, রোহিঙ্গা ইস্যু, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, রাশিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সুবিধা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, আমরা যুদ্ধ চাই না। আমরা সংলাপ ও আলোচনা করে সব সমস্যার সমাধান চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হলো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা এই অঞ্চলে কোনো প্রক্সি যুদ্ধ চাই না। আমরা চাই, শান্তিপূর্ণ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হোক।