ঢাকায় সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেটের কাছে বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে নানা উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। গতকাল দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এক বৈঠকে তারা এ উদ্বেগের কথা জানান। বৈঠকে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গুম, বাকস্বাধীনতা, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, নারী নির্যাতন নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে প্রায় ১৫ জনের বেশি মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি অংশ নেন। প্রত্যেকে দুই থেকে তিন মিনিট করে কথা বলেন। বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমি সেখানে পরিবেশগত ন্যায়বিচার নিয়ে কথা বলেছি। মানবাধিকারকর্মী, পরিবেশবিদ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে নানা উদ্বেগের বিষয়ে কথা হয়। মূল কথা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কী কী অর্জন এবং চ্যালেঞ্জ রয়েছে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নানা অসুবিধায় পড়তে হয়।
পরিবেশগত আইনগুলো কেমন, সেগুলোর প্রয়োগ আছে কিনা, এখন যে উন্নয়নের ধারা সেগুলোর সঙ্গে পরিবেশের সামঞ্জস্য আছে কিনা, গণতন্ত্র, নির্বাচন, নারীর প্রতি সহিংসতা, বিচারহীনতা, আদিবাসী, সংখ্যালঘু, গুম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, এনজিওদের আইন নিয়ে কথা হয়েছে।
হাইকমিশনার মিশেল এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেছেন, কারও কাছে এ সকল চ্যালেঞ্জ এবং উদ্বেগ সমাধানে কোনো মন্ত্র নেই।
এগুলো একটা প্রক্রিয়া। একদিনে কোনো একটি কথা বলে তো শেষ করা যাবে না। এটা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শেষ করতে হবে। এই সমস্যাগুলো বিশ্বব্যাপী নতুন নতুন ধারায় তৈরি হয়। জাতিসংঘ দূতের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, দেশের মানবাধিকারের বিষয় নিয়ে আমাদের কাছ থেকে শুনতে চেয়েছেন। আমার আলোচনার বিষয় ছিল সুশাসন। শুধু নির্বাচন হলে তো হয় না।
নির্বাচনের পরে আমরা যাকে নির্বাচিত করেছি আমাদের কাছে যদি জবাবদিহি না থাকে, পরিকল্পনা করার সময় কোনো আলোচনা না করে আমাদের কথা না শোনে তাহলে সেটা তো গণতন্ত্র না। নির্বাচনের দিন শুধু সুষ্ঠু নির্বাচন করা সেটা আমার কাছে যথেষ্ট না। গুম নিয়ে কাজ করা ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আমি একাই ছিলাম। আমাদের চাওয়া- গুম নিয়ে সঠিক তদন্ত কমিটি যেন সরকার গঠন করে।
আমাদের গুম হওয়া পরিবারগুলোকে যেন তারা জানায়, স্বজনরা কোথায় আছেন। তাদের বর্তমান অবস্থা কি? এটাই আমাদের চাওয়া ছিল। তিনি বলেন, জাতিসংঘ নিজেদের মতো করে গুম-খুনের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছে। আমাদেরকে বলা হয়েছে এ বিষয়গুলো যেন প্রকাশ না করি। এতে তাদের কাজ করতে হয়তো সমস্যা হয়।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, তারা আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি সেখানে আদিবাসী ইস্যুতে কথা বলেছি। শুধু বাংলাদেশে নয় সারা পৃথিবীতেই যাদেরকে আমরা আদিবাসী বলি তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্যতম শিকার হয়। তাদের ভূমি কেড়ে নেয়া হয়। তাদের আত্মপরিচয়ের অস্বীকৃতি জানানো হয়। এখন চলছে বাংলাদেশে আদিবাসী বলা যাবে না। এবং তাদের ভাষা-সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের নানা রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়। যেটা জাতিসংঘের হাইকমিশন অফিসের নজর দেয়া উচিত।
আলোচনায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, মানবাধিকার সংগঠন অধিকার’র সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র, চাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা দেবাশীষ রায়সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সূএ : মানবজমিন
পরিচয়/এমউএ