বিশ্ব মঞ্চে দিন দিন কমছে বিশ্ব শাসন করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব। দেশটির বয়োজ্যষ্ঠ গোষ্ঠীর ৪৭ শতাংশই এটি মনে করছেন। পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক এক জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
তবে সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় ৩২ শতাংশ মনে করছেন বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব আগের মতোই আছে। ১৯ শতাংশ মনে করছেন তাদের ক্ষমতায়ন কমেনি বরং বেড়েছে।
জরিপ করা হয় ১৯টি দেশের মধ্যে। যেখানে শুধু যুক্তরাষ্ট্রই ভিন্নপথে হেঁটেছে। যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নিজের দেশের প্রভাব বিশ্বে দুর্বল বলে মনে করছেন। সুইডেন, নেদারল্যান্ডস এবং অস্ট্রেলিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠরা মনে করছেন তাদের দেশের বৈশ্বিক প্রভাব প্রায় একই রয়ে গেছে। ভিন্নপথে আছে ইসরাইলও। যেখানে দেশটির বেশির ভাগ প্রাপ্তবয়স্করা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের দেশের প্রভাব আরও শক্তিশালী হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই মতামতের সঙ্গে যে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সম্পর্ক আছে তাও উঠে এসেছে সমীক্ষায়। ৬৩ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান এবং রিপাবলিকানপন্থি স্বতন্ত্ররা বলছেন, বৈশ্বিক মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব দুর্বল হচ্ছে। একই চিন্তা লালন করা ডেমোক্রেটপন্থির সংখ্যা মাত্র ৩৭ শতাংশ। শুধু যে যুক্তরাষ্ট্রেই এমন তা নয়, বরং সব দেশের লোকরাই রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে খানিকটা প্রভাবিত। জরিপ করা প্রায় প্রতিটি দেশে, যারা ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না তারা সমর্থকদের চেয়ে বেশি বিশ্বাস করে যে, বিশ্বে তাদের দেশের প্রভাব দুর্বল হচ্ছে।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৩টি দেশে, যারা ক্ষমতাসীন দলকে সমর্থন করে না তাদের দেশের প্রভাব দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা সমর্থকদের তুলনায় অন্তত ১০ শতাংশ বেশি। পার্থক্যটি গ্রিসে সবচেয়ে বেশি। যেখানে প্রায় অর্ধেক (৪৭%) যারা শাসক দল, নিউ ডেমোক্রেসিকে সমর্থন করে না। তারা মনে করছে বিশ্বে গ্রিসের প্রভাব দুর্বল হয়ে পড়ছে। যেখানে নিউ ডেমোক্রেসি সমর্থকদের মধ্যে শুধু ৬% একই ধারণা লালন করছে। পার্থক্য সংখ্যার ব্যবধানে ৪১। গ্রিস ছাড়াও হাঙ্গেরি, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে শাসক দলের সমর্থক এবং অসমর্থকদের সংখ্যায় প্রায় ২০ বা তার বেশি পার্থক্য রয়েছে।
যেসব দেশের নাগরিকরা বিশ্বাস করেন তাদের দেশের দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে-প্রভাব হ্রাস পাওয়ার ঘটনায় তাদের উত্তরই নেতিবাচক। জরিপকৃত প্রায় অর্ধেক দেশের উত্তরদাতারাই মনে করছেন, তাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শক্তিশালী দ্বন্দ্ব আছে। এবং তার মনে করছে বিশ্বে তাদের দেশের প্রভাব হ্রাস পেয়েছে। যেমন যুক্তরাজ্য। যারা দলীয় গোষ্ঠীর মধ্যে গুরুতর সংঘর্ষ দেখছেন। তাদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ বলেছেন যে, তাদের দেশ হেরে যাচ্ছে। যারা রাজনৈতিক পার্থক্য দেখেন না তাদের মাত্র ৩০% শতাংশ প্রভাব কমার ধারণায় একমত। ইসরাইল এখানেও এর বিপরীত অবস্থান ধরে রেখেছে। যারা শক্তিশালী দলীয় দ্বন্দ্ব দেখেন তারাও মনে করছেন তাদের দেশ শক্তিশালী প্রভাব রাখছে। যে দেশের মানুষ তাদের গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট নয় তারাও বলতে পারে তাদের দেশের বৈশ্বিক প্রভাব হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া দেশগুলো তাদের শিশুদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরও সমীক্ষায় উঠে আসে। প্রতিটি দেশের নাগরিকরাই মনে করছেন তাদের সন্তানদের আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটবে।