যুক্তরাষ্ট্র সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গত ১০ এপ্রিল সোমবার দুপুরে ওয়াশিংটন ডিসির পররাষ্ট্র দপ্তরে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনী ব্লিংকেন বলেন, বাংলাদেশে যেন একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যেন এ অঞ্চল এবং সারা বিশ্বের জন্য একটি জোরালো উদাহরণ তৈরি করতে পারে।
বৈঠকে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্বের ব্যাপারে দুদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঐকমত্য প্রকাশ করেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠানো প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘জয় বাংলা’ দিয়ে লেখা শেষ করা বার্তার জন্য ধন্যবাদ জানান। এ সময় তিনি ওই উষ্ণ বার্তার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি চিঠি হস্তান্তর করেন। পরে মিডিয়ার উপস্থিতিতে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বিগত ৫০ বছরের দৃঢ় সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে আগামী ৫০ বছরের জন্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো জোরদার করার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ককে বিস্তৃত, গতিশীল ও বহুমুখী উল্লেখ করে ড. মোমেন এই সম্পর্ককে আরো উন্নত, বর্ধিত ও সুদৃঢ় করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে উভয় নেতা অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব জোরদার ও বহুমুখীকরণ, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান, জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রম অধিকার, নাগরিক স্বাধীনতা এবং নির্বাচনসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশে শ্রম খাত সংস্কারের চলমান এবং সম্পন্ন হওয়া কাজ সম্পর্কে ব্লিংকেনকে অবহিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে দুদেশের মধ্যে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের এই প্রচেষ্টাগুলোকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হবে। তিনি বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সদ্ব্যবহার করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতকে বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান। ব্লিংকেন বাংলাদেশে শ্রম পরিস্থিতির উন্নতির জন্য দুদেশের মধ্যে চলমান যৌথ কর্মকাণ্ডের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন মার্কিন সরকারকে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় উদার সহায়তা এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পুনরায় অনুরোধ জানান। ব্লিংকেন ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে উদারভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদানের জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পক্ষে রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান, দূতাবাসের উপপ্রধান ফেরদৌসী শাহরিয়ার, মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা) খন্দকার মাসুদুল আলম এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ব্লিংকেনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর ডেরেক শোলে, জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসনবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলিয়েটা ভালস নয়েস, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং শ্রম বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারা ম্যাকডোনাল্ড এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন।
এসএ/এমএএস/এমউএ/টিএ/পরিচয়