করোনার নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যা বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। অনেকটা মন্দা কাটিয়ে রমজান, পহেলা বৈশাখ এবং ঈদের কারণে চাঙা হয়ে উঠেছে অর্থনীতি। মার্চে রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে চলতি বছরেই জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন। ফলে মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও টাকা খরচ করছেন। এসব কারণে বাজারে বেড়েছে টাকার প্রবাহ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎসবের অর্থনীতির সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই।
তবে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হিসাব বলছে, চলতি মাসেই অর্থনীতিতে অতিরিক্ত আরও দেড় লাখ কোটি টাকা লেনদেন হবে। খাদ্যপণ্য, পোশাক, বিনোদন ও পরিবহণ খাতে এই বাড়তি অর্থ যোগ হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি চাকরিজীবী, দোকান কর্মচারী, পোশাক ও বস্ত্র খাতের শ্রমিকসহ বিভিন্ন ধরনের শ্রমজীবীদের বোনাসও এ কর্মকাণ্ডে যোগ হবে। এর প্রভাবে ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত শপিংমল পর্যন্ত বেড়েছে বেচাকেনা। কেনাকাটা বেড়েছে অনলাইনে। জমে উঠেছে ইফতার বাজার। গ্রামেও টাকার প্রবাহ বাড়ছে। সবকিছু মিলে উৎসবে চাঙা হয়ে উঠছে অর্থনীতি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন খাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ ঘন ঘন হাতবদল হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন বাড়ে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ে। তাদের মতে, অর্থনীতিতে চাহিদা বেড়েছে। এর সঙ্গে সরবরাহ ঠিক রাখতে না পারলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, করোনার কারণে ২ বছর বাজার স্থবির ছিল। এরপর শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এবার একসঙ্গে তিন উৎসব। অর্থনীতিতে এর একটি ইতিবাচক দিক রয়েছে। কারণ এতে দেশে বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। তারমতে, চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ঠিক রাখতে পারলে এই উৎসব পুরোটাই ইতিবাচক বলা যায়। মির্জ্জা আজিজ আরও বলেন, সরকারি চাকরিজীবী এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও বোনাস দিচ্ছে। বাজারে এই বাড়তি টাকা আসায় কিছু মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। এতে অভ্যন্তরীণ একটি চাহিদা সৃষ্টি হবে। তবে মূল্যস্ফীতিও কিছুটা বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের হিসাবে দেশের জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) আকার হচ্ছে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা। তবে উৎসবে কত টাকা লেনদেন হয়, তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। রোজা ও ঈদ উৎসবের অর্থনীতি নিয়ে এফবিসিসিআই’র সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির বর্তমান প্রেসিডেন্ট হেলাল উদ্দিন নিজস্ব একটি সমীক্ষা করেছেন। ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে-রোজা ও ঈদে অতিরিক্ত ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন যোগ হচ্ছে। সমীক্ষা মতে, পোশাকের বাজারে যোগ হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। নিত্যপণ্যের বাজারে বাড়তি যোগ হচ্ছে ২৭ হাজার কোটি টাকা। জাকাত ও ফিতরা বাবদ আসছে ৬৭ হাজার কোটি টাকা। পরিবহণ খাতে ৮০০ কোটি টাকা। ঈদকে কেন্দ্র করে ভ্রমণ ও বিনোদন বাবদ ব্যয় হয় ৪ হাজার ৫শ কোটি টাকা। এর বাইরে আরও কয়েকটি খাতের কর্মকাণ্ডে টাকার প্রবাহ বাড়বে। এরমধ্যে রয়েছে ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ৬০ লাখ দোকান কর্মচারী, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে ৭০ লাখ শ্রমিকের বোনাস। যা ঈদ অর্থনীতিতে আসছে। এছাড়াও রয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের টাকা। মার্চে ২০১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় ২২ হাজার ১১০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক ধারণা করছে এপ্রিলে তা আরও বাড়বে।
জানা গেছে-আলোচ্য তিন উৎসবের মধ্যে শুরুতেই রমজান। এই মাসে মানুষের পণ্য চাহিদা বাড়ে। বিশেষ করে ইফতারে ব্যবহার হয় এ ধরনের পণ্যগুলোর চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এর মধ্যে রয়েছে-ভোজ্যতেল, ছোলা, খেজুর, পেঁয়াজ, চিনি, ডাল, ডিম, ফলমূল এবং শাক-সবজিসহ অন্যান্য আইটেম। রমজানে সারা দেশে ইফতারকেন্দ্রিক কয়েক লাখ মানুষ মৌসুমি ব্যবসা করেন। করোনার কারণে গত ২ বছর এ প্রবণতা কম ছিল। কিন্তু এবার তা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
দ্বিতীয় উৎসবের মধ্যে রয়েছে পহেলা বৈশাখ। বাঙালির সর্বজনীন উৎসব এটি। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে এ একটি দিনে সবাই যেন বাঙালি হয়ে যান। বৈশাখের অর্থনীতির সুনির্দিষ্ট আকার নিয়ে এখনো প্রাতিষ্ঠানিক কোনো গবেষণা হয়নি। তবে সূত্রের হিসাবে লেনদেনের সম্ভাব্য পরিমাণ হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। উৎসবের জন্য সরকার এ বছরও বোনাস দিয়েছে। করোনায় ২ বছর বৈশাখের উৎসব সেভাবে পালন হয়নি। কিন্তু রমজানের কারণে গত বছরের মতো এবারও বৈশাখের মূল উৎসব পান্তা-ইলিশসহ দিনের খাওয়া বন্ধ থাকবে। তবে মঙ্গল শোভাযাত্রা, পোশাকের বাজারসহ অন্যান্য কমর্কাণ্ড চলবে। ফলে ইতোমধ্যে বৈশাখের হাওয়া লেগেছে অর্থনীতিতে। বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক, রকমারি বাঙালি খাবার, কার্ড ও মোবাইলে শুভেচ্ছা বিতরণ, মেলা এবং হালখাতার মধ্য দিয়ে শেষ হবে উৎসব। খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলো বৈশাখে বিশেষ অফার দিচ্ছে। ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট কার্ডে রয়েছে আকর্ষণীয় অফার। ফ্যাশন হাউজগুলোতে বাহারি রঙ ও ডিজাইনের বাঙালি পোশাকের সমারোহ। নতুন পোশাক কিনতে হাউজগুলোতে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে নামিদামি শপিংমল পর্যন্ত সবখানেই বৈশাখের ছাপ পড়েছে। ক্রেতা আকর্ষণে বিভিন্ন কোম্পানি বিশেষ মূল্য ছাড় দিয়েছে। গত কয়েক বছরে অনলাইনে কেনাকাটায় গ্রাহকের আগ্রহ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এ উৎসবের মূল আকর্ষণ ইলিশ। বর্তমানে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও বিভিন্ন হিমঘরে (কোল্ড স্টোরেজ) মজুত করা ইলিশ বাজারজাত শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। পিছিয়ে নেই নিত্যপণ্য, ফুল, মৃৎশিল্প এবং গহনার ব্যবসায়ীরা। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই বৈশাখ ঘিরে জমজমাট। বাংলা নববর্ষ বরণ করতে প্রস্তুতি। গ্রামগঞ্জে চলছে অসংখ্য মেলার আয়োজন। শহরের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে বৈশাখি তাঁত মেলা। এসব কর্মকাণ্ড ঘিরে অর্থনীতির লেনদেন বাড়ছে কয়েকগুণ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশাখে বেশি কেনাকাটা হয় পোশাক। বছরে যেসব কেনাকাটা হয় তার ২০ শতাংশই বৈশাখে। দুই ঈদে মিলে ৬০ শতাংশ। বাকিটা সারা বছর। শাড়ি, পাঞ্জাবি এবং ফতুয়া বেশি বিক্রি হয়। এশিয়ার বৃহত্তম মার্কেট যমুনা ফিউচার পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, বিপণিবিতানগুলোতে অভিজাত ও মধ্যম আয়ের ক্রেতাদের জন্য সব ধরনের বৈশাখি সাজ ও পোশাক কিনতে ব্যাপক ভিড়। ব্যস্ত নামিদামি ব্র্যান্ডের শোরুমগুলো। বিশেষ করে মেট্রো ফ্যাশন, আড়ং, অঞ্জনস, দেশি দশ, নবরূপা, জেন্টেলপার্ক, ইনফিনিটি, ক্যাটসআইসহ দেশের সব শীর্র্ষ ব্র্যান্ডগুলো বৈশাখি পোশাকের পসরা সাজিয়েছে। বিভিন্ন ধরনের পেশাকে ৫ থেকে ৫০ শতাংশ মূল্য ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রায় প্রতিটি দোকানে ঘুড়ি, মুখোশ ও লাল-নীল বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। এসব শোরুমে ক্রেতারা তাদের পছন্দসই পোশাক কিনতে ভিড় করছেন। যমুনা ফিউচার পার্কে বেচাকেনায় আমেজ চলছে। মেয়েদের জন্য রং-বেরংয়ের থ্রি-পিস, কুর্তি, শাড়ি ও ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবি, ফতুয়া বেশি বিক্রি হয়। আর শিশুদের জন্যও রয়েছে দারুণ সংগ্রহ। আর গতবারের তুলনায় এবার পোশাকের দাম বেশি হবে না। সবকিছু মিলে বৈশাখকে ঘিরে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নতুন গতি এসেছে। বৈশাখের পরেই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদে স্বাভাবিকভাবেই টাকার প্রবাহ বাড়ে। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বোনাস, ব্যবসার টাকা, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ এবং জাকাত-ফেতরা মিলিয়ে অর্থনীতিতে নতুন করে দেড় লাখ কোটি টাকা যোগ হয়। এর একটি অংশ ইতোমধ্যে গ্রামে চলে গেছে। ঈদ ও রোজার বাড়তি খরচ মেটাতে কৃষকের ঘরে মজুত ধান বা অন্যান্য ফসলের একটি অংশ বিক্রি শুরু হয়েছে। তরমুজের মতো মৌসুমি ফলের ব্যবসাও জমে উঠেছে। এছাড়াও অর্থবছর শেষ হয়ে আসায় সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ খরচ করার ধুম পড়েছে। ফলে সবকিছু মিলে টাকার স্রোত এবার গ্রামের দিকে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ টাকার বড় অংশই যাচ্ছে ভোগ-বিলাসে। আর কিছু অংশ যাচ্ছে গ্রামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্পভিত্তিক উৎপাদন খাতে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. এমকে মুজেরী সোমবার যুগান্তরকে বলেন, তিনটি উৎসব তিন ধরনের। এর মধ্যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। এ রোজার ঈদে টাকার প্রবাহ সবচেয়ে বেশি বাড়ে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই টাকা পোশাক, ভোগ্যপণ্য, শৌখিনতা ও ভ্রমণসহ বিনোদনমুখী খাতে বেশি হচ্ছে। কাজেই এটা একটা বড় ভূমিকা রাখে অর্থনীতিতে। তিনি আরও বলেন, উৎসব অর্থনীতির আকার, ধরন ও ব্যাপ্তি আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। মানুষ এই উৎসব ঘিরে প্রচুর পরিমাণ অর্থ খরচ করেন। এতে উৎপাদনকারী, আমদানিকারক, ব্যবসায়ী প্রত্যেকে কিছু না কিছু লাভবান হচ্ছেন। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা রয়েছে। বাড়তি টাকার প্রবাহের কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। এতে কিছু মানুষের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
জানা গেছে-অতিরিক্ত চাহিদা পূরণে এবার বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। এগুলো এখন খুচরা বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে। ঈদুল ফিতরে বেশি অর্থ ব্যয় হয় নতুন পোশাক ক্রয়ে। মার্কেটগুলোতে সব বয়সি মানুষের চাহিদা অনুযায়ী পোশাক বেচাকেনা হচ্ছে। এ সময় অভ্যন্তরীণ পোশাকে চাহিদা বাড়ে ব্যাপক হারে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন সোমবার যুগান্তরকে বলেন, এবার ব্যবসা-বাণিজ্য তেমন একটা ভালো নয়। কারণ খাবারের চাহিদা মিটিয়ে মানুষের হাতে ওই পরিমাণ টাকা থাকছে না। এ কারণে ফুটপাতে ভিড় থাকলেও বড় মার্কেটগুলো এখনো ওইভাবে জমে উঠেনি। তবে আমাদের ধারণা, করোনার পর এবার ব্যবসা জমে উঠার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড হিসাব কিছুটা পালটে দিয়েছে। তবে আশা করছি, যে কদিন আছে, তাতে বেচাকেনা আরও বাড়বে।
এদিকে ঈদ উৎসব পালন করতে রোজার শেষ দিকে শহরের অধিকাংশ মানুষ যান গ্রামের বাড়িতে। এ সময় অতিমাত্রায় বেড়ে যায় পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহণ ও নৌযান চলাচল। এতেও টাকার প্রবাহ বাড়ে। অন্যদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষ বিনোদনের জন্য দেশের ভেতরে বিভিন্ন স্থান ও বিদেশে বেড়াতে যান অনেকে। ফলে পর্যটন খাতেও যোগ হয় বাড়তি টাকার প্রবাহ। সার্বিকভাবে এ কর্মকাণ্ডের কারণে সাধারণত অন্য মাসের তুলনায় এই মাসে অতিরিক্ত অর্থের প্রভাব বেড়ে যায়।
অভ্যন্তরীণ পোশাকের বাজার : ঈদ অর্থনীতির একটি বড় চালিকা শক্তি হচ্ছে পোশাকের বাজার। এ সময় পোশাকের বেচাকেনা দোকানগুলোতে তিন থেকে চারগুণ বেড়ে যায়। অভ্যন্তরীণ পোশাকের সবচেয়ে বড় জোগান আসছে পুরান ঢাকার উর্দুরোডের অভ্যন্তরীণ পোশাক মার্কেট থেকে। ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটসহ দেশের বিভাগ ও মফস্বল মার্কেটগুলোতে দেশি পোশাক সরবরাহ হচ্ছে এই মার্কেট থেকে। এখানে রয়েছে সাড়ে চারশ পোশাকের দোকান। চোখের দেখায় দোকানগুলোর আয়তন খুবই ছোট হলেও রোজা ও ঈদ উপলক্ষ্যে প্রতিটি দোকানে কোটি টাকার উপরে বিনিয়োগ রয়েছে। দেশের বুটিক ও ফ্যাশন হাউজগুলো বেশ ব্যস্ত। ঈদের বাজার ধরতে অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অতিরিক্ত পণ্য তৈরি করেছে।
ভোগ্যপণ্যের বাজার : ঈদে সব ধরনের নিত্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-ভোজ্যতেল, মাংস, চিনি, ডাল, সেমাই এবং পেঁয়াজ। ফলে এসব পণ্যের আমদানিও বাড়ে। রোজা ও ঈদে ভোজ্যতেলের চাহিদা হচ্ছে প্রায় তিন লাখ টন, চিনি ২ লাখ টন থেকে পৌনে তিন লাখ টন, ডাল ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন, ছোলা ৫০-৬০ হাজার টন, খেজুর ১৫ হাজার টন, পেঁয়াজ ৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ টন এবং রসুনের চাহিদা প্রায় ৮০ হাজার টন। এসব পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের নিজস্ব টাকার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকার জোগান দেওয়া হয়।
বোনাস : এ বছর ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী অষ্টম বেতন কাঠামোর আলোকে ঈদ বোনাস পাচ্ছেন। এরমধ্যে রয়েছে তিন বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এছাড়া বেসরকারি অফিসে, প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজস্ব কাঠামোতে বোনাস দিচ্ছে। এছাড়া পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রায় ৭০ লাখ কর্মীর বোনাসও যোগ হচ্ছে। যা পুরোটাই যোগ হচ্ছে ঈদ অর্থনীতিতে।
দোকান কর্মচারী বোনাস : ঈদ উৎসব অর্থনীতিতে সারা দেশের দোকান কর্মচারীদের বোনাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হিসাবে দেশে ২০ লাখ দোকান, শপিংমল, বাণিজ্য বিতান রয়েছে। গড়ে একটি দোকানে ৩ জন করে ৬০ লাখ জনবল কাজ করছে। নিম্নে একজন কর্মীকে ৬ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বোনাস দেওয়া হয়। ওই হিসাবে গড়ে বোনাস ৮ হাজার টাকা ধরে ৪ হাজার ৮শ কোটি টাকা বোনাস পাচ্ছেন এ খাতের শ্রমিকরা। যা পুরোটাই ঈদ উৎসব অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে। সূত্র : যুগান্তর