ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে উদ্বোধন করা হয়েছে ভারতের নতুন সংসদ ভবনের। সদ্য উদ্বোধন হওয়া নয়াদিল্লির ওই সংসদ ভবনে স্থাপিত একটি ম্যুরাল নিয়ে নেপালে বড় ধরনের বিতর্ক শুরু হয়েছে।
একইসঙ্গে এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তানও। শুক্রবার (২ জুন) পৃথক দুই প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এবং ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহে উদ্বোধন করা হয়েছে ভারতের নতুন সংসদ ভবনের। গত কয়েক বছর ধরে সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের মাধ্যমে এই সংসদ ভবন তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু নতুন এই ভবনের উদ্বোধন নিয়ে শুরু থেকেই ছিল বিতর্ক। দ্য হিন্দু বলছে, ভারতের নতুন সংসদ ভবনে স্থাপিত একটি ম্যুরালটিকে অখণ্ড ভারত বা অবিভক্ত ভারতের মানচিত্র হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। আর এটিই দল-মত নির্বিশেষে নেপালি রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বিতর্কিত ওই ম্যুরালে গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনি দেখা যাচ্ছে, যা এই অঞ্চলের ওপর ভারতের দাবির ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে নেপাল লুম্বিনিকে নেপালের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।
ভারতের এই কাণ্ডে দল-মতের বাইরে গিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেপালের রাজনৈতিক নেতারা। নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাই এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারতের নতুন সংসদ ভবনে ‘অখণ্ড ভারত’-এর বিতর্কিত ম্যুরাল নেপালসহ প্রতিবেশী দেশ ও অঞ্চলে অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকারক কূটনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। ভারতের অধিকাংশ নিকটবর্তী প্রতিবেশীদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যে আস্থার ঘাটতি রয়েছে, এই ঘটনা সেটি আরও বাড়িয়ে দেওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি করেছে।’
দ্য হিন্দু বলছে, গত ২৮ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করেন তখনই এই ম্যুরালটি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। ভারতের সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী ম্যুরালটিকে ‘অখণ্ড ভারত’ হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন।নেপালের প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ড তার ভারত সফর শুরু করার এবং বৃহস্পতিবার মোদির সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করার সময়ও নেপালি মিডিয়াতে এই বিষয়টি বেশ জোরালো ভাবেই উঠে আসে।
এদিকে এই ইস্যুটি ভারত ও নেপালের মধ্যে আবারও কালাপানি বিরোধের স্মৃতিকে উস্কে দিয়েছে। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ভারত একটি রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করেছিল, যেটাতে কালাপানি অঞ্চলকে উত্তরাখণ্ডের অংশ হিসাবে দেখানো হয়। এর জবাবে নেপাল সেসময় পাল্টা মানচিত্র প্রকাশ করে জানিয়ে দেয়, কালাপানি অঞ্চল তারা নিয়ন্ত্রণ করে।
নরেন্দ্র মোদি এবং প্রচন্ড অবশ্য বলেছেন, বন্ধুত্বের মনোভাব এবং প্রতিষ্ঠিত কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যমান সকল বিরোধের সমাধান করা হবে। দ্য ডন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাজধানী ইসলামাবাদে সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলার সময় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মমতাজ জাহরা বালুচ নয়াদিল্লিতে নতুন সংসদ ভবনে বিতর্কিত ম্যুরাল স্থাপন করায় হতাশা প্রকাশ করেছেন।
ভারতের নতুন সংসদ ভবনে স্থাপিত ওই ম্যুরালে তথাকথিত ‘প্রাচীন ভারত’কে চিত্রিত করা হয়েছে, যার মধ্যে এমন সব এলাকা রয়েছে যা এখন পাকিস্তান এবং অন্যান্য দেশের অংশ। মমতাজ জাহরা বালুচ বলেছেন, ‘ম্যুরালটিকে ‘অখণ্ড ভারত’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ভারতের একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসহ বিজেপির রাজনীতিবিদদের দেওয়া বিবৃতিতে আমরা ব্যাপকভাবে আতঙ্কিত হয়েছি।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেছেন, অখণ্ড ভারতের অযৌক্তিক দাবিটি মূলত সংশোধনবাদী এবং সম্প্রসারণবাদী মানসিকতার একটি প্রকাশ যা শুধুমাত্র ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো নয় বরং তার নিজস্ব ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পরিচয় ও সংস্কৃতিকে বশীভূত করতে চায়।
মমতাজ জাহরা বালুচ বলেন, ‘এটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় যে, অখণ্ড ভারতের ধারণাটি ভারতে শাসক ব্যবস্থার অন্তর্গত ব্যক্তিদের দিয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে প্রচার করা হচ্ছে। ভারতীয় রাজনীতিবিদদের শুধুমাত্র তাদের বিভক্তিমূলক এবং সংকীর্ণ রাজনৈতিক এজেন্ডাকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য অন্য দেশের বিরুদ্ধে বক্তৃতা না করার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।’
তিনি বলেন, একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে আধিপত্যবাদী এবং সম্প্রসারণবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে লালন করার পরিবর্তে ভারতের উচিত তার প্রতিবেশীদের সাথে বিরোধ সমাধান করা এবং তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করা।
সুমি/পরিচয়